টানা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। দীর্ঘ এই সময়ে রুশ আগ্রাসন ও ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় হয়েছে হাজারও মানুষের প্রাণহানি। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে সামরিক ও বেসামরিক সকল অবকাঠামো।
এমন অবস্থায় চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্রশিল্পে সহায়তার অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এশীয় পরাশক্তি এই দেশটির দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, চীন সরাসরি রাশিয়ার সামরিক শিল্পে সহায়তা দিচ্ছে—এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। কিয়েভের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ওলেহ ইভাশচেঙ্কো এই তথ্য জানান।
সোমবার ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ইউক্রইনফর্ম–এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ইভাশচেঙ্কো বলেন, “আমাদের কাছে নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে যে চীন রাশিয়ার অন্তত ২০টি সামরিক কারখানায় গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সরবরাহ করছে।”
চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। তারা দাবি করে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে এবং কোনও পক্ষকেই সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না। তবে ইউক্রেন বলছে, চীন আসলে রাশিয়াকে যুদ্ধে সহযোগিতা করছে।
ইভাশচেঙ্কোর ভাষ্যমতে, যন্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, বিশেষ রাসায়নিক উপাদান, বারুদ এবং রাশিয়ার সামরিক উৎপাদন কারখানার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ পাঠাচ্ছে চীন। তিনি আরও বলেন, “২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত পাঁচটি চীন-রাশিয়া যৌথ প্রকল্প ছিল এভিয়েশন খাতে—যেখানে যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম ও কারিগরি তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে।”
এছাড়া অন্তত ছয়বার বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের বড় চালান রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি, যদিও এর বিস্তারিত তিনি দেননি।
ইউক্রেনের দাবি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত রাশিয়ার ব্যবহৃত ড্রোনে যে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে, তার ৮০ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। এছাড়া চীন থেকে বিভিন্ন ছায়া প্রতিষ্ঠানের (শেল কোম্পানি) মাধ্যমে সরঞ্জাম আনছে রাশিয়া, যেগুলোর নাম বদলে ফেলা হয় এবং পণ্য চিহ্ন লুকিয়ে রাখা হয়।
এর আগে গত মাসেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বলেন, চীন রাশিয়াকে বারুদ ও ড্রোন তৈরির উপাদান দিচ্ছে এবং এমনকি চীনা নাগরিকরা রাশিয়ার ড্রোন উৎপাদনে সহায়তাও করছে।
তার এই অভিযোগের পর চীন সেটাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ইউক্রেন তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মূলত রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীন আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি তুলে ধরলেও, বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়ার জন্য অন্যতম প্রধান সরঞ্জাম সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে চীন।