সানাই মানে বিসমিল্লা আর বিসমিল্লা মানে সানাই। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম প্রাণপুরুষ তিনি। আজ ২১ অগস্ট, ভারতরত্ন উস্তাদ বিসমিল্লা খানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৪ বছর আগে আজকের এই দিনে থেমে যায় তার সানাইয়ের সুর। যিনি ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রচনা করেছিলেন রাগ মঙ্গলধ্বনি। এদিকে, সম্প্রতি তার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুবার্ষিকীর আগে এমন ঘটনায় তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হাদহা সরাইয়ের ওই বাড়িটি ছিল বিসমিল্লাহ খানের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। তার প্রিয় সেই বাড়িটির একাংশ ভেঙে ফেলেছেন আত্মীয়রা। এমনকি যে ঘরে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান রেওয়াজ করতেন, সেটিও এখন ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত ১২ আগস্ট সেই ঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
এ দিকে এ ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশ সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে। যদিও পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুরনো ওই বাড়িটি ভেঙে একটি বিশাল কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের পালিত কন্যা ও সংগীতশিল্পী সোমা ঘোষ এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, বাবার ঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে। এটি শোনার পরই আমি ভেঙে পড়েছি। ভেঙে ফেলার পর তার মহামূল্যবান জিনিসপত্রগুলোও ফেলে দেয়া হয়েছে। ওই ঘরটি শুধু একটি ঘর ছিল না; সংগীত অনুরাগীদের জন্য উপাসনার একটি পবিত্র স্থান ছিল।
জানা যায়, ২০০৬ সালে ওস্তাদ বিসমিল্লা খান মারা যাওয়ার পর তাঁর শিষ্য ও ভক্তরা ওই বাড়িটিকে একটি মিউজিয়াম করার আবেদন জানিয়েছিলেন। উস্তাদের স্মরণে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক, তাতে প্রদর্শিত হোক বিসমিল্লার বিভিন্ন স্মারক- এই দাবি ছিল তাদের।
উল্লেখ্য, সানাইয়ের মতো একটি ‘সাধারণ’ যন্ত্রকে মার্গসঙ্গীতের স্তরে উন্নীত করে পূর্ণ অবয়ব দেওয়ায় উস্তাদ বিসমিল্লার অবদান সর্বজনস্বীকৃত। তাঁর স্মৃতিতেই বাড়িটি হেরিটেজের তকমা দেওয়ার দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিনে কেউই এ বিষেয় এগিয়ে আসেননি।
হাদহা সরাইয়ের ভিক্ষমশাহ লেনের কাছে এই বাড়িটি কেনা হয় ১৯৬৩ সালে। দোতলা বাড়ির উপরের একটি ঘরে, তিনি থাকতেন। রোজ স্নান করে ওই ঘরে রেওয়াজ করতেন তিনি।
ভারতীয় মার্গসংগীতের অলংকার বিসমিল্লা খানের ছোট ছেলে নাজিম হুসেন বলেন, ‘এই বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে তিনি আদৌও কিছু জানেন না। যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে সে ব্যাপারটি দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ওই বাড়িতে নেই। আগামী ২৪ অগস্টের পর বাড়ি ফিরে তারপর ব্যবস্থা নেবেন।’