নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে শনিবার থেকে শুরু হবে উনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।

এ উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে৷ রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে এ উৎসব চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।

বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশের ২২৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে এবারের উৎসবে। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৭০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৭টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২০টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আছে ৪১টি; যার মধ্যে ৩৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসবের কমিটির চেয়ারম্যান কিশোয়ার লায়লা, উৎসবের বিচারক মঈনুদ্দীন খালেদ, রোকেয়া প্রাচী, ফেরদৌস আহমেদ, রফিকুজ্জামান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ), বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স এবং সীমান্ত স্কয়ার সিনেপ্লেক্সে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

এবারের উৎসবে মিলনায়তনের পাশাপাশি অনলাইনেও চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। লাকভেলকি অনলাইন প্লাটফরমে উৎসব চলাকালে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো দেখতে পারবেন।

উৎসবের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন৷ উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ‘স্প্রিং ব্লোসম। উৎসবে এবারই প্রথম সংযুক্ত হচ্ছে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দি ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘ট্রিবিউট’ নামে আরো দু’টি নতুন বিভাগ। বরাবরের মত এবারও থাকছে এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্মস্, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগ।

যে সব দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কিউবা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইটালি, জাপান, কাজাকস্তান, কসোভো, কিরগিস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মেক্সিয়া, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, স্টোভেনিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভেনিজুয়েলা, সাইপ্রাস এবং বাংলাদেশ।

এছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আগামী ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ‘সত্যজিৎ রায়: জাতীয় ও বৈশ্বিক’ শিরোনামে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মফিদুল হক। আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, ধৃতমান চ্যাটার্জী, বিচারপতি রিফাত আহমেদ এবং চলচ্চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ।

চলচ্চিত্র দেখার নিয়মাবলী:

১. জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তন: সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটমূল্য ৫০ টাকা।

২. কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন: এখানে সকাল ১০টা থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শীত হবে। যেখানে অভিভাবকরাও শিশুদের সঙ্গে এই চলচ্চিত্রগুলো বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া, সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটমূল্য ৫০ টাকা।

৩. জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন: এই মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।

৪. শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা: এখানের প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।

৫. শিল্পকলার নন্দনমঞ্চ: এখানের প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।

এবারের উৎসবে মিলনায়তনের পাশাপাশি অনলাইনেও চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। লাকভেলকি অনলাইন প্লাটফর্মে উৎসব চলাকালীন সময়ে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো দেখতে পারবেন।

এছাড়া আগামী ১৭-১৮ জানুয়ারী ২০২১ উৎসবের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক ‘সপ্তম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস্ কনফারেন্স’ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় কনফারেন্স উদ্বোধন করবেন। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি আলোচক হিসেবে থাকবেন।

ঊনবিংশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে আগামী ১৯ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে নির্মাতাদের মিথষ্ক্রিয়ামূলক দিনব্যাপী সেমিনার ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’। চলচ্চিত্রে প্রয়োজনীয়তা থেকেই পশ্চিমারা নিজ শৈল্পিকতা গুণে সমৃদ্ধ। প্রাশ্চাত্যের দেশগুলোর চলচ্চিত্রেরও রয়েছে নিজস্ব শৈল্পকিতা, কিন্তু তা প্রাচ্য থেকে একেবারেই ভিন্ন। এটা ধারণা করা হত যে, ‘এই দুই অঞ্চলের শিল্প কখনও এক হবে না’। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে চলচ্চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলো প্রাচ্য ও পশ্চাত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে চলচ্চিত্র হারিয়েছে নিজ সীমানা, পেয়েছে বৈশ্বিক পরিচিতি। এই একাত্মতাকে কিভাবে আরো রিদ্ধ করা যায় সেই ভাবনা উসকে দিতেই এই আয়োজন। ১৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে সেমিনারটি চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে