নিজস্ব প্রতিবেদক :

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে পড়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চার বছর পূর্তি হচ্ছে আজ।

২০১৭ সালে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে। ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এক অনন্যসাধারণ মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দেখতে ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী আবেগঘন বিষাদময় পরিবেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আন্তরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা, একাত্মবোধ ও উদারতায় একান্ত সান্নিধ্যে মিলিত হন। নির্যাতিত নারী ও শিশুর মুখে নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও বর্বরোচিত অত্যাচারের বর্ণনা শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাদেরকে সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসসহ এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন যে- মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন। মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য যুগিয়ে যাবে এবং তাতে কোন ব্যত্যয় ঘটবে না।

প্রধানমন্ত্রীর এই পরিদর্শনের ওপর ধারণকৃত সংবাদ-ভিডিও লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ফোর’ কর্তৃক প্রচারিত হয়। চ্যানেল ফোর-এর এশিয়ান করেসপন্টেন্ট মি. জনাথান মিলার তাঁর প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মমত্ববোধ, মানবিকতা, মহানুভবতা ও উদারনৈতিক মানসিকতার জন্য তাঁকে ‘Mother of Humanity’ অভিধায় অভিহিত করেন। যুক্তরাজ্যে ভিডিও-প্রতিবেদনটি সর্বমহলে সমাদৃত হয়।

কক্সবাজারের কুতুপালংসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা দুর্বিষহ জীবনযাপন থেকে তাদের পরিত্রাণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের যে সমস্যা, তার সমাধানে ভাসানচর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে মানবিক ও দায়িত্বশীল নীতির জন্য অনন্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিস্টিংকশন অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট’ প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার এবং ‘ইউএনএইচসিআর’ এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব রোহিঙ্গাকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এত দিন স্থানীয় মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে রাখার প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই তারা ক্ষুব্ধ। কক্সবাজারের মানুষ এখন রোহিঙ্গাদের শুধু প্রত্যাবাসনই নয়, তাদের (রোহিঙ্গা) প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। গত ২১ আগস্ট কক্সবাজার শহরে স্থানীয় বাসিন্দাদের এক সমাবেশে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধে গঠিত হয়েছে ‘কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি’। ওই সমাবেশে কক্সবাজার পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডের প্রত্যেক সমাজ ও মহল্লা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানকে সভাপতি ও হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুরকে সম্পাদক করে গঠিত হয়েছে এ কমিটি। আজ বুধবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চার বছর পূর্তিতে অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে এবং রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের ডাক দিয়ে অবস্থান কর্মসুচি দিয়েছে ওই কমিটি।

দিবসটি উপলক্ষে শিবিরের রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি পালনের ঘোষণা নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে