Dhaka ০৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাছের বাজারে আগুন, রোজার পরও থামেনি ঊর্ধ্বগতি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:২৬:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৩ Time View

রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি থাকলে ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে যেন সবকিছুর দাম তরতর করে বাড়ছে। তেমনি রাজধানীর মাছের বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের জীবন ওষ্ঠাগত। পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, মলা, রুইসহ বেশিরভাগ মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও রাজধানীর মাছের বাজারে ঈদুল ফিতরের আমেজ রয়ে গেছে। ঈদে মাংস-পোলাওয়ের পর মাছের চাহিদা বাড়ায় অধিকাংশ মাছের দাম এখনো বেশ চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা থাকলেও সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় বেশিরভাগ মাছের দাম বেড়ে গেছে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর দেশি চিংড়ি বর্তমানে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। চাষের চিংড়িও বেড়ে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা হয়েছে। টেংরা মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, যেখানে আগের দাম ছিল ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।

শুধু চিংড়ি কিংবা টেংরা নয়, দেশি শিং ও শোল মাছের দামেও লেগেছে আগুন। শিং ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পুঁটি মাছও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বড় আকৃতির রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো সাধারণ চাষের মাছও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে এসে মাছের দাম শুনেই অনেক সময় না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে। রামপুরা বাজারে কথা হয় গৃহিণী নারগিস বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন দাম দিয়ে সপ্তাহে একবারও মাছ কেনা কষ্টকর। এখন মাছ খাওয়া যেন বিলাসিতা।

নারগিস বেগম বলেন, বাসায় বাচ্চারা ছোট মাছ খেতে চায়, কিন্তু বাজারে এসে দেখি পাবদা বা শিংয়ের দাম শুনে কেবল আফসোসই করা যায়। বাধ্য হয়ে ডিম বা শাকসবজি দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।

রামপুরা বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজার সময় যেভাবে বাজারে দাম বেড়েছিল, ভেবেছিলাম ঈদের পর কিছুটা কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উল্টো দাম আরও বেড়েছে। মাছ, মাংস কিছুই সাধ্যের মধ্যে নেই।

বনশ্রী এ ব্লক বাজারে দেখা যায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আবদুল হাকিমকে। তিনি বলেন, এখন প্রতিবার বাজারে এলেই চিন্তা করতে হয়—কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনব। আগের মতো ৩/৪ কেজির রুই কেনা এখন যেন স্বপ্ন। অথচ ছোট থেকে বড় হয়েছি এই মাছে-ভাতেই।

বাজারের এমন পরিস্থতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এসব ভোক্তারা।

তবে মাছ বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর ঢাকায় মাছের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু সরবরাহ ঠিকমতো না থাকায় দাম বেড়েছে। বাড্ডা কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, ঈদের পরে মানুষ মাছের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু সেই তুলনায় এখনো সরবরাহ কম। আবার পরিবহন খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে।

বনশ্রী এলাকার মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে মাছের বড় একটা অংশই আসে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর এলাকা থেকে। কিন্তু ঈদের পর এখন পর্যন্ত ওইসব এলাকা থেকে খুব বেশি মাছ আসছে না। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

মাছের বাজারে আগুন, রোজার পরও থামেনি ঊর্ধ্বগতি

Update Time : ০৫:২৬:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি থাকলে ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে যেন সবকিছুর দাম তরতর করে বাড়ছে। তেমনি রাজধানীর মাছের বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের জীবন ওষ্ঠাগত। পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, মলা, রুইসহ বেশিরভাগ মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও রাজধানীর মাছের বাজারে ঈদুল ফিতরের আমেজ রয়ে গেছে। ঈদে মাংস-পোলাওয়ের পর মাছের চাহিদা বাড়ায় অধিকাংশ মাছের দাম এখনো বেশ চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা থাকলেও সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় বেশিরভাগ মাছের দাম বেড়ে গেছে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর দেশি চিংড়ি বর্তমানে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। চাষের চিংড়িও বেড়ে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা হয়েছে। টেংরা মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, যেখানে আগের দাম ছিল ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।

শুধু চিংড়ি কিংবা টেংরা নয়, দেশি শিং ও শোল মাছের দামেও লেগেছে আগুন। শিং ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পুঁটি মাছও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বড় আকৃতির রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো সাধারণ চাষের মাছও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে এসে মাছের দাম শুনেই অনেক সময় না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে। রামপুরা বাজারে কথা হয় গৃহিণী নারগিস বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন দাম দিয়ে সপ্তাহে একবারও মাছ কেনা কষ্টকর। এখন মাছ খাওয়া যেন বিলাসিতা।

নারগিস বেগম বলেন, বাসায় বাচ্চারা ছোট মাছ খেতে চায়, কিন্তু বাজারে এসে দেখি পাবদা বা শিংয়ের দাম শুনে কেবল আফসোসই করা যায়। বাধ্য হয়ে ডিম বা শাকসবজি দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।

রামপুরা বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজার সময় যেভাবে বাজারে দাম বেড়েছিল, ভেবেছিলাম ঈদের পর কিছুটা কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উল্টো দাম আরও বেড়েছে। মাছ, মাংস কিছুই সাধ্যের মধ্যে নেই।

বনশ্রী এ ব্লক বাজারে দেখা যায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আবদুল হাকিমকে। তিনি বলেন, এখন প্রতিবার বাজারে এলেই চিন্তা করতে হয়—কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনব। আগের মতো ৩/৪ কেজির রুই কেনা এখন যেন স্বপ্ন। অথচ ছোট থেকে বড় হয়েছি এই মাছে-ভাতেই।

বাজারের এমন পরিস্থতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এসব ভোক্তারা।

তবে মাছ বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর ঢাকায় মাছের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু সরবরাহ ঠিকমতো না থাকায় দাম বেড়েছে। বাড্ডা কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, ঈদের পরে মানুষ মাছের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু সেই তুলনায় এখনো সরবরাহ কম। আবার পরিবহন খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে।

বনশ্রী এলাকার মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে মাছের বড় একটা অংশই আসে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর এলাকা থেকে। কিন্তু ঈদের পর এখন পর্যন্ত ওইসব এলাকা থেকে খুব বেশি মাছ আসছে না। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।