Dhaka ০৬:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২ পোল্যান্ডের বাংলাদেশের দূত হলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম ‘পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে উঠতে প্রস্তুত বাংলাদেশ’ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সাক্ষী আবছার আটক ১৩ দিন বৃষ্টিবলয়ে থাকবে পুরো দেশ, হবে কালবৈশাখী-বজ্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লুট হওয়া অস্ত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

লাইলি মজনুর বিয়ে : হাবিবুর রহমান

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:২২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০
  • ২০৫ Time View
ছোট গল্পঃ লাইলি মজনুর বিয়ে
কবি হাবিবুর রহমান
চাঁদনী রাত। পাখির ডাক। শিবলু ছোট বেলা থেকেই দাড়ি রেখেছে। একবারও ব্লেট ঠেকায়নি।
মাঝে মাঝে ক্লাসে ঝন্টু স্যার বলত,”শিবলু লাইলি
মজনুর বিয়ে খাওয়ার জন্য দাড়ি রেখেছিস তাইনা। “
শিবলু উত্তর দিতনা।
শুধু হাসতো।
শিবলু উঠনে বসে আছে।
তাদের বাড়িতে কেউ নেই। বাবা মা নানা বাড়িতে গেছে। সাথে তার ছোট ভাইকেও নিয়ে গেছে।
একা একা ভালো লাগছে না।
শিবলু প্রকৃতিকে বলল,”আজ সারা রাত তোরা আমার আড্ডার সঙ্গি। “
বাতাস তার চুল ছুয়ে গেল।
রাত গভীর।
এক পুরুষ, এক মহিলা এলো শিবলুদের উঠনে।
শিবলু দেখছে,ভয় পেলনা।
পরিচয় দিল।
মেয়েটি বলল,”আমি লাইলি আর ও আমার মজনু। “
মজনু বলল,”আমাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাবেনা। “
শিবলু বলল,”তোমরা লাইলি মজনু। “
লাইলিও মজনু সমকন্ঠে বলল,”বিশ্বাস হচ্ছেনা,আমরাই লাইলি মজনু। “
তারপর শিবলু তাদেরকে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল।
তাদের হাতে বড় ব্যাগ ছিল।
শিবলুর খুব খুশি লাগছে।
ভয় করছে না।
লাইলি বলল,”শিবলু তোমার ঘর গুলো তো অনেক সুন্দর। “
শিবলু চমকে উঠলো,সে বলল,”তুমি দেখি আমার নামও জানো। “
লাইলি বলল,”তুমি খুব ভালো ছেলে। “
তারপর তারা অনেক গল্প করলো। শিবলুর আজকের রাত ঈদের রাতের মত লাগছে।
এমনিতেই লাইলি নতুন বউয়ের মত সেঁজে আছে। মজনুও বরের সাঁজে সেঁজেছে।
শিবলু পৃথিবীতে এমন বর বউ দেখেনি। লাইলি অনেক সুন্দরী।
শিবলু বলল,”তোমাদের কি বিয়ে হয়ে গেছে? “
তারা উত্তর দিলোনা।
লাইলি এক গ্লাস সরবত দিল শিবলুর হাতে।
শিবলু খেল। সে এই প্রথম এমন টেষ্টি সরবত খেল।
এবার মজনু বলল,”আমাদের বিয়েটা তুমিই দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। “
শিবলু বলল”,তোমরা বিয়েই করোনি। “
লাইলি ও মজনু সমকন্ঠে বলল,”আমরা খাবার দাবারের ব্যবস্থা করছি, তুমি কাজী নিয়ে এসো। “
শিবলুর বাড়ি থেকে কাজী বাড়ি একটু দূরেই।
মানি ব্যাগ হাতে নিল। রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো। কাজী বাড়ি পৌছে গেল। অনেক কষ্টে দবির কাজীকে রাজি করালো।
শিবলু টাকা প্রথমেই কাজীর হাতে দিল। তারা রওনা দিলো।
শিবলু ও কাজী বাড়িতে পৌছে গেল। চারদিকে খাবারের গন্ধ। ফলের গন্ধ,মিষ্টির গন্ধ। বিরানীর গন্ধ। শিবলুর বাড়ি ফুলে ফুলে সাঁজানো।
শিবলু মনে মনে ভাবছে,”আধা ঘন্টার মধ্যে এতো সব হলো কিভাবে, স্বপ্ন তো নয়,ধূর কি ভাবছি আমার সাথে তো জীবন্ত কাজী আছে। “
দবির কাজী কিছু বলছে না। বাসর ঘরও সাঁজানো শেষ। কবুলটাই বাকি।
কাজী লাইলি মজনুর বিয়ে পড়িয়ে দিল। মোনাজাতও শেষ হলো। শিবলু,কাজী,মজনু খেতে বসলো। লাইলি তাদের বেড়ে দিচ্ছে। খাবার আইটেম দেখে কাজী বেটার চোখা আসমানে উঠলো।
উঠের মাংশ,দুম্বার মাংশ আরও কত কি? রাজ ভোগও এমন হয়না। কাজী ছয় সাত প্লেট খেল। বিরানীও খুব টেষ্ট। শেষে মিষ্টির পালা। সব আইটেমের মিষ্টি।
কাজী বাড়ির জন্য সাঁজিয়ে নিয়ে চলে গেল।
লাইলি বলল,”শিবলু তোমার আর কিছু চাই। “
শিবলু বলল,”স্বপ্নের মত লাগছে। “
মজনু বলল,”সত্যি। “
তারপর লাইলি শিবলুকে এক জোড়া কবুতর উপহার দিল।
মজনু বলল,”ধন্যবাদ শিবলু, তুমি অনেক ভালো। “
শিবলু কিছু বলল না।
লাইলি মজনুকে বাসর ঘরে রেখে আসলো।
রাত একটা।
শিবলুর আজকের রাতটা অনেক প্রিয় প্রিয় লাগছে।
ঘুমে শরীর ক্লান্ত  লাগছে। শিবলু ঘুমিয়ে গেল।
রিংটনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ঘড়িতে তখন সকাল দশটা।
শিবলু বিছানা ছেড়ে উঠলো। এক জোড়া সাদা কবুতর তার বিছানায়।
তখন শিবলুর মনে পড়ে গেল লাইলি মজনু তো ও ঘরে। বাসর ঘরে গিয়ে দেখলো লাইলি মজনু ঘরে নেই।
ফুল  আছে।
ঘর সাঁজানোই আছে। শুধু লাইলি মজনু নেই। এমন কি সবার খাবার প্লেট আছে।
ব্যাগও আছে। শিবলুর বাবা মা একটু পড়ে আসবে। শিবলু তাকিয়ে আছে লাইলি মজনুর বাসর ঘরের দিকে। এক জোড়া কবুতর তার হাতে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২

লাইলি মজনুর বিয়ে : হাবিবুর রহমান

Update Time : ০৪:২২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০
ছোট গল্পঃ লাইলি মজনুর বিয়ে
কবি হাবিবুর রহমান
চাঁদনী রাত। পাখির ডাক। শিবলু ছোট বেলা থেকেই দাড়ি রেখেছে। একবারও ব্লেট ঠেকায়নি।
মাঝে মাঝে ক্লাসে ঝন্টু স্যার বলত,”শিবলু লাইলি
মজনুর বিয়ে খাওয়ার জন্য দাড়ি রেখেছিস তাইনা। “
শিবলু উত্তর দিতনা।
শুধু হাসতো।
শিবলু উঠনে বসে আছে।
তাদের বাড়িতে কেউ নেই। বাবা মা নানা বাড়িতে গেছে। সাথে তার ছোট ভাইকেও নিয়ে গেছে।
একা একা ভালো লাগছে না।
শিবলু প্রকৃতিকে বলল,”আজ সারা রাত তোরা আমার আড্ডার সঙ্গি। “
বাতাস তার চুল ছুয়ে গেল।
রাত গভীর।
এক পুরুষ, এক মহিলা এলো শিবলুদের উঠনে।
শিবলু দেখছে,ভয় পেলনা।
পরিচয় দিল।
মেয়েটি বলল,”আমি লাইলি আর ও আমার মজনু। “
মজনু বলল,”আমাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাবেনা। “
শিবলু বলল,”তোমরা লাইলি মজনু। “
লাইলিও মজনু সমকন্ঠে বলল,”বিশ্বাস হচ্ছেনা,আমরাই লাইলি মজনু। “
তারপর শিবলু তাদেরকে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল।
তাদের হাতে বড় ব্যাগ ছিল।
শিবলুর খুব খুশি লাগছে।
ভয় করছে না।
লাইলি বলল,”শিবলু তোমার ঘর গুলো তো অনেক সুন্দর। “
শিবলু চমকে উঠলো,সে বলল,”তুমি দেখি আমার নামও জানো। “
লাইলি বলল,”তুমি খুব ভালো ছেলে। “
তারপর তারা অনেক গল্প করলো। শিবলুর আজকের রাত ঈদের রাতের মত লাগছে।
এমনিতেই লাইলি নতুন বউয়ের মত সেঁজে আছে। মজনুও বরের সাঁজে সেঁজেছে।
শিবলু পৃথিবীতে এমন বর বউ দেখেনি। লাইলি অনেক সুন্দরী।
শিবলু বলল,”তোমাদের কি বিয়ে হয়ে গেছে? “
তারা উত্তর দিলোনা।
লাইলি এক গ্লাস সরবত দিল শিবলুর হাতে।
শিবলু খেল। সে এই প্রথম এমন টেষ্টি সরবত খেল।
এবার মজনু বলল,”আমাদের বিয়েটা তুমিই দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। “
শিবলু বলল”,তোমরা বিয়েই করোনি। “
লাইলি ও মজনু সমকন্ঠে বলল,”আমরা খাবার দাবারের ব্যবস্থা করছি, তুমি কাজী নিয়ে এসো। “
শিবলুর বাড়ি থেকে কাজী বাড়ি একটু দূরেই।
মানি ব্যাগ হাতে নিল। রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো। কাজী বাড়ি পৌছে গেল। অনেক কষ্টে দবির কাজীকে রাজি করালো।
শিবলু টাকা প্রথমেই কাজীর হাতে দিল। তারা রওনা দিলো।
শিবলু ও কাজী বাড়িতে পৌছে গেল। চারদিকে খাবারের গন্ধ। ফলের গন্ধ,মিষ্টির গন্ধ। বিরানীর গন্ধ। শিবলুর বাড়ি ফুলে ফুলে সাঁজানো।
শিবলু মনে মনে ভাবছে,”আধা ঘন্টার মধ্যে এতো সব হলো কিভাবে, স্বপ্ন তো নয়,ধূর কি ভাবছি আমার সাথে তো জীবন্ত কাজী আছে। “
দবির কাজী কিছু বলছে না। বাসর ঘরও সাঁজানো শেষ। কবুলটাই বাকি।
কাজী লাইলি মজনুর বিয়ে পড়িয়ে দিল। মোনাজাতও শেষ হলো। শিবলু,কাজী,মজনু খেতে বসলো। লাইলি তাদের বেড়ে দিচ্ছে। খাবার আইটেম দেখে কাজী বেটার চোখা আসমানে উঠলো।
উঠের মাংশ,দুম্বার মাংশ আরও কত কি? রাজ ভোগও এমন হয়না। কাজী ছয় সাত প্লেট খেল। বিরানীও খুব টেষ্ট। শেষে মিষ্টির পালা। সব আইটেমের মিষ্টি।
কাজী বাড়ির জন্য সাঁজিয়ে নিয়ে চলে গেল।
লাইলি বলল,”শিবলু তোমার আর কিছু চাই। “
শিবলু বলল,”স্বপ্নের মত লাগছে। “
মজনু বলল,”সত্যি। “
তারপর লাইলি শিবলুকে এক জোড়া কবুতর উপহার দিল।
মজনু বলল,”ধন্যবাদ শিবলু, তুমি অনেক ভালো। “
শিবলু কিছু বলল না।
লাইলি মজনুকে বাসর ঘরে রেখে আসলো।
রাত একটা।
শিবলুর আজকের রাতটা অনেক প্রিয় প্রিয় লাগছে।
ঘুমে শরীর ক্লান্ত  লাগছে। শিবলু ঘুমিয়ে গেল।
রিংটনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ঘড়িতে তখন সকাল দশটা।
শিবলু বিছানা ছেড়ে উঠলো। এক জোড়া সাদা কবুতর তার বিছানায়।
তখন শিবলুর মনে পড়ে গেল লাইলি মজনু তো ও ঘরে। বাসর ঘরে গিয়ে দেখলো লাইলি মজনু ঘরে নেই।
ফুল  আছে।
ঘর সাঁজানোই আছে। শুধু লাইলি মজনু নেই। এমন কি সবার খাবার প্লেট আছে।
ব্যাগও আছে। শিবলুর বাবা মা একটু পড়ে আসবে। শিবলু তাকিয়ে আছে লাইলি মজনুর বাসর ঘরের দিকে। এক জোড়া কবুতর তার হাতে।