সানগ্লাস বা রোদচশমা কেবল ফ্যাশনের জন্যই এমন ধারণা আমাদের অনেকেরই। কিন্তু সানগ্লাস ফ্যাশন না, মূলত রোদ থেকে চোখকে নিরাপদ রাখাতেই এটি ব্যবহার করা হয়। সূর্যের ক্ষতিকর অতি-বেগুনি রশ্মি চোখের ভেতরের অংশের ক্ষতি করে। সেজন্য চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করা জরুরি।

অনেক সময় ধরে রোদে থাকা উচিত নয়। বেশি সময় যদি আপনি রোদে থাকেন তাহলে চোখে জ্বালাপোড়া, গ্লুকোমা, ছানিপড়া, ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। তাই দীর্ঘ সময় রোদে থাকা যাবে না। আর যদি থাকতেই হয় তবে অব্যশই সানগ্লাস পড়তে হবে।

সানগ্লাসের প্রচলন:

আমাদের পথচলাকে মসৃন করতেই আর্বিভাব হয়েছে সানগ্লাস বা রোদচশমা কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ রূপ নিয়েছে ফ্যাশনে। কবে থেকে সানগ্লাসের প্রচলন শুরু হয়েছে তার সঠিক দিন তারিখ জানা না গেলেও ধারণা করা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অথবা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এর প্রচলন ঘটে। তবে চশমার প্রচলন আরো আগে শুরু হয়।

মূলত রোদের তাপ থেকে চোখকে রক্ষার জন্যই সানগ্লাসের উৎপত্তি। প্রাথমিক অবস্থায় চশমা ব্যবহার করা হলেও তা থেকে তেমন কোনো উপকার না আসায় রোদচশমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে শুরুর দিকে চশমা আকৃতির ফ্রেম তৈরি করে তাতে মোটা কাগজ গ্লাস আকৃতির বানিয়ে চিকন করে লম্বাটে ফোকড় রাখা হতো দেখার জন্য। কিন্তু সেটাও পরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ১৯০০ সালের দিকে প্রথম আবিষ্কৃত হয় রঙিন গ্লাসের। রঙিন সানগ্লাস তখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তরুণ প্রজন্মের কাছে। ১৯৩৬ সালের দিকে সানগ্লাস ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। এডউইন এইচ ল্যান্স সানগ্লাসের প্রচলন করেন।

সানগ্লাস ব্যবহারে সতর্কতা:

রোদে বা ধুলা-বালির হাত থেকে রক্ষা পাওয়াসহ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সানগ্লাস হলো একটি ফ্যাশন। কিন্তু এই সানগ্লাস কেনার আগেই কয়েকটা জিনিস একটু খেয়াল রাখা দরকার। কারণ সানগ্লাস ভুলভাল বলে প্রভাব পড়তে পারে চোখে। আর আগে থেকেই যদি আপনার চোখে চশমা থাকে, তাহলেও কিন্তু আপনার চশমা কেনা নিয়ে সাবধান হওয়া উচিত।

১. ব্র্যান্ড:

মাথায় রাখবেন, সস্তায় স্টাইল বাড়াতে রোদ চশমা কেনাটা কাজের কথা নয়। চশমার নানা রকম ধরণ আছে। দাম দিয়ে চশমা কেনাটাই উচিত। ব্রান্ডেড চশমা কিনার পর যদি সেটায় আপনার চোখে অসুবিধা হয়, তাহলে বদলেও নিতে পারবেন সহজে।

২. শীতকালেও দরকার:

শুধু গরম কালে রোদের তীব্রতা এড়াতেই রোদ চশমা পরতে হয়, এই ধারণাটি ভুল। শীতকালেও রোদ চশমা দরকার। কারণ, সূর্যের আলো আটকানোর পাশপাশি, বাতাসে ভাসমান নানা ধূলিকনা থেকেও চশমা রক্ষা করে আপনার চোখকে।

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ:

চশমা নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুব দরকার। তাই আগে চিকিৎসকে জিজ্ঞাসা করে নিন কি ধরনের চশমা আপনার চোখের জন্য ভাল। তারপরেই কিনুন।

৪. সঠিক পাওয়ার:

আপনার চোখে পাওয়ার থাকলে, সেই নির্দিষ্ট পাওয়ারের রোদ চশমা পরা দরকার। ভুলেও দোকান থেকে কিনে চোখে লাগিয়ে ঘুরবেন না। এতে ক্ষতি হবে আপনার চোখের।

৫.  অনলাইন চশমা কেনা:

অনলাইনে রোদ চশমা কিনতেই পারেন। কিন্তু কেনার আগে মনে রাখবেন চোখে দেওয়ার আগে একবার চেনা দোকান বা চিকিৎসককে দেখিয়ে নেয়া খুব দরকার। সেটি আপনার চোখের জন্য উপযুক্ত কিনা, সেটা জেনে নেয়াই বুদ্ধি মানের কাজ।

সানগ্লাস ব্যবহার কররা উপকারিতা:

রোদেলা দিনের প্রতি মুহূর্তে সানগ্লাস চোখকে সুরক্ষা করে। নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে সকলের জন্যই এটি একটি দরকারী অনুষঙ্গ।

১.  চোখে প্রচুর আলো পড়লে ‘আইরিস’ ছোট হওয়া চোখ কুচকে যেতে পারে। এতে অক্ষিপটের ক্ষতি হয়। ভালো মানের রোদচশমা ব্যবহার আলোর পরিমাণ ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

২. দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে চোখের পাতা, চোখের চারপাশ, ত্বকে জ্বালাভাব, কালি পড়া, ভাঁজ পড়া সমস্যার দেখা দেয়। তাই সানগ্লাস ব্যবহার জরুরি।

৩.  সূর্যের ক্ষতিকর অতি-বেগুনি রশ্মি কর্নিয়া ও অক্ষিপটের ক্ষতি করে। তাই চোখকে রক্ষা করতে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। সানগ্লাস চোখকে রশ্মি থেকে পুরোপুরি রক্ষা করে।

৪.  দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে বয়স বাড়ার সঙ্গে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া শঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সানগ্লাস ব্যবহার জরুরি।

৫.  বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থায় বাতাসের ধূলাবালি এবং পোকা-মাকড় আমাদের চোখে এসে পড়তে পারে। আর এসব ধূলাবালি ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে সানগ্লাস।

৬. লোহা, নাইলন, প্লাস্টিক, টাইটেনিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদানে চশমা তৈরি করা হয়। এসব উপাদানের রয়েছে নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা। তাই নিজের প্রয়োজনীয় অনুযায়ী চশমা কিনুন।

কীভাবে চশমা নির্বাচন করবেন:

সব চেহারার সঙ্গে সব ধরণের চশমা মানায় না। তাই সানগ্লাস সচেতন মানুষের চাহিদা এবং প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করেই বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করে নানা স্টাইলের সানগ্লাস।

সেজন্য চশমা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে যা যা মনে রাখতে হবে-

১. রং, আকার ও আকৃতি।

২. যাদের চেহারা ছোট তারা চিকন আকৃতি বেছে নিন। আর বড় চেহারার জন্য বড় গ্লাস মানানসই।

৩. যাদের গায়ের রঙ উজ্জ্বল তারা বেগুনি, সাদা, গোলাপি, লাল রংয়ের গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।

৪.  যাদের ত্বক গাঢ় তারা কালো, কফি, বাদামি রঙের গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।

৫.  চুলের স্টাইলের ওপর গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।

৬. ঘরে প্রবেশের আগে অবশ্যই সানগ্লাস খুলে রাখুন।

৭. অব্যশই ভালো ব্র্যান্ডের সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে