Dhaka ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সংকট এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
  • 44

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তায় অর্ধেক কমানোর ঘোষণা আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের আগে সংস্থাটি এই আহ্বান জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ৫ মার্চ লিখিতভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমানোর পরিকল্পনার কথা বাংলাদেশকে জানায়। সংস্থাটি বলেছে, জরুরি নতুন তহবিল পাওয়া না গেলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ আগামী এপ্রিল থেকে সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিস্তৃত পরিসরে রোডম্যাপ তৈরিতে জোর
সংস্থাটি বলেছে, আসন্ন মাস থেকে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে কমিয়ে মাসিক মাত্র ৬ ডলারে সীমিত করা হবে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা তথ্যানুসারে, ৯৫% রোহিঙ্গা পরিবার সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই সিদ্ধান্তের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাত্রায় চরম সংকট নেমে আসবে।

একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডব্লিউএফপি বলেছে, এই অর্থ সংকট সামগ্রিকভাবে তহবিলের ঘাটতির ফলে হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়।

এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও পরিষেবায় এরই মধ্যে যে ভয়াবহ স্বল্পতা চলছে, তহবিল ঘাটতি সেই সংকটে আরও বাড়িয়ে তুলবে। শরণার্থীদের মধ্যে যারা বৈষম্যের শিকার ও যারা আরও প্রান্তিক হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন, তারাও ঝুঁকির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রবীণ ব্যক্তিদের আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ডব্লিউএফপির (সহায়তার) ওপর নির্ভর। বাংলাদেশের সরকার তাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় চাকরির সুযোগও সীমিত।

ডব্লিউএফপির খাবারের বরাদ্দ কমানোর ঘোষণার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ছয় রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আয়েস বলেন, এই খাদ্য সহায়তা আমাদের জন্য তিনবেলার খাবার জোগাতে যথেষ্ট নাও হতে পারে। এমনটা হলে কিছু মানুষকে দৈনিক খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।

১৯ বছর বয়সী সুমাইয়া বলেন, সবাই জানতে চায়, তারা কীভাবে তাদের সন্তানদের খাওয়াবে। আমরা সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আপনার জন্য যদি এই খাবার কম হয়, তাহলে আমাদের জন্যও কম। আমরা সবাই মানুষ।

পরিচালক স্মৃতি সিংহ বলেন, দাতা দেশগুলোকে এ ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে পরিস্থিতি আর খারাপ না হয়। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করছে রোহিঙ্গারা। এরমধ্যে তাদের আর ভয়াবহ ক্ষুধা ও নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন ও ১৯৬৭ সালের প্রোটোকল অনুমোদন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের শ্রমবাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা শুধু টিকে থাকার ওপর নির্ভর না করে বরং চরম হতাশা ও ত্রাণ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সংকট এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

Update Time : ০৫:১৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তায় অর্ধেক কমানোর ঘোষণা আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের আগে সংস্থাটি এই আহ্বান জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ৫ মার্চ লিখিতভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমানোর পরিকল্পনার কথা বাংলাদেশকে জানায়। সংস্থাটি বলেছে, জরুরি নতুন তহবিল পাওয়া না গেলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ আগামী এপ্রিল থেকে সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিস্তৃত পরিসরে রোডম্যাপ তৈরিতে জোর
সংস্থাটি বলেছে, আসন্ন মাস থেকে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে কমিয়ে মাসিক মাত্র ৬ ডলারে সীমিত করা হবে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা তথ্যানুসারে, ৯৫% রোহিঙ্গা পরিবার সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই সিদ্ধান্তের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাত্রায় চরম সংকট নেমে আসবে।

একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডব্লিউএফপি বলেছে, এই অর্থ সংকট সামগ্রিকভাবে তহবিলের ঘাটতির ফলে হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়।

এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও পরিষেবায় এরই মধ্যে যে ভয়াবহ স্বল্পতা চলছে, তহবিল ঘাটতি সেই সংকটে আরও বাড়িয়ে তুলবে। শরণার্থীদের মধ্যে যারা বৈষম্যের শিকার ও যারা আরও প্রান্তিক হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন, তারাও ঝুঁকির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রবীণ ব্যক্তিদের আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ডব্লিউএফপির (সহায়তার) ওপর নির্ভর। বাংলাদেশের সরকার তাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় চাকরির সুযোগও সীমিত।

ডব্লিউএফপির খাবারের বরাদ্দ কমানোর ঘোষণার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ছয় রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আয়েস বলেন, এই খাদ্য সহায়তা আমাদের জন্য তিনবেলার খাবার জোগাতে যথেষ্ট নাও হতে পারে। এমনটা হলে কিছু মানুষকে দৈনিক খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।

১৯ বছর বয়সী সুমাইয়া বলেন, সবাই জানতে চায়, তারা কীভাবে তাদের সন্তানদের খাওয়াবে। আমরা সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আপনার জন্য যদি এই খাবার কম হয়, তাহলে আমাদের জন্যও কম। আমরা সবাই মানুষ।

পরিচালক স্মৃতি সিংহ বলেন, দাতা দেশগুলোকে এ ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে পরিস্থিতি আর খারাপ না হয়। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করছে রোহিঙ্গারা। এরমধ্যে তাদের আর ভয়াবহ ক্ষুধা ও নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন ও ১৯৬৭ সালের প্রোটোকল অনুমোদন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের শ্রমবাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা শুধু টিকে থাকার ওপর নির্ভর না করে বরং চরম হতাশা ও ত্রাণ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।