Dhaka ০৮:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সপ্তাহ জুড়ে চলমান সংঘর্ষ অব্যাহত; আহত অর্ধশতাধিক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৩২:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০
  • ১৫৯ Time View

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দু’গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সপ্তাহ জুড়ে চলমান সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

বুধবারও সারাদিন থেমে থেমে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষে অন্তত আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক।

রোহিঙ্গাদের দু’পক্ষের চলমান সংঘর্ষ থামাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। এই উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।

গত সপ্তাহজুড়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১নং ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’রোহিঙ্গা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও সংঘাত চলে আসছে। এসময় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই পর্যন্ত এক বাংলাদেশী সহ ৮জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে এক সাথে ৪জনের মৃত্যুর ঘটনায় উক্ত ক্যাম্পে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। এ কারণে বুধবার সকাল থেকে সারাদিন দু’পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় নতুন করে উভয় পক্ষে শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। সকাল ১০টার পর থেকে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এঘটনায় ভয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে আশ্রয় নেয়। এসময় রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায়।

রোহিঙ্গারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইয়াবা ব্যবসা, দোকান থেকে চাঁদাবাজি ও এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মুন্না গ্রুপ ও আনাছ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সকালে মুন্না গ্রুপের লোকজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান (রোহিঙ্গা নেতা) হাফেজ মো. জালাল আহমদ জানান, ‘গত এক সপ্তাহজুড়ে এখন ক্যাম্প জুড়ে আতংক বিরাজ করছে। ইয়াবার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে মুন্না গ্রুপ ও আনাছ বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। কিন্তু, গত ৪ অক্টোবর থেকে প্রকাশ্যে গোলাগুলি সহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি তৈরী হয়েছে।

রোহিঙ্গা নারী সোমা আক্তার জানান, ‘সকাল থেকে দিনভর থেমে থেমে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে মুন্না গ্রুপ। এসময় তাদের হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। উক্ত ঘটনায় মুন্না গ্রুপের ভয়ে এক হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জেও কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’

এদিকে, উক্ত ক্যাম্পে সকাল থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য, পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী টহল জোরদার করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৪জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশ। বিকালে উদ্ভূদ পরিস্থিতি পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ক্যাম্পে পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বৈঠক করেন। পরে ডিআইজ মো: আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মঙ্গলবার দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৪জন নিহত হওয়ার ঘটনায় কিছুটা উত্তেজনা বাড়লেও এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ক্যাম্পের ভিতরে আইনশৃংখলা বাহিনী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে আরো পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে গত মঙ্গলবার নিহত চার জনের মধ্যে নুরুল হুদা নামের একজন বাংলাদেশী রয়েছে। তাদের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানামারের রাখাইনে সেদেশের সেনাবাহিনীর অব্যাহত বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা। আশ্রয় নেয়ার এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ক্রমাগতভাবে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সপ্তাহ জুড়ে চলমান সংঘর্ষ অব্যাহত; আহত অর্ধশতাধিক

Update Time : ০২:৩২:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দু’গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সপ্তাহ জুড়ে চলমান সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

বুধবারও সারাদিন থেমে থেমে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষে অন্তত আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক।

রোহিঙ্গাদের দু’পক্ষের চলমান সংঘর্ষ থামাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। এই উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।

গত সপ্তাহজুড়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১নং ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’রোহিঙ্গা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও সংঘাত চলে আসছে। এসময় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই পর্যন্ত এক বাংলাদেশী সহ ৮জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে এক সাথে ৪জনের মৃত্যুর ঘটনায় উক্ত ক্যাম্পে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। এ কারণে বুধবার সকাল থেকে সারাদিন দু’পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় নতুন করে উভয় পক্ষে শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। সকাল ১০টার পর থেকে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এঘটনায় ভয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে আশ্রয় নেয়। এসময় রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায়।

রোহিঙ্গারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইয়াবা ব্যবসা, দোকান থেকে চাঁদাবাজি ও এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মুন্না গ্রুপ ও আনাছ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সকালে মুন্না গ্রুপের লোকজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান (রোহিঙ্গা নেতা) হাফেজ মো. জালাল আহমদ জানান, ‘গত এক সপ্তাহজুড়ে এখন ক্যাম্প জুড়ে আতংক বিরাজ করছে। ইয়াবার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে মুন্না গ্রুপ ও আনাছ বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। কিন্তু, গত ৪ অক্টোবর থেকে প্রকাশ্যে গোলাগুলি সহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি তৈরী হয়েছে।

রোহিঙ্গা নারী সোমা আক্তার জানান, ‘সকাল থেকে দিনভর থেমে থেমে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে মুন্না গ্রুপ। এসময় তাদের হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। উক্ত ঘটনায় মুন্না গ্রুপের ভয়ে এক হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জেও কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’

এদিকে, উক্ত ক্যাম্পে সকাল থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য, পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী টহল জোরদার করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৪জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশ। বিকালে উদ্ভূদ পরিস্থিতি পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ক্যাম্পে পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বৈঠক করেন। পরে ডিআইজ মো: আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মঙ্গলবার দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৪জন নিহত হওয়ার ঘটনায় কিছুটা উত্তেজনা বাড়লেও এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ক্যাম্পের ভিতরে আইনশৃংখলা বাহিনী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে আরো পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে গত মঙ্গলবার নিহত চার জনের মধ্যে নুরুল হুদা নামের একজন বাংলাদেশী রয়েছে। তাদের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানামারের রাখাইনে সেদেশের সেনাবাহিনীর অব্যাহত বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা। আশ্রয় নেয়ার এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ক্রমাগতভাবে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।