গতকাল দুর্দান্ত একটা সকাল কাটিয়েছিল ক্যারিবিয়রা। ১১১ রানের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের শেষ ৬টি উইকেট তুলে নেয় জেসন হোল্ডারের দল। যাতে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের তৃতীয় তথা শেষ টেস্টে ৩৬৯ রানেই নিজেদের প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে বোলিংয়ের সুফলটা ধরে রাখতে পারেনি উইন্ডিজ। এক ব্রডের দৃঢ়তায় ধুঁকতে ধুঁকতে ফলোঅন এড়ায় সফরকারীরা।

ক্যারিবিয় ইনিংসের ৫৫তম ওভারের ঘটনা! স্ট্রাইক প্রান্তে তখন দলিয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। দীর্ঘদেহী এ ব্যাটসম্যানকে আক্রমণের দায়ীত্বে তখন ক্রিস ওকস। চতুর্থ বলটি ছুড়েই আনন্দে দু’হাত প্রসারিত করে সতীর্থদের সঙ্গে ওকস মেতে ওঠেন উইকেট প্রাপ্তির উল্লাসে। বলটি ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চলে দাঁড়ানো পোপের অসাধারণ এক ক্যাচের শিকার হন হোল্ডার।

কিন্তু না! কি যেন একটা হয়েছে। ফিল্ড আম্পায়ারদ্বয় ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন তৃতীয় আম্পায়ারের সঙ্গে। মুহুর্ত কয়েক পরেই তিনি জানিয়ে দিলেন ওভার স্টেপিং করেছেন ওকস। অর্থাৎ নো-বল। নিমিষেই মিলিয়ে গেল উদযাপনের দৃশ্য। উইকেট বঞ্চিত হলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ওকসকে সাধারণত ওভার স্টেপিং করতে দেখা যায় না। যে কারণে এটাই তার ক্যারিয়ারে ওভার স্টেপিং-এ উইকেট বঞ্চিত হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা। সেইসঙ্গে বৃথা গেল পোপের ওই বাজপাখির মতো ঝাপ দিয়ে ধরা অসাধারণ ক্যাচটিও।

যাইহোক, হোল্ডার এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়ায় ফলোঅনে পড়ার যে শংকা জেগেছিল, তা কেটে গেল ক্যারিবিয়দের। ৫৭তম ওভারের চতুর্থ বলেই সেই ওকসকেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফলোঅন এড়ান উইন্ডিজ ক্যাপ্টেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। এর এক ওভার পরে আক্রমণে এসেই হোল্ডারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই টেস্টে ক্যারিবিয়দের জন্য ত্রাসে পরিণত হওয়া স্টুয়ার্ট ব্রড। প্রতিপক্ষ দলনায়ককে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় শিকার পূর্ণ করেন ব্রড।

যাতে ফিফটি বঞ্চিত হন হোল্ডার, ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ও লড়াকু ৪৬ রান। আর এর মধ্যদিয়েই ভাঙ্গে ক্যারিবিয়দের ৬৮ রানের সপ্তম উইকেট জুটি। তবে এই জুটি ভাঙ্গার আগেই অবশ্য কয়েকটি মাইলফলক স্পর্শ করেন হোল্ডার। ডোরিচের সঙ্গে জুটি বেধে তোলেন ১ হাজার রান। একইসঙ্গে হোল্ডার নিজেকে নিয়ে যার আরও এক অনন্য উচ্চতায়।

যেখানে এতোদিন ছিলেন কেবল কার্ল হুপার ও গ্যারি সোবার্স। দুই হাজার প্লাস রানের সঙ্গে একশ প্লাস উইকেট নিয়ে এই দুই জীবন্ত কিংবদন্তি অলরাউন্ডারের সঙ্গে এবার যোগ দিলেন জেসন হোল্ডার। ইনিংসে যেন ক্যারিবিয়দের প্রাপ্তি ঠিক এতোটুকুই। গোল্পের বাকীটা যেন কেবলই ব্রডময়।

কেননা,  ব্রডের তোপের মুখে ৬৩তম ওভারে পরপর দুটি এবং ৬৫তম ওভারে শেষ উইকেটটি হারিয়ে দুশোই টপকাতে পারেনি উইন্ডিজ। এক ব্রডের তোপেই বিধ্বস্ত হয়েছে ক্যারিবিয়রা, গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৯৭ রানেই। দলের পক্ষে অধিনায়ক হোল্ডার ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান আসে শেন ডোরিচের ব্যাট থেকে। বিপরীতে ৩১ রানে ৬টি উইকেট তুলে নিয়ে সেরা বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড।

যার মাধ্যমে ক্যারিয়ারে ১৮তম বার পাঁচ বা ততোধিক উইকেট প্রাপ্তির দেখা পান এই ইংলিশ পেসার। শুধু তা-ই নয়, উইন্ডিজের বিপক্ষেই ব্রডের এটা তৃতীয়বার। আর ওল্ড ট্রাফোর্ডে ব্রডের এটা দ্বিতীয় ঘটনা। অন্যদিকে দেশের হয়ে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকারে চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছেন ব্রড। ২৮বার নিয়ে সবার উপরে আছেন বর্তমান সতীর্থ জেমস অ্যান্ডারসন।

এর আগে গতকাল লাঞ্চ বিরতির পর জবাব দিতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা সেই ব্রডের তোপের মুখে শুরুতেই হোঁচট খায় উইন্ডিজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে (১) হারায় সফরকারীরা। এখানে ব্রড যেন দু’ধারী তলোয়ার। প্রথমে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ফিফটি হাঁকান তিনি। পরে নিজের আসল পরিচয়ে নেমেই সফল হলেন দীর্ঘদেহী এই বোলার।

এদিকে, সিরিজ বর্তমানে ১-১ সমতায়। ম্যানচেস্টারের তৃতীয় তথা শেষ টেস্ট ম্যাচটি তাই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার শুরু হওয়া সিরিজ নির্ধারণী এই টেস্টের প্রথম দিনটা ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান তুলে শেষ করেছিল স্বাগতিকরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯১ রান আসে অলি পোপের ব্যাট থেকে। ঠিক ১৫০টি বল মোকাবেলা করে ১১টি চারের সাহায্যে ওই রান করেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

এছাড়া ওপেনার রোরি বার্নসের ব্যাট থেকে ৫৭ রান ও বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৬৭ রান। তবে শেষ দিকে ৩৩ বলে ফিফটি হাঁকানো স্টুয়ার্ট ব্রডের ঝড়ো ৬২ রানের ইনিংসে চড়ে দলীয় স্কোর সাড়ে তিন’শ ছাড়ায় রুট বাহীনির। মাত্র ৪৫টি বল মোকাবেলা করে ৯টি চার ও একটি বিশাল ছক্কার সাহায্যে ওই ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ব্রড।

অন্যদিকে, বল হাতে স্বাগতিক শিবিরে সবচেয়ে বেশি কাঁপন ধরান কেমার রোচ। ক্যারিবিয় এই পেসার তুলে নেন সর্বাধিক চারটি উইকেট, ৭২ রানের বিনিময়ে। আর মাত্র তিনটি উইকেট নিতে পারলেই টেস্টে ২০০তম উইকেট টেকারের ক্লাবে নাম লেখাবেন দুর্দান্ত বোলিং করা এই ক্যারিবিয় পেসার। এছাড়া তাকে যোগ্য সাপোর্ট দেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল (৭৭/২), রোস্টন চেজ (৩৬/২) ও দলনায়ক জেসন হোল্ডার (৮৩/১)।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে