মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফিজ, খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় সবুজ-হলুদের সংমিশ্রণে চৈত্রের বাহারী মৌসুমী ফল বাঙ্গির সমারোহ। প্রায় সাড়ে তিন মাস নিবিড় পরিচর্যার পর মাঠে-মাঠে এখন চলছে বাঙ্গি ফল তোলার উৎসব। চাষিদের চোখমুখে এখন হাসির ঝিলিক। কোভিড-১৯ এর মহামারী, বিশ্ব জুড়ে মরণ ব্যাধীর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও কৃষকরা জীবনঝুঁকি নিয়ে রূপসা অঞ্চলে চালিয়েছে চাষাবাদের কার্যক্রম। এ কারণে বাঙ্গি আবাদের কিছুটা বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছিল। গত বছর বাঙ্গিচাষ করার পর মহামারী মরণ ব্যাধীর কারনে কৃষি শ্রমিক সংকট, বাজার ব্যবস্থা ধীরগতি ও নানান সমস্যা চাষিদের কিছুটা বিঘ্নতা পোহাতে হয়েছিল। তাই গেলোবারের ক্ষতি পোষাতে এবারও বাঙ্গিচাষ করছেন তারা।
রূপসার চাঁদপুর গ্রামের চাষি মোঃ ছাবের মোল্লা কাছ থেকে জানাযায়, তিনি প্রায় ১০ বছর যাবৎ বাঙ্গি চাষ করে আসছেন। সে এবার ১৪০ শতক নিজস্ব জমিতে বাঙ্গি ও অল্পস্বরে তরমুজ এবং খুবিই সীমিতহারে ‘সামপান’ চাষ করেছেন। এ চাষির ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আরও বলেন- তার এক বন্ধু বিদেশ থেকে ২০ পিচ সামপান জাতের বীজ এনেদেন। এ বছর সামপানের চাষ নতুন শুরু করেছি এবং বেশ ফলও হচ্ছে, এ ফলটা দেখতে তরমুজের মতই, খেতে বেশ স্বাদও আছে।
চাঁদপুর গ্রামের চাষি- মোঃ ইনামুল শেখ জানান, চাঁদপুর গ্রামের ১২০ শতক বর্গা নেওয়া জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। এ বছর সময় মত বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় বাঙ্গি ফলণ একটু কম, গাছে স্বেচপনি বেশি দিতে হয়েছে, তাতে খরচও অনেক বেশী হয়েছে। তারপরও আল্লাহ রহমতে ভালাই ফলন পাচ্ছি। জমির বর্গার টাকা পরিশোধ করেও আমার বেশ লাভ হবে বলে আশা রাখি। আমার এই জমিতে বাঙ্গির ফসল উঠার পর পরই এখানে পাটচাষ শুরু করবো।
কৃষকরা আরও জানায়, অন্য বছরের তুলনায় এবছর লাভের সংখ্যা একটু কম হবে, কারন- বৃষ্টি না পাওয়া এবং অধিক খরায় তাপ সৃষ্টির জন্য। দ্রুত রফতানি এবং লকডাউনের জন্য পরিবহন ব্যয় বাড়ায় খরচ পুষিয়ে অন্যত্র বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে অনেক ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় বাজারে মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো পেলেও তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সে দাম দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের বাঙ্গির দাম ৮০-৯০ টাকা, মাঝারির দাম ৬৫-৭০ টাকা এবং ছোটটির দাম ৫০-৫৫ টাকা।
এ ব্যাপরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন- অন্য বছরের তুলনায় রূপসা অঞ্চলে বাঙ্গির আবাদ অনেক ভাল ফলণ হবে। গত বছর উৎপাদন হার যা ছিল তা এবার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার-কৃষিবান্ধব সরকার, কৃষকদের গুরুত্ব, সময় মত পরামর্শ, বীজ প্রোমদনা ও সার দিয়েছি। ‘বাঙ্গির বাম্পার ফলন দেখে মন জুড়িয়ে যায়। যে কোনো সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত। কৃষকরা একটু পরিশ্রমী হলে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করে আরও বেশি লাভবান হতে পারেন।’ রূপসা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল উঠতে শুরু করেছে। পুরো বৈশাখ মাসজুড়ে কৃষদের ফসল তোলা আর বিক্রির মৌসুম। তাই কৃষকের মুখে হাসি।