ইতিহাসবিদদের মতে যুবরাজ সিদ্ধার্থ গৌতম বর্তমান নেপালের লুম্বিনী তে জন্ম নিয়েছিলেন। বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী বৌদ্ধ পূর্ণিমা।
বৈদিক সাহিত্য অনুসারে মহামতি বুদ্ধ হলেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার। বুদ্ধ পৃথিবীর সকল জীবের প্রতি অহিংসার বাণী পৌঁছে দিতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। বুদ্ধের আধ্যাত্মিক শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বৌদ্ধ ধর্ম।
প্রায় প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এটি পালিত হয় বলে একে বৈশাখী পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা। খ্রীষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্ম গ্রহন করেন, খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৮ র এ দিনে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন বুদ্ধ, ৫৪৩ খ্রীষ্টপূর্বাদ্ধে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল নেপালের লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষতলে । বৌদ্ধ পূর্ণিমা হল বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত ।এ তিথিতে বুদ্ধ জন্ম ,বোধি ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
বৌদ্ধ পূর্ণিমা র এ তিথিতে মাতৃদেবী মহামায়া  বাবার বাড়ি তে যাওয়ার জন্য রাজা শুদ্ধধনের
কাছে অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে রাজা কালবিলম্ব না করে রাজন্যবর্গ সহ রাজ কর্মচারীদের মহামায়ার বাবার বাড়ি তে যাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।দেবদহ ও কপিলাবস্তু নগরী অপরুপ সাজে সজ্জিত করা হল। রানীকে বহনকারী রথ যাত্রা করে যখন নেপালের লুম্বিনী কাননে পৌঁছে তখন প্রসব বেদনা শুরু হয়। লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষতলে বোধিসত্ত ভূমিষ্ঠ হলেন ।
বৌদ্ধ পূর্ণিমার দিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে বুদ্ধের আরাধনা করেন। ভক্তরা এদিন মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্বলন করে, ফুলের মালা দিয়ে মন্দির সাজিয়ে বুদ্ধের উপাসনা করে।এদিন বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল,অষ্টশীলা , সূত্র পাঠ ,সুত্রশ্রবন ও সমবেত প্রার্থনা করা হয়।
বৌদ্ধ ধর্মে র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পঞ্চশীল তত্ত্ব ।এই তত্ত্ব মেনে চললে জীবনে দূঃখদূর্দশা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে বুদ্ধ শিখিয়ে গেছেন। পঞ্চশীল তত্ত্ব হলো –
 ১. জীবমাত্র হিংসা থেকে বিরত থাকা।
 ২. চুরি করা থেকে বিরত থাকা।
  ৩. ব্যাভিচারী না হওয়া।
   ৪. মিথ্যা কথা না বলা ।
   ৫। মাদকদ্রব্য সেবন না করা ।
গৌতম বুদ্ধ বলেন , “:সুখ তারা কখনোই উপভোগ করেন না যারা নিজের জিনিস নিয়ে খুশি থাকতে পারে না।বুদ্ধের মতে যারা নিজের জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন , তারাই পৃথিবী তে সুখী।”
মহামতি বুদ্ধ বলেছেন —-” সুখে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হল , জীবনের প্রতিটি জিনিসে ভালো কিছু খুঁজে নেয়া, সবকিছু থেকে পজিটিভ কিছু খুঁজে বের করাই হল আসল উদ্দেশ্য। নিজেকে তৈরি করো সবকিছু র মধ্য থেকে ভালো কে খুঁজে নিতে।”
বৌদ্ধ ধর্মে মানুষের হৃদয়বৃত্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মানুষের মধ্যে যে জ্ঞান শক্তি, ইচ্ছা শক্তি ও কল্যাণ শক্তি রয়েছে তা জাগ্রত করাই বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। বুদ্ধ চতুরার্য সত্য জ্ঞান লাভ করে জাগতিক দূঃখের অন্তসাধন করতে সব সময় সচেষ্ট থাকতে বলেছো।সত্য জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে বুদ্ধ বলেছেন—-” সত্ত্ব গণের বিশুদ্ধির নিমিত্তে ,শোক ও বিলাপের বিনাশের জন্য ,দূঃখ ও দৌমনস্য দূর করার জন্য সত্যপ্রাপ্তি ও নির্বাণ সাক্ষাৎকারে র নিমিত্তে চারি স্মৃতিপ্রস্থান একমাত্র মার্গ।”
মহামানব বৌদ্ধ মৈত্রী- করুনা- মুদিতা- উপেক্ষা এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে জীবনযাপন করতে বলেছেন ।জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র  নির্বিশেষে সত্ত্বদের সমান গুরুত্ব ছিল তার নিকট। ধর্ম পদে বুদ্ধ বলেছেন—–  ” বৈরীতার দ্বারা বৈরিতা , শত্রুতার দ্বারা শত্রু তা কখনো প্রশমিত হয় না। অবৈরীতা ও মৈত্রীর দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয় ” ।
  মহামতি বুদ্ধের বাণী জগতের অনিত্য জ্ঞান উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। মানুষে মানুষে মৈত্রী ও প্রেমের সেতুবন্ধন তৈরি করে। বৌদ্ধ পূর্ণিমায় আসুন সকলে মিলে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হই অশান্ত বিশ্বের মানবের কল্যাণে, মহামারী করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা করি পরম করুনাময়ের কাছে।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে