শ্রীলঙ্কা বোর্ড যেভাবে চাইছে সেভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিসিবি কার্যালয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি একথা বলেন।

গত দুদিন ধরে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। আদৌ বাংলাদেশ দলের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে লঙ্কায় যাওয়া হবে কিনা তা নিয়েও দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। অবশেষে হলোও তাই।

কথা ছিল, শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে বিসিবি’র হাইপারফরম্যান্স ইউনিটও (এইচপি) সফর করবে। এর প্রধান কারণ ছিল দুটি- প্রথমত, বিসিবি’র এইচপি ইউনিট ও লঙ্কান এইচপি ইউনিটের মধ্যকার সিরিজ মাঠে গড়ানো। দ্বিতীয়ত, করোনা মহামারীর কারণে যেহেতু স্বাগতিকরা প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য কোনো দল দিতে পারছে না, তাই বিসিবির এইচপি দলের বিপক্ষেই মোমিনুলদের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল।

কিন্তু হুট করেই আয়োজক দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য নীতিমালার খড়গে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে এইচপি দলের সিরিজটি। কেননা তারা বিসিবিকে পাঠানো স্বাস্থ্য নীতিমালায় স্পষ্টত উল্লেখ করে দিয়েছে যে, করোনা মহামারীর সময়ে এতো সংখ্যক ক্রিকেটার যেন দেশটিতে সফর না করে।

এছাড়া প্রথমে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কার বোর্ডকে জানানো হয় যে, কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় ১৪ দিন থেকে কমিয়ে যেন ৭ দিনে আনা হয়। আর কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীনও যেন ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে পারে। তবে এর কোনোটিই সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। এসএলসি বিসিবিকে জানিয়েছে- কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় ১৪ দিনই থাকবে এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় টাইগাররা অনুশীলনও করতে পারবেন না।

এমন অবস্থায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন, এভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয়। পাপন জানান, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমাদের জানিয়েছে সেখানে ক্রিকেটারদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং এই সময়ে তারা অনুশীলনও করতে পারবে না। আর এইচপি টিমও যেতে পারবে না। এমন অবস্থায় অনুশীলন না করে তো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয়।’

বিসিবি সভাপতি আরও জানান, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আমাদের আরও জানিয়েছে যে, ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য তারা বল থ্রোয়ারও দিতে পারবে না। আর আমরাও দেশ থেকে কোনো বল থ্রোয়ার নিয়ে যেতে পারব না। তাহলে ক্রিকেটাররা অনুশীলন করবে কি করে? এটা তো ছেলেখেলা নয়, এটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। এভাবে আসলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয়। তাই তাদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে, এভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয়।’

নাজমুল হাসান পাপন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দল হোটেলে প্রবেশের পর সেখান থেকে বের হতেই পারবে না, এমনকি খাওয়ার জন্যও বের হতে পারবে না। এমন হলে তো সম্ভব নয়। ওদের দেশে ঘরোয়া লিগ হচ্ছে, এতগুলো দল খেলছে তাদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আর আমাদের মাত্র একটা দলের জন্য এত সমস্যা? ক্রিকেটাররা অনুশীলন তো করতেই পারবে না আবার ঘর থেকেও বের হতে পারবে না।’

তিনি বলেন, আমাদের প্ল্যান ছিল আমরা বিশাল একটি দল নিয়ে যাবো, ওখানে অনুশীলন করব এবং সিরিজ খেলে চলে আসব। কিন্তু গতকাল যে চিঠি পেয়েছি সেখানে দেখলাম আমরা যা ভেবেছিলাম তার ধারে কাছে তো নেই-ই, উল্টো যেসব দেশে খেলা হচ্ছে- সেসব নিয়মের ভেতরেও নেই।’

উল্লাখ্য, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আওতাধীন তিনটি ম্যাচ খেলতে ২১ সেপ্টেম্বর লঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। সেখানে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ১২ অক্টোবর পাঁচ দিনের দলগত অনুশীলন করবে বাংলাদেশ- এমনটাই চেয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। এরপর ১৮ অক্টোবর থেকে চারদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে দুই দিনের বিশ্রামের পর ২৪ অক্টোবর টেস্ট সিরিজ শুরু করতে চেয়েছিল তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে