Dhaka ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা ইসিকে যেসব পরামর্শ দিলেন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:১৮:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২
  • 70

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা।

আজ (রোববার) বেলা ১১টায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক ইসি সচিব ও সাবেক অতিরিক্ত সচিবদের সাথে বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন তারা। বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বেশকিছু পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিইসি বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ, ড. এ টি এম শামসুল হুদা ও কে এম নূরুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক, জেসমিন টুলি ও মো. আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন।

সাবেক সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা শতভাগ স্বাধীন বলি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের মধ্য দিয়েই অনেক কিছু করতে হয়। ভোট সুষ্ঠু করতে নির্বাচনে প্রশাসন বা সেনাবাহিনীর দরকার নেই। এটা কোনো দেশে হয় না। তাছাড়া তারা আসলে কোনো কাজেও আসে না। নির্বাচনের ৭৫ শতাংশ টাকা তাদের পেছনে চলে যায়।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন।’

সাবেক কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ দেখতে হবে। সরকারকে খুবই কঠোর হতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়ে ইসির সম্পৃক্ত হওয়া চলবে না। এটা সরকারি দলের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন করলেও মানুষ মনে করেছে সুষ্ঠু হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।’

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটের আগে স্থানীয় প্রশাসন রদবদল আনার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এতে নির্বাচনে ভালো প্রভাব পড়বে। নির্বাচনকালীন সময়ে যেকোনো বিষয়ে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ ও প্রার্থীদের আইন মানতে বাধ্য করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রত্যন্ত এলাকায় ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা আগে থেকেই ঠিক রাখার কথা বলছেন তারা। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচনকালীন সময়ে ইসির অধীনে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে আসা ও প্রয়োজনে সরকারের সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক আমলারা।

ইভিএমে ভোটের ক্ষেত্রে গোপন কক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে পেশিশক্তি ও অবৈধ অর্থের লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে এসব বিষয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এর আগে নির্বাচন কমিশন ১৩ ও ২২শে মার্চ এবং ৬ ও ১৮ই এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।

কমিশন তাদের মতামত আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে বিচার বিশ্লেষণ করে নিজেদের অবস্থানও জানিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ সাজাতে সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে আজ বৈঠকে বসেছে নতুন দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচন কমিশন। এরপর তারা বসবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা ইসিকে যেসব পরামর্শ দিলেন

Update Time : ০৬:১৮:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা।

আজ (রোববার) বেলা ১১টায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক ইসি সচিব ও সাবেক অতিরিক্ত সচিবদের সাথে বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন তারা। বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বেশকিছু পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিইসি বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ, ড. এ টি এম শামসুল হুদা ও কে এম নূরুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক, জেসমিন টুলি ও মো. আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন।

সাবেক সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা শতভাগ স্বাধীন বলি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের মধ্য দিয়েই অনেক কিছু করতে হয়। ভোট সুষ্ঠু করতে নির্বাচনে প্রশাসন বা সেনাবাহিনীর দরকার নেই। এটা কোনো দেশে হয় না। তাছাড়া তারা আসলে কোনো কাজেও আসে না। নির্বাচনের ৭৫ শতাংশ টাকা তাদের পেছনে চলে যায়।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন।’

সাবেক কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ দেখতে হবে। সরকারকে খুবই কঠোর হতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়ে ইসির সম্পৃক্ত হওয়া চলবে না। এটা সরকারি দলের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন করলেও মানুষ মনে করেছে সুষ্ঠু হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।’

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটের আগে স্থানীয় প্রশাসন রদবদল আনার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এতে নির্বাচনে ভালো প্রভাব পড়বে। নির্বাচনকালীন সময়ে যেকোনো বিষয়ে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ ও প্রার্থীদের আইন মানতে বাধ্য করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রত্যন্ত এলাকায় ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা আগে থেকেই ঠিক রাখার কথা বলছেন তারা। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচনকালীন সময়ে ইসির অধীনে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে আসা ও প্রয়োজনে সরকারের সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক আমলারা।

ইভিএমে ভোটের ক্ষেত্রে গোপন কক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে পেশিশক্তি ও অবৈধ অর্থের লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে এসব বিষয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এর আগে নির্বাচন কমিশন ১৩ ও ২২শে মার্চ এবং ৬ ও ১৮ই এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।

কমিশন তাদের মতামত আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে বিচার বিশ্লেষণ করে নিজেদের অবস্থানও জানিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ সাজাতে সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে আজ বৈঠকে বসেছে নতুন দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচন কমিশন। এরপর তারা বসবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে।