উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বিমানের কেবিন ক্রুদের নিয়ে আপত্তিকর প্রশ্ন করায় ক্ষুব্দ হয়েছেন প্রয়াত নায়ক মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না। তিনি এ জন্য জয়কে জনসম্মুখে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বললেন।অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি শেলী মান্না জয়ের উদ্দেশ্যে তার ফেসবুক পেজে একটি লম্বা স্ট্যাটাস দিয়ে এসব বিষয় উল্লেখ করেন। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
জনাব জয়,
সাম্প্রতিক কালে একটি লাইভ অনুষ্ঠানে (জীবনের গল্প) অতিথী হয়ে এসেছিলেন বিমানের সাবেক ক্যাপ্টেন মোশতাক। আপনি সেই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন। আপনি এভিয়েশন (Avation) নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেছেন।
একজন সম্মানীয় সজ্জন ব্যক্তিকে আমন্ত্রন করে, তাঁর জীবন বৃত্তান্ত, তাঁর পেশাগত দক্ষতা ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন স্বাভাবিক নিয়মেই।
তারপর আপনি আপনার চিরাচরিত স্বভাব সিদ্ধ অভ্যাসের দরুন আবারও অপ্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ অর্থাৎ cabin crew দের সঙ্গে তাদের প্রণয়ঘটিত ব্যাপার থেকে শুরু করে, বিদেশ থেকে জিনিসপত্র এনে বিক্রি প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন, যা অত্যন্ত indecent ও আপত্তিকর..!
ক্যাপ্টেন মোশতাক অত্যন্ত সজ্জন ও অমায়িক ব্যক্তিত্ব বিধায় তিনি এটির উত্তরে একটি ব্যাখা দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি কথাই বলতে চাই যে, ‘এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভুরিভুরি।’
কেবিন ক্রু সম্প্রদায় তাদের বৈধ আয় দিয়ে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করে এসেছে। কিছুটা টানপোড়েন তো পৃথিবীর সমস্ত সেক্টরেই চলমান রয়েছে। কোনো সেক্টরই এর উর্ধ্বে নয়, নইলে তো পৃথিবী জান্নাতময় হতো। ভালো শব্দের পাশাপাশি মন্দ বলে কোনো শব্দ থাকতো না।
জনাব জয়,
আমার মনে হয়, এভিয়েশন (Aviation) সম্পর্কে আপনি কোন ধারণা পোষণ করেন না। নইলে এ ধরনের কোনো অবান্তর প্রশ্ন করতে পারতেন না।
কেবিন ক্রুদের একটা ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয়। নইলে কঠিনতম ট্রেনিং গুলোতে তারা উত্তীর্ণ হতে পারতো না। সেমি টেকনিক্যাল বিষয়ে টেনিং এ ৮৪ পারসেন্ট মার্কস নিয়ে তাদের উত্তীর্ণন হতে হয়, পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়। সারা বছর পড়াশুনা, ট্রেনিং ও ব্রিফিংয়ের মধ্যে থাকতে হয়। পাশাপাশি CAAB এর নিয়মিত check, বিদেশেও প্রতিনিয়ত এসব check এর মধ্যে পড়তে হয়। লাইসেন্সের ন্যায় সার্টিফিকেটে প্রতি বছর প্রচুর পড়াশুনা করে ট্রেনিংয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এর রিনিউ করতে হয়। না হলে কেউ ফ্লাইট অপারেট করতে পারবে না। অজানা বিষয়গুলো আপনার জ্ঞাত হবার জন্য পেশ করলাম।
এয়ারলাইন্স একটি Team work, এখানে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট, এমনকি cleaner section ও সমভাবে প্রয়োজনীয় ও জরুরি না হলে কোনো ফ্লাইট উড্ডয়ন করতে পারবে না। As per Aviation Rules-Highly Trained cabin crew ছাড়া কোন ফ্লাইট Avait অর্থাৎ উড্ডয়ন করতে পারবে না। তাই এখানে superior বলে কিছু নেই।
কেবিন ক্রুদের প্রথম উদ্দেশ্য হলো একজন সম্মানীত যাত্রীকে safety and security এর সঙ্গে তার destination এ পৌঁছে দেয়া। পাশাপাশি সম্মানিত যাত্রীদের দায়িত্ব Highly Trained Cabin Crew দের নির্দেশ মেনে নিরাপত্তার সাথে তার আকাশভ্রমণ ও গন্তব্যে পৌছানো।
জনাব জয়,
আপনি এদেশের শিল্পী সমাজকেও চরমভাবে হেয় করেছেন। যারা এদেশের সাংস্কৃতিক জগতকে সমৃদ্ধ করে এ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদেরকেও আপনার অনুষ্ঠানে অশালীন প্রশ্নে জর্জরিত করেছেন। মৌসুমী, শাবনূর থেকে শুরু করে শিল্পী সমিতিকেও ন্যূনতম সম্মান দেখাননি। অথচ আপনি একজন শিল্পী! ভাবতেও অবাক লাগে। আমরা অত্যন্ত রক্ষনশীল সমাজে বাস করি। তাই এই ব্যাপারে আপনার প্রচন্ড সৌজন্যবোধ ও সীমারেখা থাকা উচিত ছিল।
পরিশেষে জনাব জয়,
কেবিন ক্রুদের Rules Regulation অর্থাৎ প্রচন্ড নিয়ম-নীতির মধ্যে চাকরি করতে হয়। প্রচন্ড সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের জীবন-যাপনে। আইনের বাইরে কাজ করার কোনো বিধান এখানে নেই।
কেবিন ক্রুরা পেশাগত কারণে নিদ্রাহীনভাবে প্রতিনিয়ত রিস্কি জীবন নিয়ে জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সকে নিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, দেশের সেবা করছেন, তারা পারিবারিক ভাবে প্রতিটি মুহুর্ত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এমনকি প্রিয়জনের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সময়ে পাশে থাকতে পারে না। এমন একটা সম্মানজনক ও রিস্কি পেশার সম্প্রদায়কে আপনি কোন যুক্তিতে ও সাহসে অবমাননা করলেন?
আপনার ধারণা থাকা উচিত যে, মানুষের কথায়, প্রশ্নে, যুক্তিতে, আচার-ব্যবহারে চিন্তা ভাবনায় একটি শালীনতা ও সীমারেখা থাকা উচিত। কোনো অবস্থাতেই সীমালংঘনকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা ও এদেশের সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার সম্মানিত সুধীবৃন্দের নিকট উক্ত সমস্ত বিষয়গুলো অবগত করা হলো।
আপনাদের সদয় ও মানবিক দৃষ্টি আর্কষণ করছি।