সবারই মিষ্টির প্রতি ভালোবাসা আছে! তার ওপর যদি হয় রসগোল্লা,তাহলে তো  কোন কথাই নেই। বিশেষ করে বাঙালীর বাঙালীয়ানার পরিচয় কিন্তু রসগোল্লার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। রসে টইটুম্বুর এই রসগোল্লা কিন্তু খাদ্য রসিক বাঙালীদের স্বাদকে একেবারে বদল করে দিয়েছে। এই রসগোল্লা খেলে শুধু উপকৃতই হবেন না, ক্ষতিরও সম্মুখিন হতে হবে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক রসগোল্লার উপকার এবং ক্ষতি সম্পর্কে-

উপকারঃ
১) যেকোনও যন্ত্রণা উপশমে গরম রসগোল্লা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত, যা গাঁট ও বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন-কে এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গরম রসগোল্লা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সর্দি, কাশি কমায়।

৩) ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ডাইটিশিয়ানদের মতে, রসগোল্লা হাই প্রোটিন ডায়েট। রসগোল্লার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে

৪) হার্টের যত্নে রসগোল্লায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার ফলে এটি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ফলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায় এবং হার্ট ভালো থাকে।

৫) কিডনি স্টোন হতে না দেওয়া রসগোল্লা ইউরিনারি সিস্টেম এর কর্মক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। প্রস্রাবের সময় যাদের জ্বলন হয় তাদের রসগোল্লা খাওয়া উচিত।

৬) ক্যান্সার প্রতিরোধে গরম রসগোল্লাতে উচ্চমানের প্রোটিন থাকার ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার বা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৭) দাঁত ও হাড়ের যত্ন নিতে রসগোল্লায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন, যা হাড় ও দাঁতকে সুস্থ রাখতে এবং ক্ষত রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন ডি দাঁতের ক্যাভিটি রোধ করতে সহায়ক।

তবে প্রতিদিন রস গোল্লা খাবেন? সেটা বুঝে শুনেই খেতে হবে। আপনার শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে কতটা লাভ আর ক্ষতি। যে চিনি দিয়ে রস গোল্লা বানানো হয় সেই চিনি কিন্তু মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আসুন এই বিষয়টিও আমরা জেনে নিই-

অনেকেই চিনি ছাড়া খেতে পারেন না? প্রতিদিনের খাবারে অন্তত একটা মিষ্টি অবশ্যই চাই। জানেন কি এতেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। যে খাবারে বেশি চিনি, সেই খাবারেই পুষ্টি কম। টাইপ ২ ডায়াবিটিস থেকে অ্যাকনে, হৃদরোগ- সবের পিছনেই রয়েছে চিনি, এমনটা বললে ভুল হবে না। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে প্রভাব পড়বে হৃদযন্ত্রে। সতর্ক করছেন চিকিসৎক থেকে পুষ্টিবিদ।

বেশি পরিমাণে চিনি খেলে শরীরের ইনসুলিন হরমোন তা গ্রহণ করতে পারে না। শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ফ্যাট হিসেবে মজুত হয়। অতিরিক্ত ফ্যাটে মেটাবলিক ডিসফাংশন এবং শরীরে এর ফলে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স তৈরি হয়। শুধু অতিরিক্ত ওজন নয় সেই সঙ্গে বাড়ে হদরোগের সম্ভাবনা ও। শরীরে  চিনি বেশি পরিমাণে গেলে হাই অ্যাবডমিনাল ফ্যাট তৈরি হয়। ক্ষতিকারক কোলেস্টরল উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ে। যেগুলি রক্ত চলাচলে সমস্যা তৈরি করে । ব্লাড ভেসেলে রক্ত জমে। শরীরে রক্ত জমাটের সম্ভাবনা তৈরি করে। হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপে ও প্রভাব পড়ে।

ডায়েটে অতিরিক্ত চিনি থাকলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যকলাপে হাইপারটেনশনের প্রভাব পড়ে। হৃদযন্ত্র আগের তুলনায় দ্রুত রক্ত পাম্প করা শুরু করে। ব্লাড ভেসেলের ক্ষতি হয়। বাড়ে স্ট্রোকের সম্ভাবনা। এই প্রসঙ্গে চিকিসৎক দেবব্রত রায় বলেন, চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। ডায়াবিটিসের সম্ভাবনাও বাড়ে। প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রে। তাই করোনা বা অন্য সংক্রামক রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ডায়াবিটিস থাকলেই ইনসুলিন তৈরির পরিমাণ কমে যায়। করোনারি ব্লকেজের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও বাড়বে। হৃদপেশি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাম্পিং ফাংশনে সমস্যা হয়ে হার্ট ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে।

চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ সোমা চক্রবর্তী বলেন, ‘চিনি বলতে যদি চোখে দেখা যায় সে রকম চিনি অর্থাৎ সকালে চায়ের সঙ্গে খাওয়া চিনিটা ধরি, সেক্ষেত্রে ক্ষতি তো হবেই। তবে তা পরিমাপ করে খাওয়ার একটা প্রবণতা মানুষের রয়েছে। কিন্তু যে চিনি চোখে দেখা যাচ্ছে না, অর্থাৎ কুকিজ, বিস্কুট, পেস্ট্রি জাতীয় খাবারে যে চিনি রয়েছে, তা আরও বেশি ক্ষতিকর। কিন্তু সুগার ৬৩ রকমের। তাই মল্টোজ, ডেক্সট্রোজ এই যে কোনও ধরনের সুগার শরীরের মধ্যে বেশি পরিমাণে গেলেই তা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। ফলে হাইপারটেনশনের সম্ভাবনা। তাই অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়বেই। অন্য রোগেরও ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই চিনি বর্জন করে ফাইবার জাতীয় খাবার আরও বেশি করে ডায়েটে রাখতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে