ভারতের তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন স্থগিত রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত।
এই আইনগুলো বাতিল করার দাবিকে কেন্দ্র করেই দিল্লির সীমান্তে গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে তীব্র কৃষক আন্দোলন চলছে।
এই তিনটি আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে করা এক মামলার শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে সরকারের উদ্দেশ্যে সোমবার রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে মন্তব্য করেছেন, “আপনারা এই আইন স্থগিত করবেন কি না জানান, নইলে আমরাই সেটা করতে বাধ্য হব।”
কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে পুরো বিষয়টি সামলাচ্ছে, তাতে সুপ্রিম কোর্ট যে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা সেটাও গোপন করেননি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কৃষক আন্দোলনের নিষ্পত্তি করার জন্য আরও সময় চাওয়া হলে বিচারপতি বোবডে সরাসরি বলেন, “আমাদের আদৌ মনে হচ্ছে না সরকার ঠিকমতো বিষয়টা সামলাতে পারছে। এখন কৃষক আন্দোলনকে ঘিরে রক্ত ঝরলে আপনারা কি দায় নিতে প্রস্তুত?”
তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করার আগে সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা করেনি বলেও সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে রায় দেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন?
জবাবে প্রধান বিচারপতি তাকে বলেন, “আমাদের ধৈর্য নিয়ে কোনও জ্ঞান দিতে আসবেন না। এতদিন আমরা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছি, আপনারা কিছুই করতে পারেননি।”
তবে আজকের রায়ের পরও কৃষকদের তাদের আন্দোলন চালানোর অধিকার থাকবে, শীর্ষ আদালত সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
“কিন্তু আপনারা যেখানে অবস্থান নিয়ে আছেন সেখানেই থাকবেন না কি অন্য কোথাও গিয়ে আন্দোলন করবেন সেটা আপনাদেরই স্থির করতে হবে”, কৃষকদের উদ্দেশে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
মামলার শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্ট একটি কমিটি গড়ে দিতে পারে – কিন্তু আইনগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা ঠিক হবে না। পুরনো বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গ টেনে ভেনুগোপাল যুক্তি দেন, “কোনও আইন সাংবিধানিকভাবে বৈধ কি না, সেটার নিষ্পত্তি না-করে সেই আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা যায় না।”
কিন্তু শীর্ষ আদালত তার সেই যুক্তি গ্রহণ করেনি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আজকের নির্দেশের পরও আন্দোলনরত কৃষকরা দিল্লির সীমান্ত থেকে এখনও উঠে যাওয়ার কোনও লক্ষণ দেখাননি। আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা স্থির করার জন্য কৃষক নেতারা এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে। সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে আগামী শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সরকারের সঙ্গে কৃষকদের পরবর্তী বৈঠক হবে বলেও স্থির আছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা