প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শুরু থেকেই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন,‘বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংকট মোকাবেলায় ও ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে সরকার শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা বিবিএস’এর এক ধারণা জরিপ উদ্ধৃত করে কোভিড-১৯ কালিন আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সরকারি সহায়তা কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ একাদশ জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মো. মাহফুজুর রহমানের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন। এ সময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পরিচালিত কোভিড-১৯ বাংলাদেশ : জীবিকার উপর অভিঘাত ধারণা জরিপ ২০২০ অনুযায়ী কোভিড-১৯ কালিন আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সরকারি সহায়তা/ত্রাণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে।’

তিনি বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানামুখী পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন সেক্টর এবং বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সরকার প্রায় এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

সংসদ নেতা বলেন, করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ১৯ প্রচলিত/অপ্রচলিত পণ্যে নগদ সহায়তা প্রদান/সহায়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এ উদ্যোগের ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া, দেশে ই কমার্স কার্যক্রম সচল রাখতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানিজ যেন তাদের উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সঠিক রাখতে পারে সেজন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ আমদানিকারক ও সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে রপ্তানি সমস্যা নিরসন ও রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য পণ্য খালাস ও বাণিজ্যিক লেনদেন সহজীকরণ করা হয়েছে এবং ৫২টি কর্মসূচির মাধ্যমে ১ হাজার ৩শ’ উদ্যোক্তাকে পণ্য বাজারজাতকরণ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরী, টেকসই প্রযুক্তি এবং আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনীতির তারল্য বজায় রাখাতে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো, যেন মহামারীর কারণে সৃষ্ট আর্থিক ধাক্কা মোকাবেলা এবং দৈনন্দিন ব্যবসার কাজ সুচারুরুপে পরিচালিত হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ সরবরাহ বাড়াতে ইতোমধ্যে সিআরআর (নগদ রিজার্ভ অনুপাত) এবং রেপো হার শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়েছে এবং প্রয়োজনে তা অব্যাহত থাকবে।
একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি যেন না বাড়ে সেজন্য তাঁর সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য একেএম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালিন তাঁর সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিসমূহের কাছ থেকে বিভিন্ন জরুরী আপদকালিন সহযোগিতা পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, জাপান ৩৫ বিলিয়ন ইয়েন বা ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার এবং এডিবি ৬শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুদান দিচ্ছে। করোনার টিকা ক্রয়ে বাংলাদেশ এবং এডিবি’র মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ৩০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান, করোনা মোকাবেলা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১০৫ কোটি মার্কিণ ডলার প্রদান করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে তৈরী পোষাক খাতের জন্য ১১০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানীর কাছ থেকে চামড়া শিল্পের জন্য ১১৩ মিলিয়ন ইউরো’র প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে।

এছাড়া, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এশিয়ান ইনফ্রাষ্ট্রাকচার এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বাংলাদেশের জন্য একশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।

– বাসস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে