সব ঠিক আছে
🖋নীলকন্ঠ
ছোটগল্প : মেঘনা ওমা মেঘনা, সকাল সকাল তোর বাবা কেন ডাকছে দেখ তো। মেঘনা দরজা খুলে বাইরে আসে । বাবা বলে আজ শুক্রবার মনে আছে । মেঘনা বলে শুক্রবার তো কি হয়েছে? বাবা বলল আজ বাজারে অনেক বড় বড় ইলিশ মাছ উঠেছে দামও কম ।মেঘনা তার মায়ের দিকে তাকায়। মা খুব ইলিশ মাছ পছন্দ করে । ইলিশ এর কথা শুনে মা বাবার কাছে দাম জিজ্ঞেস করে ।বাবা বলে ছয় শত টাকা কেজি । মায়ের মুখ শুকিয়ে যায় ।মেঘনা তার বাবা কে বলে তিন শত টাকা হলেও কিছু করার নেই । মা বলে ঠিক তাই হাতে টাকা না থাকলে দুই টাকাও বেশী হয় ।মেঘনা বুঝতে পারে কথাটা বলতে মায়ের খুব কষ্ট হয়েছে । মেঘনা তার ঘরে যায় তার কলেজের ব্যাগে হাত দেয় দেখে সেখানে চারশত টাকা পড়ে আছে । সে চিন্তা করে আজ মাসের ষোল তারিখ বাচচারা বেতন দিবে সাত আট তারিখের দিকে এ একশো টাকা দিয়ে সে কেমন করে চলবে।তারপর আর কিছু চিন্তা না করে সে তার বাবাকে তিনশত টাকা বের করে দেয়,আর বলে ভালো দেখে কিনে আনবে।যদিও মেঘনা জানে ওর বাবা সব সময় সেরা জিনিসটা কিনে আনে।মেঘনাদের ছোট্ট সংসার বাবা -মা ,ভাইবোন আর মেঘনা ।মেঘনার বাবা এক সময় ছোট্ট একটা ব্যবসা করতো। আর্থিক ক্ষতির কারণে তার বাবার ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে যায় ।ওদের একখানি জমি আছে সেই জমির ধান দিয়ে ওদের কোনমতে দিন চলে ।বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে ।বড় ভাই পড়াশুনা শেষ করে ছোট্ট একটা চাকরি করে ।চাকরি করে যে বেতন পায় তা দিয়ে খুব কষ্ট করে সংসারটা চলে ।যদিও এ টাকা দিয়ে সবার সব চাহিদা পূরণ হয়না তার পরও কোন অভিযোগ থাকে না ।মেঘনা কলেজে পড়াশুনা করে ।পড়াশুনাতেও বেশ ভালো ।মেঘনা বাসায় ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ায় এতে করে সে বেশ কিছু টাকা পায় যা দিয়ে ওর কলেজের যাতায়াত ভাড়া হয়ে যায় ।এবার আসি মূল কথায় বাবা একটা ইলিশ মাছ আনলো মা মাছটি কাটলো মেঘনা আর বাবা চেয়ে চেয়ে দেখলো। মা খুব সুন্দর করে রান্না করলো। রান্না শেষ করে মা গোসল করে নামাজ পড়ল ।বাবা মসজিদ থেকে আসার সময় তার এক বন্ধুকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলো দুপুরে খাবার জন্যে । মা তাদের খেতে দিলেন দুই পিছ করে দুইজন কে চার পিছ মাছ দেওয়া হলো ।বাবার বন্ধু চলে যাবার পর পাশের বাড়ির খালাআম্মা আসে তার জামাই এর জন্যে তরকারি চাইতে মা তাকে দুই পিছ মাছ দেয় ।বাকি থাকে দুই পিছ ।মেঘনা আর তার মা খেতে বসবে এমন সময় মেঘনার দুলাভাই এসে হাজির ।মেঘনা তাকে খেতে বসতে বলে দুলাভাইকে এক পিছ মাছ দেওয়া হয় দুলাভাই বলে আর এক পিছ মাছ আমাকে দাও তো ।মেঘনা বাকী চাকাটা তার দুলাভাই কে তুলে দেয় । বাটির দিকে তাকিয়ে মেঘনার খুব রাগ হয় ঝোল দেখে । তারপর ওরা খেতে বসে খাবার সময় মা বলে, “লে রাগ করিস না মাছ নেই তো কি হয়েছে ঝোল তো আছে,ইলিশ মাছের সব স্বাদ তো ঝোলে,সব ঠিক আছে।” মেঘনার চোখে পানি আসে । মাকে খাওয়াবে বলেই তো নিজের হাত খরচের টাকা দিয়ে মাছ আনিয়েছিল। তাহলে কেন মা খেতে পারলনা।আজ মেঘনার সংসার হয়েছে ।বাবা মা দুজনেই বেঁচে আছেন ।বাবা মার জন্যে যে কিছু একটা করবে তার ও উপায় নেই ।মেঘনা তার বাবা মার কাছে তাদের কথা জানতে চাইলে বাবা মা বলে চিন্তা করো না সব ঠিক আছে । মেঘনা তো জানে কোন কিছু ঠিক নেই, বাবা মার যে কষ্ট সেই আছে । আগে তাও ছেলেমেয়ে গুলো সঙ্গে থাকত। হাজার কষ্টেও আনন্দ পেত।মেঘনাও বুঝতে পারে বাবা মার সঙ্গে একবেলা না খেয়ে থাকার মাঝে যে শান্তি তা আর কোথাও নেই ।এখনও কোন মাছ খেতে গেলে মেঘনা রাগে ফেটে পড়ে কারণ তার মনে পড়ে তার মায়ের মাছ না পেয়ে ঝোল নিয়ে খুশি থাকার মুখটি আর সেই কথাটা সব ঠিক আছে।