Dhaka ০৩:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মধ্যরাত থেকে ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:১৯:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ১১ Time View

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল (১৪ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাত) থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দেশে এ বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে সোমবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাত থেকে।

গ্রীষ্মের এই সময়টি সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশের প্রধান প্রজননকাল। মাছগুলো ডিম ছাড়ে উপকূলবর্তী এলাকায়। এই সময়ে যদি অধিক হারে মাছ ধরা হয়, তাহলে প্রজনন ব্যাহত হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে মাছের উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এ কারণেই ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রগামী সব প্রকার মাছ ধরায় প্রতি বছর গ্রীষ্মকালীন এই নিষেধাজ্ঞা চালু করে।

পটুয়াখালী জেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, এই সময়ে সামুদ্রিক মাছগুলো নিরাপদে ডিম ছাড়ে ও বংশবৃদ্ধি করে। দুই দেশের সমন্বিত এই নিষেধাজ্ঞা বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার একজন জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা হলেই আমাদের কাজ বন্ধ। সরকার বলে চাল দেবে, কিন্তু অনেক সময় পাই না, আবার দেরি হয়। অনেকেই পাই না যারা সত্যিই মাছ ধরে।

স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোর দাবি, সহায়তার তালিকায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। সহায়তার চাল সময়মতো পৌঁছায় না, এবং প্রকৃত জেলের জায়গায় অনেক সময় সুবিধাভোগী হন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংযোগধারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা একটি সময়োপযোগী ও বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ, তবে এর সঙ্গে সমান্তরালভাবে জেলেদের জন্য সঠিক তালিকাভুক্তি, নিয়মিত খাদ্য সহায়তা, এবং জীবিকা বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। সাগর যেমন বিশ্রাম পাচ্ছে, তেমনি বিশ্রামের দরকার উপকূলবাসীর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনেও।

এই বছর বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন, আর ভারতের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ফলে এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরের বড় একটি অঞ্চল কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকবে মাছ ধরার ক্ষেত্রে, যা ভবিষ্যতের জন্য টেকসই মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরবর্তী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতও ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত তাদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

মধ্যরাত থেকে ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

Update Time : ০৮:১৯:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল (১৪ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাত) থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দেশে এ বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে সোমবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাত থেকে।

গ্রীষ্মের এই সময়টি সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশের প্রধান প্রজননকাল। মাছগুলো ডিম ছাড়ে উপকূলবর্তী এলাকায়। এই সময়ে যদি অধিক হারে মাছ ধরা হয়, তাহলে প্রজনন ব্যাহত হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে মাছের উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এ কারণেই ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রগামী সব প্রকার মাছ ধরায় প্রতি বছর গ্রীষ্মকালীন এই নিষেধাজ্ঞা চালু করে।

পটুয়াখালী জেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, এই সময়ে সামুদ্রিক মাছগুলো নিরাপদে ডিম ছাড়ে ও বংশবৃদ্ধি করে। দুই দেশের সমন্বিত এই নিষেধাজ্ঞা বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার একজন জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা হলেই আমাদের কাজ বন্ধ। সরকার বলে চাল দেবে, কিন্তু অনেক সময় পাই না, আবার দেরি হয়। অনেকেই পাই না যারা সত্যিই মাছ ধরে।

স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোর দাবি, সহায়তার তালিকায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। সহায়তার চাল সময়মতো পৌঁছায় না, এবং প্রকৃত জেলের জায়গায় অনেক সময় সুবিধাভোগী হন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংযোগধারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা একটি সময়োপযোগী ও বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ, তবে এর সঙ্গে সমান্তরালভাবে জেলেদের জন্য সঠিক তালিকাভুক্তি, নিয়মিত খাদ্য সহায়তা, এবং জীবিকা বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। সাগর যেমন বিশ্রাম পাচ্ছে, তেমনি বিশ্রামের দরকার উপকূলবাসীর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনেও।

এই বছর বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন, আর ভারতের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ফলে এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরের বড় একটি অঞ্চল কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকবে মাছ ধরার ক্ষেত্রে, যা ভবিষ্যতের জন্য টেকসই মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরবর্তী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতও ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত তাদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।