শিশুর বন্ধু পশু পাখি,,,,,,,,,,,,
কবি হাবিবুর রহমান
ছোট গল্প: মিন্টু বয়স আট বছর। ছোট হলেও সাহসী। বুদ্ধি আছে বেশ। বাবা মার সাথে সুন্দর বণে বেড়াতে গেছে। মিন্টুর বাবা খাবার আনতে দোকানে গেল।
মিন্টু মার কাছে। ফোন এলো মিন্টুর মা কথা বলতে ব্যস্ত। দূরে একটি গাছের ডালে বানর বসে কলা খাচ্ছে। মিন্টু বানর দেখছে।
বানর কলা নাড়ছে,একটি কলা মাটিতে পড়ে গেল। মিন্টু দৌড়ে গিয়ে কলা তুলে নিল। বানর আরেক ডালে লাফ দিল। মিন্টু বানরের পিছু নিল।
অনেক পথ যাওয়ার পর বানর বলল,”বন্ধু তুমি তো বণের মধ্যে চলে এসেছো। “
মিন্টু কাদছে। কেননা সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। বানর তো মহা সমস্যায় পড়ে গেল।
বানর বলল,”চলো তোমাকে ব্যাঙ রাজার কাছে নিয়ে যাই। “
মিন্টু বলল,”আমি মার কাছে যাব। “
বানরের শান্তনা শুনে মিন্টু থেমে গেল।
তারপর তারা ব্যাঙ রাজার কাছে গেল। ব্যাঙ রাজা তখন ঘুমাচ্ছিল। বানর মিন্টুর হাত ধরেছিল।
ব্যাঙ জেগে গেল।
বানর বলল,”ব্যাঙ রাজা এই ছোট ছেলেটাকে তার বাবা মার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এসো ভাই। “
ব্যাঙ বলল,”মানুষ খুব খারাপ, তারা পশু হত্যা করে,আমাকে চপ বানিয়ে খায়,আমি পারবোনা ভাই। “
বানর বলল,”বাঁচ্চারা তো কোমল,তাদের পাপ নেই। “
মিন্টু বলল,”আমি তোমাদের বন্ধু। “
শিশুটাকে ব্যাঙ রাজার ভালো লেগে গেল। তারপর তারা বন্ধু হরিনের কাছে গেল। মিন্টুর হরিনকে ভালো লেগে গেল। মিন্টু হরিনের পিঠে উঠে বসলো। তারা গান গাইতে থাকলো।
মিন্টু বলল,”বন্ধু আমরা কোথায় যাচ্ছি। “
ব্যাঙ বলল,”বক রাজার কাছে। “
মিন্টুর সুন্দর বণ ভালো লাগছে। তারা বক রাজার কাছে পৌছে গেল। বক সব শুনে বলল,”আমি মানুষের রাজ্যে কখনই যেতে চাইনা,তারা মাংশ ভোগী,আমাকে ধরবে আর খাবে। “
তারপর তারা সবাই মাছ রাজার কাছে গেল। মাছ রাজা সব শুনলো। তারপর বলল,”আমার তো বয়স হয়েছে,আমি আর বেশি দূর যেতে পারিনা,তাছাড়া মানুষ আমাকে পেলে খেয়ে নিবে। “
মিন্টু বলল,”আমি তোমাদের সাথেই থাকতে চাই। “
ব্যাঙ বলল,”তোমার বাবা মা কষ্ট পাচ্ছে,তারা চিন্তিত তোমাকে দেখতে না পেয়ে।
বক বলল,”চলো আমরা শিয়াল মহারাজার কাছে যাই,তিনি মহা বুদ্ধিমান। “
তারা সবাই শিয়ালের কাছে গেল। শিয়াল তখন আঙুর ফল দেখছিলেন। টসটসে আঙুর ছিল অনেক উপরে। শিয়ালের দেখা ছাড়া কোনো বুদ্ধি ছিলনা। বানর লাফদিয়ে কয়েক ঝোপা মাটিতে ফেলে দিল। শিয়াল মহা খুঁশি বলল,” ফল এখনও পুক্ত হয়নি বাপু। “
তারপর খেতে লাগলো।
শিয়াল বলল,”তোমাদের কি উপকার করতে পারি। “
বানর বলল,”বস এই বাচ্চাটাকে তার বাবা মার কাছে দিয়ে আসুন। “
শিয়াল কয়েকটি আঙুর ফল মুখে দিয়েছিল সেগুলো ফেলে দিয়ে বলল,”আমি পারবো না। “
ব্যাঙ বলল,”আপনি পণ্ডিত, পারতেই হবে। “
শিয়াল বলল,”স্বজাতি শিয়াল মানুষের মোড়গ-মুরগি খায়,মানুষ ক্ষিপ্ত,আমায় পেলে লাঠি পেটা করবে। “
বক বলল,”চলো সবাই রাজার রাজার কাছে যাই। “
শিয়াল বলল,”ঠিক বলেছ,বাঘ মামা পারে সমাধান দিতে। “
সবাই দল বেঁধে বাঘের কাছে গেল। বাঘ আর হাতি গল্প করছিল।
বাঘ ঘটনা শুনলো। শুনে বানরের উপর রেগে গেল। কেননা বানর কলা দেখিয়ে এই ছোট বাচ্চাকে বণের ভিতর এনেছে।
তারপর বাঘ বলল,”মিন্টু তুমি কি লোকালয়ে যেতে চাও। “
মিন্টু হরিনের পিঠে ছিল ও বলল,”আমি এখানেই ভালো আছি। “
বাঘ বলল,”না তুমি এখানে থাকবেনা। “
মিন্টু বলল,”কেন মহা রাজা। “
বাঘ বলল,”এখানেও হিংস্র প্রাণী আছে,সুযোগ পেয়ে তোমার ক্ষতি করতে পারে।”
মিন্টু কিছু বলেনা। সে ছোট হলে কি হবে বাবা মাকে অনেক ভালোবাসে।
বাঘ বলল,” তোমাদের মধ্যে কে আছ যে মানুষ অরণ্যে যেতে রাজি। “
হাসি মুখে হাতি বলল,” আমি। “
বাঘ সহ সবাই বলল,”না তুমি বড় প্রাণী তোমাকে পেলে মানুষ বন্দী করবে। “
হাতি বলল,”যতই বিপদ হোক আমি মিন্টুকে তার বাবা মার কোলে ফিরিয়ে দিতে চাই। “
বাঘ মহারাজা বলল,”আমিই যাব। “
ব্যাঙ বলল,”মহারাজা আপনাকে দেখলে মানুষ ভয়ে পালাবে,তাছাড়া আপনারও বিপদ লোকালয়ে। “
তারা ঐক্যে আসে। এই মানুষ শিশুটিকে তারা সবাই মিলে রেখে আসবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিন্টুকে পিঠে নিবে হাতি। সবার পিছনে রবে বাঘ। বক আগে আগে আকাশে উড়বে,বিপদ হলে সংকেত দিবে। মিন্টু হাতির পিঠে। সবার পিছনে মহারাজা বাঘ গান গাইছে। সাত রাত সাত দিন হাটার পর তারা মানুষ্য অরণ্যে পৌছে। মিন্টুর বাবা মা কাদছে। সাংবাদিকের ভিড়। আছে আর্মি। তাদের হাতে অস্ত্র। প্রথমে হাতি এলো। মানুষ তো অবাক। কেননা তার পিঠে মিন্টু। বাবা মা খুঁশি। একে একে সবার আগমন। সবার সামনে এলো মহারাজা বাঘ। হাতি মিন্টুর বাবা মার কাছে গেল। বাঘের পিঠ বেয়ে মিন্টু মাটিতে নেমে এলো। এরকম দৃশ্য মানুষ আগে দেখেনি। একে একে সবাই মিন্টুর গায়ে আদর দিল। মিন্টুও মহারাজা সহ সকলকেই চুমু দিল। মিন্টুকে তার বাবা মা জড়িয়ে ধরলো। মিন্টুর বাবা মা হাতি মহারাজা সহ সকল প্রাণীকেই আদর দিল। এ যেন মানুষ পশু পাখির প্রেম মেলা। মহারাজা গর্জন দিল। হাতি,বক, বানর,ব্যাঙ,হরিন সহ সবাই বাঘের পিছু পিছু সুন্দর বণের জঙ্গলের দিকে ছুটলো। বণে ফিরে গেল। মিন্টুর পরিবারও বাড়িতে ফিরে গেল। সেই থেকে মিন্টু পশু পাখিকে খাবার দেয়। পশু পাখির প্রতি তার ভালোবাসা অনেক। স্কুলের বন্ধুরাও জানে মিন্টুর গল্প। পশু পাখিও মানুষের বন্ধু, সে শিশু হোক আর বড় মানুষ হোক।