মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১৪ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
দেশটিতে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এক দিনে এত মৃত্যু আর দেখা যায়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
শনিবার (২৭ মার্চ) মিয়ানমার জুড়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এদিন সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করে দেশটির সেনাবাহিনী।
দিবসটিকে কেন্দ্র করে আগের দিন বিক্ষোভকারীদের মাথা ও পিঠে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই হুমকি উপেক্ষা করেই রাজপথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। তখনই তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভের পর শনিবার সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে। দেশটির স্বশস্ত্র বাহিনী দিবসে এমন নৃশংস ঘটনাটি ঘটলো। সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালায়সহ বেশ কিছু শহরে এ সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৩ বছরের এক শিশুসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে মান্দালায়তে। ইয়াঙ্গুনে নিহত হয়েছে ২৭ জন বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যম। দেশটিতে চলমান এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৪৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য।
এক প্রতিবেদনে এএপিপি বলছে, নিহতদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশেই তাদের গুলি করা হয়েছে বলে সন্দেহ জোরালো হচ্ছে। নিহতদের প্রায় ৯০ শতাংশই পুরুষ। আর ৩৬ শতাংশের বয়স ২৪ বছরের কম।
সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তা কঠোরভাবে দমন করতে শুরু করে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় ইয়াঙ্গুনে গুলিতে ৭ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মান্দালয়ে গুলিতে প্রাণ গেছে ১৩ জনের। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
ইনসেইন শহরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। সেখানে নিহতদের মধ্যে একজন দেশটির অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সাগাইং অঞ্চল, লাশিও শহর, বাগো এলাকায়ও বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে কেন্দ্র করে জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, দেশের জনগণকে রক্ষা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী। গণতন্ত্রের সুরক্ষায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুরো জাতির সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে চায়। যে দাবিতে নৃশংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে, যার ফলে দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিনষ্ট হচ্ছে, সেটা সঠিক দাবি নয়।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে।
সেনাবাহিনী সুচি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। জান্তা শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দিন দিন জোরালো হচ্ছে। সঙ্গে দমন-পীড়নও জোরদার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।