বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার সূচকে আগামী বছর বাংলাদেশের অবস্থান দুই অংকের ঘরে উন্নীত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেন,‘দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার নিরলসভাবে নীতি সংস্কারের পাশাপাশি বড় বড় সংস্কারের কাজ করছে। এ বছর আগামী অক্টোবরে সহজে ব্যবসা করার সূচকের যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেখানে নিশ্চই বাংলাদেশের অগ্রগতি হবে। তবে আমি অব্যশই আশাবাদী ২০২১ সালে আমরা দুই অংকের ঘরে যেতে পারব।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের গতি প্রবাহে কোভিড-১৯ এর প্রভাব : সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী,বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চীফ অফ মিশন জোঅ্যান ওয়াগনার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বিল্ড চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, জেট্রোর আবাসিক প্রতিনিধি ইউজি এন্ডো, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (অ্যামচেম)’র সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেম,স্যামসং-ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আলম আল মাহবুব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ।
সালমান এফ রহমান বলেন, সরকার নীতি সংষ্কারের যে কাজ করছে, তা দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষনে প্রয়োজনীয় সংষ্কারের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অত্যন্ত আন্তরিক, এখন প্রয়োজন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংস্কার নীতিমালা বাস্তবায়ন করা।

তিনি জানান, খুব শীঘ্রই খেলাপী আইন ও কোম্পানী আইনে প্রয়োজনীয় সংষ্কার আনা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অন্যান্য দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর কাঠামাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা মনে করেন হ্রাসকৃত করের হার বিনিয়োগকারিদের নতুন বিনিয়োগে উদ্ভুদ্ধ করে। তিনি বিদ্যমান করদাতাদের উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা খোঁজার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগ করলে উদ্যোক্তারা ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনশিয়েটিভ পাবেন। তিনি জানান,বেজা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত কম মূল্যে জমি প্রদান করছে, যা ভিয়েতনামের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি ও বিদেশি বিনিযোগকারিদের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন অসামঞ্জস্যতা রাখা হবে না। সবাই সমান সুবিধা পাবেন। পবন চৌধুরী দেশে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে নতুন বন্দর স্থাপন ও বিদ্যমান বন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, জাপানী বিনিয়োগকারিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বঙ্গোপসাগর ভিত্তিক অর্থনীতি এবং এশীয়অঞ্চলে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে জাপানের পক্ষ হতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে কর কাঠামো,কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও বৈদেশিক মুদ্রানীতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চীফ অফ মিশন জোঅ্যান ওয়াগনার বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমেরিকান কোম্পানীগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে। এখন কোভিড অতিমারির কারণে ডিজিটাল অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বায়ো-টেকনোলোজি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ করতে পারে।

ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে সময়োপযোগি নীতিামালা প্রণয়ন ও সংস্কার, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের শক্তিশালীকরণের উপর জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি যোগাযোগ বাড়ানো, স্থানান্তরিত বিনিয়োগ আকর্ষনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, রপ্তানির পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাজার সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মার্কিন ও জাপানের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং, সেবাখাত এবং অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে ড. এম. মাশরুর রিয়াজ জানান, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২১ সালে হ্রাস পাওয়ার হার আরো ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে এশিয়া অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশসমূহে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রায় ৪৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনে নতুন পণ্য উৎপাদন, উদ্ভাবন, অবকাঠামো, বাজার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানো উপর আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে