মশা মারতে এবার ঢাকার জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়তে শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
এই মধ্যে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে দশটি জলাশয়ে হাজার দশেক ব্যাঙাচি অর্থাৎ ব্যাঙের পোনা ছাড়া হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, “ব্যাঙের পোনাগুলোকে জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, আমরা আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই পোনা পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রূপান্তরিত হবে তখন তারা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে শুরু করবে”।
“মূল পরিকল্পনা হচ্ছে এই ব্যাঙাচি পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ হবে এবং তারা বংশবিস্তার করবে, এবং মশার লার্ভা খেয়ে ক্রমে তারা মশার বিস্তার ঠেকিয়ে দেবে।”
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাঙের পোনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে এর আগেও নানা অভিনব কর্মসূচী হাতে নিতে দেখা গেছে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে। এর আগে জলাশয়ে গাপ্পি মাছ, হাঁস, তেলাপিয়া মাছ ইত্যাদি ছেড়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। যদিও কোন উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে শোনা যায়নি এর আগে।
কীভাবে মশা দমন করবে ব্যাঙ:
এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন মূলত চারভাবে মশা নিধন করে—মশার জন্মের উৎস ধ্বংস করে, জৈবিক পদ্ধতিতে মানে অন্য কোন প্রাণীকে দিয়ে লার্ভা নির্মূলের ব্যবস্থা করে, ওষুধ ছিটিয়ে এবং ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছিটিয়ে।
এর মধ্যে জৈবিক পদ্ধতি হচ্ছে, খাল, জলাশয়, নালাসহ বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে অন্য প্রাণী বিচরণের ব্যবস্থা করা। যাতে ওই সব প্রাণী যারা ছোটখাট পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে, তাদের খাবারের তালিকায় মশা ও তাদের লার্ভা যুক্ত হলে, মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। ফলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই মশা নিধন হবে।
বদ্ধ জলাশয়ে পানিপ্রবাহ খুব একটা না থাকায় এসব স্থানে দ্রুত মশার বংশবিস্তার ঘটে।
নূরী বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণে সরকারি জলাশয়ের সংখ্যা ১০টি, তার সব কটিতেই ব্যাঙ ছাড়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে সফল হলে পরবর্তীতে বেসরকারি জলাশয়েও ব্যাঙ ছাড়া হবে।
মশা মারতে গিয়ে ব্যাঙ বাঁচবে তো?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার বলেছেন, “পরীক্ষামূলকভাবে যে কোন কিছুই করা যেতে পারে। তবে গবেষক হিসেবে আমি মনে করি ঢাকা শহরের পানি প্রচণ্ড দূষিত। এতে ব্যাঙের পোনা বেঁচে না থাকারই কথা। আর যদি বেঁচেও থাকে তার পরে সেগুলো মশা মারার জন্য কতটা সক্ষম থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।”
তিনি বলেন, কার্যকরভাবে মশক নিধনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে কার্যক্রম নিলে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।
মশা মারতে যত অভিনব উদ্যোগ:
মশা মারতে কামান দাগার প্রবাদ অনেক পুরনো। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মশার উপদ্রব এমনই বেড়েছে যে এ থেকে রেহাই পেতে অনেক ধরণের চেষ্টাই করছেন নগরবাসী। বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাসরিন মুন্না বলেছেন, “বাসায় তো সব জানালায়, ভেন্টিলেটরে এবং মূল দরজা ও বারান্দার দিকের দরজাগুলোতে নেট লাগিয়েছি।
কিন্তু অফিসে কী করা যাবে? সেখানে তো এয়ারকন্ডিশনার চলে মানে হচ্ছে দরজা জানালা বন্ধ থাকে। কিন্তু তবু মশা আছেই, আর কামড়াচ্ছেই।”
মুন্না ধানমন্ডি এলাকাতে কাজ করেন। অনলাইন বুটিক ব্যবসার সাথে জড়িত ইশরাত জাহান থাকেন ঢাকার শংকরে।
তিনি বলছেন, “বাড়ি এবং কারখানা দুই জায়গাতেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। সারাক্ষণ ধূপ জ্বালিয়ে রাখছি, হাতে মশা মারার ব্যাট থাকছে, কিন্তু নিস্তার পাচ্ছি না।”
মশার বংশ বিস্তার গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিগত বছরের তুলনায় এবার ঢাকায় মশার ঘনত্ব চার গুণ বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশা মারার জন্য বিভিন্ন অভিনব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।
২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঢাকার নর্দমাগুলোতে গাপ্পি মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। গাপ্পি মাছগুলো এখনো বেঁচে আছে কি না এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য নেই দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। ২০২০ সালে ঢাকার তিনটি জলাশয়ে ছাড়া হয়েছিল তেলাপিয়া মাছ এবং হাঁস। হাঁসগুলোর মধ্যে কয়েকটি মারা গেছে।
তবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূরী বলেছেন, “যে তিনটি জলাশয়ে হাঁস ও তেলাপিয়া মাছ ছাড়া হয়েছে তার একটি হচ্ছে ধানমন্ডি লেক। এবং সেখানে ‘প্রোগ্রেস’ ভালো। পানিতে লার্ভা এখন অনেক কম, মশার উপদ্রবও কমছে।”
তিনি বলেছেন, মশা নিধনের জন্য সব ধরণের চেষ্টাই করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা