রাজস্থান রয়্যালসের জন্য ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার। হেরে গেলেই বাদ পড়ে যাবে তারা, জিতলে বেঁচে থাকবে প্লে-অফ খেলার সূক্ষ্ম আশা। অন্যদিকে জিতলে প্লে-অফ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে প্রতিপক্ষে কিংস এলেভেন পাঞ্জাবের। হারলেও থাকছে শেষ ম্যাচ জিতে সেরা চারে যাওয়ার সুযোগ। ফলে এই ম্যাচের পুরো চাপটাই ছিল রাজস্থানের ওপর।

এমন কঠিন ম্যাচে বেন স্টোকস ও সানজু স্যামসনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চাপকে জয় করেছে রাজস্থান, পেয়েছে ১৮৬ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করে দুর্দান্ত এক জয়।

ফলে এখনও টুর্নামেন্টে টিকে রইল আইপিএলের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ম্যাচ জিতলে অনেক কিছুই আসতে পারে তাদের পক্ষে।

অন্যদিকে ম্যাচটি হেরে যাওয়ায় এখন বেড়ে গেল পাঞ্জাবের অপেক্ষা। টানা পাঁচ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে খেলতে নামলেও, এটিকে ছয়ে রূপান্তর করতে পারেননি লোকেশ রাহুল, ক্রিস গেইলরা। এখন ১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট তাদের। সমান ম্যাচে সমান ১২ পয়েন্ট রয়েছে রাজস্থান এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সেরও।

ম্যাচে আগে ব্যাট করে ক্রিস গেইলের ৯৯ রানের ইনিংসে ভর করে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ১৮৫ রান করে পাঞ্জাব। জবাবে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে রাজস্থান। দুই দলের প্রথম সাক্ষাতে ২২৩ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে আইপিএল ইতিহাসের রেকর্ড গড়েছিল রাজস্থান।

এবার দ্বিতীয় সাক্ষাতে ১৮৬ রান তাড়া করতে নেমে স্টোকসের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় তারা। প্রথম পাওয়ার প্লে’র মধ্যেই মাত্র ২৪ বলে ফিফটি তুলে নেন স্টোকস। তবে আউট হয়ে যান ঠিক ৫০ রান করেই। এরপর মাত্র ২৫ বলে ৪৮ রান করেন সানজু স্যামসন। এ দুজনের এমন ব্যাটিংয়ে ম্যাচ রাজস্থানের হাতে চলে আসে।

পরে বাকি কাজটা সারেন স্টিভেন স্মিথ ও জস বাটলার। দুজনের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাত্র ১৯ বলে আসে ৪১ রান। ইনিংসের ১৫ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় রাজস্থান। বাটলার ১০ বলে ২০ ও স্মিথ ২০ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে ক্রিস গেইলের ব্যাটের আগুনে পুড়েছে রাজস্থান রয়্যালসের বোলিং লাইনআপ। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বেন স্টোকস, জোফরা আর্চার, রাহুল তেওয়াতিয়াদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করেছেন গেইল।

তবে ইনিংসশেষে একটি আক্ষেপ তার থেকেই যাওয়ার কথা। কেননা মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি যে করতে পারেননি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল থেকে উইকেটে এসে খেলেছেন শেষ ওভারের চতুর্থ বল পর্যন্ত। মাঝের সময়টায় মোকাবিলা করেছেন ৬৩ ডেলিভারি, যেখানে ৬ চারের সঙ্গে ৮টি বিশাল ছয়ের মারে করেছেন ৯৯ রান।

গেইলের এমন ইনিংসের পর স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়েছে পাঞ্জাবের ইনিংস। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করেছে প্রীতি জিনতার দল।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে সাজঘরের পথ ধরেন আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান মানদ্বীপ সিং। এরপর মাত্র ১৩.৪ ওভারে ১২০ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও তিনে নামা ক্রিস গেইল। তাদের জুটিতে পাঞ্জাব পায় বড় সংগ্রহের ভিত।

এখনও পর্যন্ত আইপিএলের এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রাহুল আউট হন ৪১ বলে ৪৬ রান করে। এরপর মিনি ঝড় তোলেন গেইলের স্বদেশি নিকলাস পুরান। মাত্র ১০ বলের ইনিংসে ছক্কা মারেন তিনটি, করেন ২২ রান। পুরান আউট হয়ে যান দলীয় ১৬২ রানের সময়।

উনিশতম ওভারে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১০০০তম ছক্কা হাঁকান গেইল। পরের ওভারে জোফরা আর্চারকে ছক্কা মেরে পৌঁছে যান ইনিংসে ব্যক্তিগত ৯৯ রানে। কিন্তু পরের বলেই গেইলকে বোল্ড করে প্রতিশোধ নিয়ে নেন আর্চার। মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করে মাঠের মধ্যেই হতাশা প্রকাশ করেন গেইল।

যদিও মাঠ ছাড়ার আগে ঠিকই আর্চারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়েছেন এ ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। পরে ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে কথোপকথনে জানিয়েছেন, ৯৯ রানে আউট হলেও, তিনি নিজে এটিকে সেঞ্চুরি হিসেবেই ধরে নিয়েছেন। যা পাঞ্জাবকে এনে দিয়েছে ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে