রাজশাহী প্রতিনিধি:

পদ্মা নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষদের মোটরসাইকেল রাখার নামে দীর্ঘদিন যাবত হয়রানি ও চাঁদাবাজি করে আসছে শান্ত (৩২) ও তার দলবল।

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আল-আমিন ও শাহিনুর নামের জাতীয় পত্রিকার দুই সাংবাদিক কথিত গ্যারেজ মালিক তথা চাঁদাবাজ শান্তর খপ্পরে পড়েন। টিকিট নিতে আপত্তি জানানোয় তাদের আটকিয়ে রাখা হয় সেখানে। পরে ‘৯৯৯’ এ কল দিয়ে রক্ষা পান তারা।

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহীর পদ্মা পাড়ে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বড়কুঠি কফিবারের সামনে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তারা বিষয়টি নিয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন- দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান মো. আল-আমিন হোসেন ও দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার ব্যুরো প্রধান শাহিনুর রহমান সোনা।

জানা গেছে, গ্যারেজ মালিক শান্ত বড়কুঠি বাড়ির সামনে দলবল নিয়ে চাঁদাবাজি করেন। গতকাল সাংবাদিক শাহিনুর ও তার সহকর্মী আল-আমিন পেশাগত কাজে বড়কুঠি কফিবারের সামনে যান। সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই শান্ত ও তার এক সহকর্মী টিকিট দিতে আসেন। টিকিট না নেওয়ায় চাঁদাবাজ শান্ত ও তার আরও ২-৩ জন লোক মোটরসাইকেল তাদের গ্যারেজে রাখার জন্য জোর করেন। সংবাদের জন্য কিছু ছবি ও সাক্ষাৎকার নিয়ে দুই/এক মিনিট পরই চলে যাবার কথা বলেন ওই দুই সাংবাদিক। তারপরও তাদের জোর করে টিকিট নিতে বলা হয়। সাংবাদিক আল-আমিন তাদের এ অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করলে তারা একপর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন ও গালিগালাজ করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, শান্তর হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে উপায় না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে পুলিশের সহযোগিতা নেন সাংবাদিক শাহিনুর। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ দেখে তাৎক্ষণিক সটকে পড়েন শান্ত ও তার দলবল। পরে সাংবাদিক আলামিন ও শাহিনুরকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে থানায় এসে শান্তদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন দুই সাংবাদিক।

ভূক্তভোগি সাংবাদিকেরা বলেন, পদ্মা পাড়ের বিনোদন বিষয়ক একটি নিউজে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো গ্যারেজ নেই। তারপরও শান্ত নামের এক ব্যবসায়ী জোরপূর্বক সেখানে গ্যারেজের নামে টাকা তোলেন যা অবৈধ। তার গ্যারেজের বাইরে কফিবারে বাইক রাখার পরও তার কাছে সামান্য সময় চাওয়া হয়। কিন্তু শান্ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। শান্ত তাদের বলেন, ‘সাংবাদিক আর পুলিশকে গ্যারেজে মোটরসাইকেল মাগনা রাখার জন্য ব্যবসা করছি না। টিকিট নিতে হবে, নাহলে বাইক নিয়ে এসেছেন ঠিকই, টাকা ছাড়া যেতে দিব না। তোর কোন বাপ আছে, যা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কর, পারলে লেখালেখি কর। এর আগেও তোদের অনেক সাংবাদিক আমার বিষয়ে লিখেছে, আমার কিছুই করতে পারেনি।’ উপায় না দেখে ৯৯৯ সম্বরে কল দিয়ে আমরা পুলিশি সহায়তা নেই। পরবর্তীতে পুলিশ ও অন্যান্য সাংবাদিক ঘটনাস্থলে আসা দেখে শান্ত ও তার দলবল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় কজন বাসিন্দা জানান, শান্তর সঙ্গে প্রায় পদ্মাপাড়ে ঘুরতে আসা মানুষের সাথে গণ্ডগোল হয়। তার অবৈধ গ্যারেজে রাখা কোনো মোটরসাইকেলের যদি টিকিট হারিয়ে যায়, তাহলে সেটির মালিককে পড়তে হয় বেশ বিড়ম্বনায়। অনেক সময় ঝামেলা করে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেয় শান্ত। এতে সহযোগিতা করে তার সঙ্গে থাকা লোকজন। এ ধরনের চাঁদাবাজির কারণে এলাকার মানুষদের পড়তে হয় অনেক লজ্জায়। শান্ত মাদকসহ বিভিন্ন মামলার আসামি বলেও জানিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীরা শান্তর অশালীন আচরণ ও চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন বলেও জানা স্থানীয়রা। এতটুকুতেই নয়, মালোপাড়া ফাড়ি ইনচার্জ ইফতে খায়ের আলমসহ অনেক পুলিশই শান্ত দ্বারা এমন দূব্যবহারের স্বীকার হয়েছেন বলে জানান বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ।

গতকালকের ঘটনার ব্যাপারে ইফতে খায়ের বলেন, ঘটনার বিষয়টি শোনার পরপরই সেখানো ফোর্স পাঠানো হয়। আজও পুলিশ ওই এলাকায় টহল দিয়েছে। শান্তরা পলাতক, তাদের অবৈধ গ্যারেজও বন্ধ। দ্রুতই ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে