মোঃ পাভেল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে বিপুল পরিমাণ নকল ঔষুধ ঔষুধ তৈরীর কাঁচামাল,ঔষুধ তৈরীর একটি মেশিন জব্দসহ ২জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে পুরস্কার প্রদান করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।
আজ রবিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১২ টায় আরএমপি সদরে দপ্তরে ভাল কাজের উৎসাহ প্রদানের লক্ষে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনার রাকিবুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল হাসানসহ অভিযানে অংশগ্রহণকরী সকল সদস্যদেরকে পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আরেফিন জুয়েল।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকায় নকল ঔষুধ তৈরির ওই কারখানায় (বাসায়) অভিযান চালায় হানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় বিপুল পরিমাণ নকল ঔষুধ, ঔষুধ তৈরীর কাঁচামাল, একটি মেশিন জব্দসহ কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম আনিস (৪৬) ও তার সহযোগী রবিউল ইসলাম (৩২) কে গ্রেফতার করা হয়।
পরদিন শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নকল ঔষুধের কারখানার সন্ধানের সার্বিক তথ্য জানাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দীক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে তিনি জানান, রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভদ্রা জামালপুর এলাকার নিজ বাড়িতেই আনিস নামের ওই ব্যক্তি গড়ে তুলেছিলেন নকল ঔষুধের কারখানা। বাড়িটির একটি ঘরে মেশিন বসিয়ে নামি-দামি কোম্পানির এন্টিবায়েটিক, জৌন উত্তেজক ও গ্যাসেরসহ নানা ধরনের নকল ঔষুধ তৈরী করতো সে। গত দুই বছর ধরে বিপুল পরিমাণ নকল ঔষুধ বাজারজাত করেছে তারা। যা এখনো রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- অভিযানে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ ৯৭ হাজার ৩০০ টাকার বিপুল পরিমাণ নকল ঔষুধ জব্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- স্কায়ার কোম্পানির নকল সেকলো ১৮৬৪ প্যাকেট (আনুমানিক মূল্য ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা) এস.বি-ল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল পাওয়ার-৩০ (মোড়কসহ) ৭৬৯ প্যাকেট ( মূল্য অনুমান-২ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০টাকা) এস.বি-ল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল পাওয়ার-৩০ (মোড়ক ছাড়া) ৫১৮৮ প্যাকেট (মূল্য অনুমান-১৮ লাখ ১৫ হাজার ৮০০ টাকা), এস.বি ল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল পাওয়ার-৩০ (সবুজ রং) ৬৫ পাতা (মূল্য অনুমান-২২ হাজার ৭৫০টাকা), এস.বিল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল পাওয়ার-৩০ (খোলা) ১৬ কেজি (মূল্য অনুমান-১০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা) নাভানা কোম্পানির নকল পিজোফেন ১৩৫৬ পাতা (মূল্য অনুমান-৯৪ হাজার ৯২০ টাকা), রিলায়েন্স কোম্পানির নকল ইলিক্সিম ১২৫ পাতা (মূল্য অনুমান-১৭ হাজার ৫০০ টাকা), রিলায়েন্স কোম্পানির নকল রিলাম ২২ পাতা (মূল্য অনুমান-১ হাজার ১০০ টাকা), স্কয়ার কোম্পানির নকল সেকলোর খালি মোড়ক ০৬ কার্টন যার আনুমানিক মূল্য ৩০ হাজার টাকা। এসময় ভেজাল ঔষুধ তৈরির মেশিন বিলিস্টারও জব্দ করা হয়। এই মেশিনের আনুমানিক মূল্য ২২ লাখ টাকা, কমপ্রেশার মেশিন মূল্য-২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এদিকে আটকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের এক পর্যায়ে অবৈধ ঔষুধ তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে প্রশাসনের লোকজন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকেদের মাসোয়ারা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন নকল এই কারখানার মালিক আনিস। তিনি জানান- সাংবাদিক, থানা ও স্থানীয় ফাঁড়িকে ম্যানেজ করেই তার নকল ঔষুধের কারখানাটি পরিচালিত হতো। ২ হাজার, ৩ হাজার , ৫ হাজার আর থানায় ১০ থেকে ১২ হাজার এভাবে সব মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা দেয়া লাগতো বলেও তিনি জানান।
আর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারখানা মালিক আনিস জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা হতে কাঁচামাল এনে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত নকল ঔষুধ তৈরি করতো। পরবর্তীতে তার তৈরি নকল ঔষুধ বিভিন্ন ফার্মেসীতে পৌঁছিয়ে দিতো এবং দেশের বিভিন্ন স্থানেও সরবরাহ করতো ।