মো.আবুল কালাম আজাদ (রাজ কালাম) :
আমার আজকের এ লেখাটি কয়েকজন মুখোশধারী ধান্দাবাজ, হলুদ সাংবাদিক এবং অপ-সাংবাদিককে ঘিরে, যারা সাম্প্রতিককালে এ মহান পেশাকে কলুষিত করেছেন। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা সেই পেশাকে ব্যবসা বা বাণিজ্যতে রুপদান করেছেন।
সাংবাদিকতা যতোটা না পেশা তার চেয়ে অনেক বেশি নেশা, ভালোলাগা। এই নেশাটা হচ্ছে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার নেশা। আমার মনে হয়, একজন চিকিৎসক যেভাবে মানুষের সেবা করতে পারেন তার চেয়ে অনেক বেশি সেবা করতে পারেন একজন সাংবাদিক। একজন শিক্ষক যেমন জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন তেমনি একজন সাংবাদিক জাতি গঠন ও জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে বাধ্য করতে পারেন। কোন সাংবাদিকের এই নেশা কেটে গেলে তিনি তখন যতোটা না সাংবাদিক থাকেন তার চেয়ে বেশি চাকুরিজীবী!
আমি জানি আজ আমি যে বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি সেটা অনেক কঠিন হবে কারণ আমি এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে লিখতে বসেছি যারা যতটা না ভয়ংকর তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট। নিকৃষ্ট বলছি এই কারণে, কারণ আমরা কাককে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী বলে থাকি কিন্তু এই নিকৃষ্ট প্রাণী নিজেদের মাংস খায় না তবে অবাক না হয়ে পারি না মুখোশধারী সাংবাদিক পরিচয় দানকারীরা নিজেদের জাতের মাংস খেতে দ্বিধাবোধ করে না। তাহলে আমরা নিকৃষ্ট বলবো কাককে নাকি এই মুখোশধারী, হলুদ সাংবাদিক – অপ-সাংবাদিকতাকারীদের?
আমি সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত কিন্তু নিজেকে কখনো সাংবাদিক বলে পরিচয় দেই না, আবার নিজের নামের আগে বা পরে কোথাও সাংবাদিক টাইটেল যুক্ত করিনা আর কোনদিন করবোও না। কারণ এখন লেজুড়ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কর্মী, অর্থলোভী, স্বার্থান্বেষী, টাউট-বাটপার, প্রতারক, নেশাখোর,চাঁদাবাজ, তথ্য গোপনকারী, মাদক পাচারকারী, ঠগ, ধান্ধাবাজ, সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিরা কার্ড ঝুলিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য আমি দায়িত্বরত সম্পাদকদেরকেও দোষী সাব্যস্ত করছি কারণ উনারা বেশির ভাগই নিজেদের স্বার্থে এইসব গুণী ব্যাক্তিদের কার্ড দিয়েছেন (গুণী লিখলাম এই কারণে কারণ এমন গুণের অধিকারী হওয়া সহজ নয়)।
অনেকক্ষেত্রেই চোখে পড়ে, সংবাদ লেখার যোগ্যতা নেই অথচ সাংবাদিক। সম্পাদনা করার মেধা নেই অথচ সম্পাদক। দু’লাইন / দু’কলম শুদ্ধ বাংলা বলতে ও লিখতে পারেনা অথচ তারা রিপোর্টার! যে জানেনা কোনটা সংবাদ, কোনটা সংবাদ না, বা একটা প্রতিবেদন কিভাবে লিখতে হয় তার কোন জ্ঞান নেই সে হয়ে যায় মস্তবড় প্রতিবেদক, কলামিষ্ট ও লেখক ! এ হচ্ছে সংবাদপত্র জগতের একটি ভয়ংকর চিত্র। এগুলো থেকে অপসাংবাদিকতা বিস্তার লাভ করেছে চারদিকে। আর এই অপসাংবাদিকতার বিকৃত আরেকটি প্রচলিত শব্দ হচ্ছে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’।
এখন দেখা যায় অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন, আবার অনেকেই নিজেকে ২০/২৫/৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেন কিন্তু বলতে কষ্ট হয় একটি নিউজ লিখতে পারেনা এমনকি ফেসবুকে দিনে ১০টা করে স্ট্যাটাস দেন যেখানে এক লাইনের একটি স্ট্যাটাসে ৩/৪টি বানান ভুল। তাহলে উনাদের অভিজ্ঞতা, সাংবাদিকতা কোথায়! উনারা জানেনা তাদেরকে নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। আমি অনেকের এমন ভুলে ভরা স্ট্যাটাস দেখে লজ্জিত হয়ে উনাদের ম্যাসেঞ্জারে নক করে ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাদেরকে থামানো যায়না, অনেক সময় তিরস্কার হওয়ার মতো উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাই এমন উপযাচিত হয়ে উপকার করা বাদ দিয়েছি।
কিছু সাংবাদিক গলায় কার্ড ঝুলিয়ে নিজেদের সাংবাদিক দাবি করে বিভিন্ন এলাকায় সো ডাউন দেয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে কোথাও কোন অন্যায়, অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে কিনা হলেই মোবাইলে কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে নিজেদের আইডি থেকে ছোট্ট করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে অমুক জায়গায় এমন কিছু হতে যাচ্ছে বিস্তারিত আসছে…আকার ইংগিতে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে বুঝানো। তারপর উনি বুঝে তাদের ফোন দিবে আর ফোন করতে দেরি হলে সেই সাংবাদিক তাকে ফোন দিয়ে তাদেরকে কিছু খুশি করার কথা বলবে না হলে নিউজ করার হুমকি। আমার কথা আপনি যদি সাংবাদিক হন নিউজ করুন, ফেসবুকে পোস্ট কেন?? এসব ফেসবুক সাংবাদিকরা ৫০/১০০ টাকাও নেয়, নিয়ে সাংবাদিকতা পেশাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
আজকে এখানেই রাখতে হচ্ছে, পরবর্তী পর্বে আরও অনেক বাস্তবতা শেয়ার করবো…