রূপসা প্রতিনিধিঃ
খুলনায় রূপসার ভৈরব নদীর ব্যাপক ভাঙ্গনে আইচগাতীর শোলপুর-যুগিহাটি,আমতলা,খেজুরতলা র বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ছে ঘরবাড়ি, ফসলের জমি সহ কয়েক শত বসতভিটা, শেষ সম্ভল টুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অসংখ্য মানুষ।বাস্তহারা হয়ে অনেক পরিবার যাযাবরের মত দিন কাটাচ্ছেন।নদীগর্ভে বিলীন হল শোলপুর নামে মানচিত্র হতে একটি গ্রাম।ভাঙ্গন কবলিত নদী পাড়ের বাসিন্দা মোঃ হাবিবুল্লাহ, আমির খশরু,শেখ নূর ইসলাম আবিদ মোল্যা, সহ অনেকে বলেন- বিগত কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলে সব সরকারের আমলেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভাঙনরোধে নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিলে ও কেউ কখনো কথা রাখেননি।এনিয়ে অতীতে আমাদের দুঃখ,দুর্দশা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সমস্যা সমাধানে আমরা আজ ও আলোর মুখ দেখেনি।নদী পাড়ের ক্ষতিগ্রস্তরা একাধিকবার বিভিন্ন ভাবে দৃষ্টিআকর্শন করার জন্য কর্মসুচি পালন করলেও কর্তাদের টনক নড়েনি বলে ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এদিকে ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় – নদী হতে মাত্র ৩ গজ দুরে বসবাসকারী ৭০ উর্দ্ধো জাকিয়া বেগমের ঘর।নদী পাড়েই তার দুই সন্তান নিয়ে বসবাস।প্রথমবার তাঁর নিজের কয়েক বিঘা জমিসহ বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে যায়।
সেই থেকে একের পর এক নদী ভাঙনে পড়ে বার বার তার ঘর বদল করতে হয়েছে। কখন ঘুমান্ত অবস্তায় পড়ে যায় নদী গর্ভে তার এই শেষ টুকু সম্ভল তা নিয়েই থাকেন আতংকে।তিনি খুবই করুন কণ্ঠে বলেন সবই তো নদীতে গেছে বাকি আছে জীবনটা।
নিজের বাড়ি হারিয়েও নদী পাড়ে দাড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি হাত দিয়ে দেখালেন, ওই যে নদীর ওপারে সেখানেই ছিল তার বাড়ী। গাছপালা, গোয়ালঘর ছিল, কিন্তু এখন আর তার কিছুই নেই। তিনি ও শেষবেলায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে আইচগাতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল বলেন-ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় এবং আমার ব্যক্তিগত উদ্যাগে স্হায়ী ভাবে ভাঙন রোধের ব্যাপরে সর্বাধিক প্রচেষ্টা করেছি, তাতে কোন সমাধান পাইনি। অতিতে ইউনিয়ন পরিষধের পক্ষ হতে বাঁশের তৈরি পালকো পাইলিং ও ভি পাইলিং করে দেওয়া হয়। এতে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধ হলে ও স্হায়ীভাবে সম্ভাব না।এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে আইচগাতী ইউনিয়ন হতে অচিরেই শোলপুর -যুগিহাটি নামের গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। তিনি ভাঙন প্রতিরোধে শীর্ষস্হানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রতি দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একই ভাবে রূপসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন -এই নদী ভাঙ্গন রোধ স্হায়ী ভাবে উপজেলা পরিষধের পক্ষ হতে সমাধান করা সম্ভাব না,এমনাবস্তায় আমি প্রায়াত সংসদ সদস্য মহোদয় হতে শুরু করে বর্তমান সংসদ এবং পানিউন্নয়ন বোর্ড় /পানিসম্পদ মন্ত্রলায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বার বার কথা বলেছি।বড় প্রকল্প পাশ করে এনে দিবেন এমন আশ্বাস দিলেও আজ ও তার বাস্তবায়ন পাইনি।আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তবে নতুন করে আশার বানী দিয়েছেন – খুলনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুর বিভাগ১- এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম তিনি বলেন -বড় ধরনের নদীভাঙন রোধ করতে গেলে মেঘা প্রকল্প ছাড়া সম্ভাব না। ছোটখাটো কোনো বাজেট দিয়ে ভাঙনরোধে করা যায় না।স্হায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ করতে হলে বড় প্রকল্প প্রয়োজন।খুলনা নদী ভাঙন নিয়ে বোর্ড় থেকে মন্ত্রনালয়ে আগে হতেই প্রকল্প জমা দেওয়া আছে।পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। সেহেতু প্রক্রিয়াধীন প্রকল্প অনুমোদন হলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারি, সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষার পাশাপাশি আমরা ও চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে করে দ্রূত প্রকল্পটি অনুমোদন হয়।তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তদারকিকেও গুরুত্বপূর্ন বলে মনে করেন।
এ ব্যাপারে খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য জনাব আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন -খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রূপসা এবং ভৈরব নদীর তীর বেষ্টিত অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা।আইচগাতীর শোলপুর-যুগিহাটি খুলনার গুরুত্বপূর্ন এই শহরতলী এলাকা কে নদী ভাঙন রোধে যতদ্রুত প্রকল্প করে বাস্তবায়ন করা যায় আমার সার্বিক তদারকি সব সময় অব্যাহত থাকবে।তিনি আর ও বলেন -সারাদেশে তীব্র নদী ভাঙন কবলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে স্থায়ী সমাধানের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এসব এলাকায় যেহেতু স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, অচিরেই এ অঞ্চলের মানুষ নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে,ক্ষতিগ্রস্হরা নিজেদের সামলে নিলেও হতাশার শেষ নেই নদীর পাশে বসবাসকারীদের। কতদিন বসবাস করতে পারবেন তার কোন নেই নিশ্চয়তা।এমন অবস্থায় তারা মনে করেন নদী ভাঙ্গন রোধে কর্তূপক্ষের তড়িৎ পদক্ষেপ না নেয়া হলে শোলপুর যুগিহাটির বাকি অংশটুকু ও নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।