ব্যাটে রান খরা চলছিল বেশ কিছু সময় ধরে। অবশেষে ঘুচল সেই খরা। অধিনায়কের রানে ফেরার দিনে দাপটে জিতে পয়েন্ট তালিকায়ও শীর্ষে পৌঁছে গেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর।

চার ম্যাচে তিন জয়ের পর আরসিবির পয়েন্ট এখন ছয়।

আজ শনিবারই ছিল এবারের আইপিএলের প্রথম দুপুরের ম্যাচ। আবুধাবির প্রচণ্ড গরমের মধ্যে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ছয় উইকেট হারিয়ে সর্বসাকুল্যে ১৫৪ রান তুলেছিল রাজস্থান রয়্যালস। ১৯.১ ওভারেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেল ব্য়াঙ্গালোর (১৫৮/২)। পাঁচ বল বাকি থাকতে জয় এলো আট উইকেটে। ম্যাচে অবশ্য জয়ের একক নায়ক নেই, দাবিদার তিনজন। বোলিংয়ে যুজভেন্দ্র চাহাল, ব্যাটে দেবদূত পাদিকাল ও বিরাট কোহলি নিজে। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন প্রথমজনই।

যদিও ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। অ্য়ারন ফিঞ্চ (৭ বলে ৮) এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন শ্রেয়াস গোপালের বলে। ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দিলে ডিআরএস নিয়েছিল রাজস্থান। তাতেই আসে উইকেট। ২৫ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ব্যাঙ্গালোরকে আর সমস্যায় পড়তে হয়নি। মসৃণভাবে দলকে টানলেন দেবদূত পাদিকাল ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

দ্বিতীয় উইকেটে এ দু’জনে ১৩.২ ওভারে যোগ করলেন ৯৯ রান। বাঁ-হাতি পাদিকালের ফিফটি এলো ৩৪ বলে। চলতি প্রতিযোগিতায় এটা তাঁর তৃতীয় অর্ধশতক। ৪৫ বলে ৬৩ করে যখন জোফরা আর্চারের বলে তিনি বোল্ড হলেন, ততক্ষণে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ব্যাঙ্গালোর। পাদিকালের ইনিংসে ছিল ছয়টি চার ও একটি ছয়ের মার।

এদিকে, এবারের আইপিএলে প্রথম তিন ম্যাচে রান পাননি ভারতীয় ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন বিরাট কোহলি। ফলে চাপ তো ছিলই। কিন্তু এদিন খোশ মেজাজেই দেখা গেল তাঁকে। ধীরেসুস্থে শুরু করে গতি বাড়ালেন পরে। ৪১ বলে পৌঁছলেন ফিফটিতে। পাদিকাল যখন ফিরলেন, তখন ২৫ বলে আরসিবির দরকার ছিল ৩১ রানের। এবি ডি ভিলিয়ার্সকে সঙ্গে নিয়ে বিরাট এরপর শাসন করতে লাগলেন মাঠ। হাঁকালেন চোখ জুড়নো একের পর এক শট। শেষ পর্যন্ত ৫৩ বলে অপরাজিত থাকলেন ৭২ রানে। তাঁর ইনিংসে ছিল সাতটি চার ও দুটো ছয়। অন্যপ্রান্তে ডিভিলিয়ার্স অপরাজিত থাকলেন ১০ বলে ১২ রানে।

তার আগে ব্যাট করতে নেমে যুজভেন্দ্র চাহালের ঘূর্ণিতেই মাঝপথে দিশা হারিয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস। ২৪ রানে তিন উইকেট নিয়েছিলেন আরসিবি লেগস্পিনার। এ নিয়ে এবারের প্রতিযোগিতায় তাঁর উইকেট সংখ্যা দাঁড়াল আট-এ।

অন্যদিকে, রাজস্থানের হয়ে সর্বাধিক ৪৭ করলেন মহীপাল লোমরোর। যিনি আজই প্রথমবার নামলেন এবারের আইপিএলে। এক সময় মনে হচ্ছিল- দেড়শোর এ পাশেই বুঝি থাকবে রাজস্থান। কিন্তু রাহুল তেওয়াটিয়া (১২ বলে ২৪) ও জোফরা আর্চার (১০ বলে ১৬) শেষ দিকে আগ্রাসী থাকায় লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে যায় স্টিভ স্মিথের দল।

ইনিংসের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল রাজস্থান। ৪.১ ওভারে ৩১ রানের মধ্যে ফিরে গিয়েছিলেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, জস বাটলার ও সঞ্জু স্যামসন। উইকেট নিয়েছিলেন যথাক্রমে ইসুরু উদানা, নবদীপ সাইনি ও যুজভেন্দ্র চাহাল। সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে ওঠা হয়নি।

এদিকে, টস হওয়ার সময় আবুধাবির তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তবে ম্যাচের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছিলেন মুখোমুখি হওয়া দুই অধিনায়ক। এই ম্য়াচ চিহ্নিত হচ্ছিল বিরাট কোহলি বনাম স্টিভ স্মিথের লড়াই হিসেবে। এই দু’জনেই বিশ্বক্রিকেটে এখন সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু রান পেলেন না স্মিথ। পাঁচ বলে পাঁচ রান করে বোল্ড হলেন ইসুরু উদানার বলে।

২৭ রানে পড়েছিল রাজস্থানের প্রথম উইকেট। সেটাই ৩১ রানে হয়ে দাঁড়াল তিন উইকেট। পর পর ফিরলেন জস বাটলার (১২ বলে ২২) ও সঞ্জু স্যামসন (৩ বলে ৪)। এই পরিস্থিতে থেকে রবিন উথাপ্পা ও মহীপাল লোমরোর ৩৯ রান যোগ করে ইনিংস মেরামতে নেমেছিলেন। কিন্তু চাহালকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উথাপ্পা (২২ বলে ১৭)। ৭০ রানে পড়ল রাজস্থানের চতুর্থ উইকেট।

সেখান থেকে রিয়ান পরাগের (১৮ বলে ১৬) সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৩৫ রান যোগ করেন লোমরোর। উদানার বলে ফেরেন পরাগ। লোমরোর ফিরলেন হাফ সেঞ্চুরির কাছে এসে। চাহালকে মারতে গিয়ে ৩৯ বলে ৪৭ করে আউট হলেন তিনি। ১১৪ রানে পড়েছিল ষষ্ঠ উইকেট। সেখান থেকে তেওয়াটিয়া ও আর্চার অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটে ৩.২ ওভারে যোগ করলেন ৪০ রান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে