সানোয়ার আরিফ রাজশাহীঃ

সাধারণত জৈষ্ঠকে বলা হয় মধুমাস। হরেক রকমের মৌসুমী ফলের সমারোহে পুরো মধুমাস থাকে ভরপুর। আর এই সময়ে আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহীতে নানা জাতের আমে ঠাসা থাকে বাজার।

তবে রাজশাহীতে বর্তমানে শীত মৌসুমেও নানারকম মৌসুমী ফল চাহিদা মেটাচ্ছে রাজশাহীবাসীর। বিশেষ করে থাইল্যাণ্ডের আম রাজশাহীর ফলের বাজার বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার সকালে রাজশাহীর সাহেব বাজারে ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি ফলের দোকানে থাইল্যাণ্ডের আম শোভা পাচ্ছে। দেখতে রাজশাহীর আম্রপালির মত হলেও এই আম সাইজে আম্রপালির চেয়ে বেশ বড়। আমটির বোটার দিক অনেকটা হলুদ রংয়ের ।দেখলেই যে কারো লোভনীয় নজর যাবে আমের দিকে। তমে দাম অনেকটা আকাশচুম্বি হওয়ায় ক্রয় করতে গিয়ে অনেক ক্রেতাকে দাম শুনেই ফিরে যেতে দেখা গেছে।

রাজশাহীর ফলের বাজারে বরই, জলপাই, আমলকি, সফেদা, কামরাঙ্গা, কমলালেবু, নাসপাতি, আপেল, ডালিম, আমড়াসহ হরেরক রকমের ফল তো আছেই। তবে বাজারে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ, ড্রাগন, কেসর, স্ট্রবেরিসহ নানান জাতের মৌসুমি ফলে দেখা মিলেছে।

এসব ফলে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই-সহ রয়েছে আরও অনেক ভিটামিন। এসব মৌসুমি ফল কেবল মুখরোচকই নয়; নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

রাজশাহীতে মৌসুমী ফলের সমারোহে ফলের বাজার সুশোভিত ।শীতকালে অন্য মৌসুমের তুলনায় ফলের দাম অনেকটা কম থাকায় চাহিদাও প্রচুর। ফলে অনেককে বাজারে হরেক রকমের এসব মৌসুমী ফল ক্রয় করতে দেখা গেছে। সঙ্গত কারণে বিক্রি বেশী হওয়ায় ফলবিক্রেতারাও বেজায় খুশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কমলা জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। কলম কুল ১০০ টাকা, আপেল কুল ৮০ টাকা, বাউ কুল ৮০ টাকা, দেশি বরই ১০০ টাকা। আঙ্গুর ২০০ টাকা , কালো আঙ্গুর ৩৫০ টাকা; আপেল জাত ভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা; ডালিম ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা; আনারস বড় জাতের প্রতি জোড়া ৮০ টাকা এবং মাঝারি আকারের ৬০ টাকা ও ছোট আকারের ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।আতা ২৮০ টাকা, নাসপাতি ৩০০ টাকা; কেসর ৫০ টাকা, মিষ্টি আলু ৭০ টাকা এবং সফেদা ১৮০ টাকা এবং ড্রাগন কেজি প্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়। জাম্বুরা সাইজ অনুসারে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। পেঁপে ৬০ টাকা, পেয়ারা ১০০ টাকা দরে আর স্ট্রবেরি ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ।

তবে রাজশাহীর বাজারে আসা আকর্ষণীয় থ্যাইল্যাণ্ডের আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। আম কিনতে আসা রাজশাহীর সাধুর মোড় এলাকার সরকারি চাকুরিজীবী নাফে আহম্মেদ চঞ্চল বলেন, ‘বরই, আপেলসহ বিভিন্ন ফল নিতে এসে আমের ওপর নজর পড়ল। দাম জিজ্ঞেস করতেই চোখ কপালে উঠে গেছে। তারপরও অফ মৌসুমের ফল ভেবে এক কেজি আম ক্রয় করলাম। দেখতে বেশ ভালো, তবে খেতে কেমন লাগবে সেটাই দেখার বিষয়।’

রিয়া জান্নাত , সাহেব বাজারের শাহাবুল ফলভাণ্ডারে গিয়েছিলেন ফল কিনতে। তারও একইভাবে নজর পড়ে আকর্ষণীয় আমের দিকে। তবে আমের দাম শুনেই চমকে উঠে চলে যান তিনি।

ফল ব্যবসায়ী কালু মিয়া বলেন, থাইল্যান্ডের ‘আমগুলো বেশ মজাদার। তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই ক্রয় করছে না। আবার যাদের টাকা তুলনামূলক বেশি আছে তারা ঠিকই এই আম নিচ্ছে।’

নগরীর শিরোইল এলাকার

কল বাবু সেই জাফর মিয়া বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে শিরোইল কাঁচাবাজারে তিনি ফলের ব্যবসা করছেন। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন বেচা-বিক্রি ভালো । করোনাতেও মানুষ প্রচুর পরিমাণে ফল কিনেছে।

তবে এখন ফলের দাম স্বাভাবিক আছে। তবে নতুন যে ফলগুলো বাজারে আসছে তা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে দাম একটু বেশি। তবে কিছু দিনের মধ্যে নতুন ফলের আমদানি বেশি হলে দাম কমে যাবে।
হেতেম খাঁ এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, রাস্তার ধারে মৌসুমী ফলের ব্যবসা করি। যখন যে ফলের চাহিদা তখন তাই বিক্রি করি। অন্য সময় কৃষি কাজ করে সময় কাটাই। এভাবেই সংসার চলে। এখন বাজারে শীতের ফলে ভরপুর। দাম ঠিক থাকায় বেচা-বিক্রিও ভালো হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে গ্রীষ্মের ফলে ভরে উঠবে বাজার। তখন সেই ফলগুলো বিক্রি করবো।

বাজারের মৌসুমী ফল কিনতে আসা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরিজীবী আব্দুর রহিম জানান , বাচ্চারা ফল খেতে খুব ভালোবাসে। শীত মৌসুমে পুষ্টিসমৃদ্ধ এসব ফল সারা বছর বাজারে পাওয়া যায় না। তাই মৌসুমী সব ফল বাচ্চাসহ বাড়ির সবাইকে খাওয়ানোর জন্য বাজারে আসা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে