সিচুয়ান প্রদেশের চেংদুতে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মাথায় পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধের এ নির্দেশ বেইজিংয়ের। গতকাল শুক্রবার বেইজিং এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘যোগ্য জবাব’ দিতেই তারা এ সিন্ধান্ত নিয়েছে।

আবার বৃহস্পতিবার চার চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আনে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, চীনের সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তারা তথ্য লুকিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা স্নায়ুযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। গত বুধবার সেই অবস্থার মারাত্মক রূপ নেয়। এদিন মার্কিন প্রশাসন ক্যালিফোর্নিয়ার হিউস্টনে চীনের কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের শত শত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য হ্যাকিং এবং করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের গবেষণা–তথ্য চুরির চেষ্টার অভিযোগে চীনের চার নাগরিকের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের অভিযোগ দায়েরের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার একদিন পরই ওই পদক্ষেপ নেয় ওয়াশিংটন।

যদিও চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাত এখানেই শেষ নয়। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আইনজীবী জন সি ডেমার্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, যে চারজন চীনা গবেষকের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন।

তিনি বলেন, তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরজন সান ফ্রান্সিসকোর চীনের কনস্যুলেটে আশ্রয় নিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, পিএলএর সদস্যরা পরিচয় গোপন করে গবেষক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা–তথ্য চুরি করার জন্য চীন সরকার পরিকল্পিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সেনাসদস্য পাঠায়।

তবে এসব পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘রাজনৈতিক উসকানি’ হিসেবে নাকচ করেছে চীন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক পদক্ষেপগুলোর বৈধ ও উপযুক্ত জবাব দিতেই চেংদু কনস্যুলেটের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তারা আরও জানায়, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এখন যে সম্পর্ক, তার জন্য চীন দায়ী নয়, এর পুরো দায় যুক্তরাষ্ট্রের। তবে কবে নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে চেংদু কনস্যুলেটের সব কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে হবে, সেই বিষয়ে কোনো সময়সীমা জানায়নি মন্ত্রণালয়টি।

বেইজিংয়ে দূতাবাসের পাশাপাশি চীনের মূল ভূখণ্ডে পাঁচটি ও হংকংয়ে একটি কনস্যুলেট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ১৯৮৫ সালে চেংদুতে প্রতিষ্ঠিত কনস্যুলেটটি অতীতে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পলাতক গোয়েন্দা বিশ্লেষক অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটে গুপ্তচরবৃত্তি নেটওয়ার্ক থাকার তথ্য প্রকাশ করেন। সেখানে চেংদু কনস্যুলেটের নামও ছিল।

বাণিজ্য সমস্যা, চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। এরপর সম্প্রতি হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর এবং প্রথম দিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীনের প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগে দুই দেশের সম্পর্কের পারদ আরও নিচে নামতে শুরু করে।

এর মধ্যে আবার গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের লন্ডন সফরে এসে চীনবিরোধী আন্তর্জাতিক জোট গড়ে তোলার কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ওই দিনই পম্পেও হিউস্টনে চীনের কনস্যুলেট গুপ্তচরবৃত্তি ও মেধাস্বত্ব চুরির কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও এটাকে ‘বিদ্বেষপরায়ণ অপবাদ’ বলছে বেইজিং। এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কও স্বাভাবিক রাখতে চাইছে।

এমনকি গতকাল শুক্রবারের বিবৃতিতেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানায় চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছালেও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে চীনের সঙ্গে বিরোধ রিপাবলিকানদের কৌশলের অংশ হতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে