Dhaka ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“মালদহে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে বিজ্ঞানমঞ্চসহ ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন”

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • ১৬১ Time View

অনুকূল বিশ্বাস, মালদহ জেলার প্রতিনিধি: পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পরিবেশ ধ্বংস করে নগরায়নের প্রচেষ্ঠা বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছে। শহর ও শহরতলীর জলাশয় ভরাট করে, ছোটো বড় পুকুর বুজিয়ে এবং বিশালাকার পুরনো বৃক্ষছেদনের মধ্য দিয়ে এই নগরায়ন বর্তমানে উৎসবের চেহারা নিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের পরাকাষ্ঠ নগরায়নের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলাতেও বর্তমানে সেই সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। মালদহ মফস্বল শহর হলেও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব আশেপাশের অন্যান্য জেলা থেকে অনেক গুণ বেশি। আয়তনের দিক থেকে মালদা শহর খুবই ছোট তবুও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিচার করে এখানে তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যা অনেক বেশি।
স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসতি তৈরির জমির চরম সংকট। বাড়ি তৈরির জমি এখানে মহামূল্যবান। এই মহামূল্যবান জমির সুবাদে একশ্রেণির প্রোমোটার ও অসাধু ব্যবসায়ী শহর ও শহরতলীর জলাশয়, পুকুর, জঙ্গল ও ছোট বড় বৃক্ষছেদন করে সেখানে অট্টালিকা তৈরি কাজ একরকম প্রশাসনের মদতেই চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনিতেই মালদহ শহর আয়তনে অতি ক্ষুদ্র ‌। শহরের রাস্তাঘাট জনসংখ্যার নিরিখে তেমন প্রশস্ত নয়।সরু রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপন করে পরিবেশ রক্ষায় মতো পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। তারমধ্যে সুযোগ পেলেই এইসব অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রোমোটাররা নিয়মিত তাঁদের অসাধু উদ্দেশ্য সাধন করে চলেছেন। পুকুর ও জলাশয় গুলো ভরাট হওয়ার ফলে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রত্যেকটি পাড়ায় জল জমে যায়। সেই জল যন্ত্রণা মালদা শহরবাসীর দৈনন্দিন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা একদমই ঠিক না হওয়ার ফলে সেই জল দ্রুত বাইরে বেরোতে পারে না। ফলস্বরূপ বর্ষাকালে দিনের পর দিন বিভিন্ন ওয়ার্ড জলের তলায় ডুবে থাকে।


এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে তদবির করে এসেছেন কিন্তু কোনো সুফল পাননি। দিন দিন পরিস্থিতি শহরবাসী সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মালদা বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগে জেলার ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে
“পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন” গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ ৯ই জুলাই ২০২১, সেই উপলক্ষে মালদা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেইসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে Rally করে মালদহ জেলার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের(DFO) অফিসের সামনে জমায়েত হন। প্রথমে সেখানে পথসভা হয় এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ বাঁচাও বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এদিন সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলার সম্পাদক শ্রী সুনীল দাস, কে. পি. সিং, মনোরঞ্জন দাস, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মালদা জেলার রক্ত আন্দোলনের আহ্বায়ক শ্রী অনিল সাহা, মালদা অনুভব ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি শ্রী গৌতম দাস ,সহকার পরিবেশ রক্ষা সংস্থার পক্ষে পুণ্যশ্লোকবাবু ও তন্ময় দাস, শতধারা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিনিধি শ্রী সমরেশ ঘোষ, জাগরণ সংস্থার তরফে শুভজিৎ দাস, নতুন প্রজন্ম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে হারাধন সাহা ,ক্ষুদ্র প্রয়াস স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা,
নবকল্লোল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা,উড়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বহু কর্মকর্তা ও সদস্য- সদস্যারা।

সকলের বক্তব্য শেষে মালদা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক শ্রী সুনীল দাসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল মালদা বিভাগীয় বনাধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। সেই পাঁচ দফা দাবী হল:
১) নিয়মিত বৃক্ষরোপণ ও তার সংরক্ষণ করতে হবে।
২) বেআইনি বৃক্ষছেদন বন্ধ করতে হবে ও দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
৩) যেকোনো মূল্যে মালদহের আম বাগান গুলি রক্ষা করতে হবে।
৪) জেলার জলাভূমিসহ অন্যান্য নিম্নভূমিতে উপযুক্ত বনভূমি গড়ে তুলতে হবে।
৫) হবিবপুর ব্লকের হিজলবনটিকে রক্ষা করতে হবে ও দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এই বাদাবনটিকে ন্যাশনাল লেক হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আধুনিক সভ্যতা মানুষকে যেমন যন্ত্রে পরিণত করেছে তেমনি মুষ্টিমেয় সেই মানুষ নামক যন্ত্র নিজের স্বার্থসিদ্ধি চরিতার্থে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে পৃথিবীকে মানুষের বাসের অযোগ্য করে তুলছেন। তাই তো পরিবেশ বিরোধী সেসব কাজ বন্ধ করার জন্য সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জেগে ওঠার সময় এসেছে। বিজ্ঞান মঞ্চ,মালদহ শাখা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো একজোট হয়ে সেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তাঁদের পরিবেশ বাঁচানোর এই সৎ প্রচেষ্টায় অধিকাংশ মালদহবাসীর পূর্ণ সমর্থণ আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

“মালদহে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে বিজ্ঞানমঞ্চসহ ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন”

Update Time : ১২:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

অনুকূল বিশ্বাস, মালদহ জেলার প্রতিনিধি: পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পরিবেশ ধ্বংস করে নগরায়নের প্রচেষ্ঠা বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছে। শহর ও শহরতলীর জলাশয় ভরাট করে, ছোটো বড় পুকুর বুজিয়ে এবং বিশালাকার পুরনো বৃক্ষছেদনের মধ্য দিয়ে এই নগরায়ন বর্তমানে উৎসবের চেহারা নিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের পরাকাষ্ঠ নগরায়নের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলাতেও বর্তমানে সেই সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। মালদহ মফস্বল শহর হলেও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব আশেপাশের অন্যান্য জেলা থেকে অনেক গুণ বেশি। আয়তনের দিক থেকে মালদা শহর খুবই ছোট তবুও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিচার করে এখানে তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যা অনেক বেশি।
স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসতি তৈরির জমির চরম সংকট। বাড়ি তৈরির জমি এখানে মহামূল্যবান। এই মহামূল্যবান জমির সুবাদে একশ্রেণির প্রোমোটার ও অসাধু ব্যবসায়ী শহর ও শহরতলীর জলাশয়, পুকুর, জঙ্গল ও ছোট বড় বৃক্ষছেদন করে সেখানে অট্টালিকা তৈরি কাজ একরকম প্রশাসনের মদতেই চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনিতেই মালদহ শহর আয়তনে অতি ক্ষুদ্র ‌। শহরের রাস্তাঘাট জনসংখ্যার নিরিখে তেমন প্রশস্ত নয়।সরু রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপন করে পরিবেশ রক্ষায় মতো পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। তারমধ্যে সুযোগ পেলেই এইসব অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রোমোটাররা নিয়মিত তাঁদের অসাধু উদ্দেশ্য সাধন করে চলেছেন। পুকুর ও জলাশয় গুলো ভরাট হওয়ার ফলে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রত্যেকটি পাড়ায় জল জমে যায়। সেই জল যন্ত্রণা মালদা শহরবাসীর দৈনন্দিন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা একদমই ঠিক না হওয়ার ফলে সেই জল দ্রুত বাইরে বেরোতে পারে না। ফলস্বরূপ বর্ষাকালে দিনের পর দিন বিভিন্ন ওয়ার্ড জলের তলায় ডুবে থাকে।


এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে তদবির করে এসেছেন কিন্তু কোনো সুফল পাননি। দিন দিন পরিস্থিতি শহরবাসী সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মালদা বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগে জেলার ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে
“পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন” গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ ৯ই জুলাই ২০২১, সেই উপলক্ষে মালদা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেইসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে Rally করে মালদহ জেলার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের(DFO) অফিসের সামনে জমায়েত হন। প্রথমে সেখানে পথসভা হয় এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ বাঁচাও বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এদিন সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলার সম্পাদক শ্রী সুনীল দাস, কে. পি. সিং, মনোরঞ্জন দাস, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মালদা জেলার রক্ত আন্দোলনের আহ্বায়ক শ্রী অনিল সাহা, মালদা অনুভব ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি শ্রী গৌতম দাস ,সহকার পরিবেশ রক্ষা সংস্থার পক্ষে পুণ্যশ্লোকবাবু ও তন্ময় দাস, শতধারা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিনিধি শ্রী সমরেশ ঘোষ, জাগরণ সংস্থার তরফে শুভজিৎ দাস, নতুন প্রজন্ম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে হারাধন সাহা ,ক্ষুদ্র প্রয়াস স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা,
নবকল্লোল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা,উড়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বহু কর্মকর্তা ও সদস্য- সদস্যারা।

সকলের বক্তব্য শেষে মালদা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক শ্রী সুনীল দাসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল মালদা বিভাগীয় বনাধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। সেই পাঁচ দফা দাবী হল:
১) নিয়মিত বৃক্ষরোপণ ও তার সংরক্ষণ করতে হবে।
২) বেআইনি বৃক্ষছেদন বন্ধ করতে হবে ও দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
৩) যেকোনো মূল্যে মালদহের আম বাগান গুলি রক্ষা করতে হবে।
৪) জেলার জলাভূমিসহ অন্যান্য নিম্নভূমিতে উপযুক্ত বনভূমি গড়ে তুলতে হবে।
৫) হবিবপুর ব্লকের হিজলবনটিকে রক্ষা করতে হবে ও দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এই বাদাবনটিকে ন্যাশনাল লেক হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আধুনিক সভ্যতা মানুষকে যেমন যন্ত্রে পরিণত করেছে তেমনি মুষ্টিমেয় সেই মানুষ নামক যন্ত্র নিজের স্বার্থসিদ্ধি চরিতার্থে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে পৃথিবীকে মানুষের বাসের অযোগ্য করে তুলছেন। তাই তো পরিবেশ বিরোধী সেসব কাজ বন্ধ করার জন্য সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জেগে ওঠার সময় এসেছে। বিজ্ঞান মঞ্চ,মালদহ শাখা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো একজোট হয়ে সেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তাঁদের পরিবেশ বাঁচানোর এই সৎ প্রচেষ্টায় অধিকাংশ মালদহবাসীর পূর্ণ সমর্থণ আছে।