Dhaka ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২ পোল্যান্ডের বাংলাদেশের দূত হলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম ‘পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে উঠতে প্রস্তুত বাংলাদেশ’ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সাক্ষী আবছার আটক ১৩ দিন বৃষ্টিবলয়ে থাকবে পুরো দেশ, হবে কালবৈশাখী-বজ্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লুট হওয়া অস্ত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বিজয় দিবসের নতুন কাহিনী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৪১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৯৭ Time View

ভারতীয় সমারিক বাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বিজয়ীদের আলাপ চারিতার প্রথম মুহূর্তের বিবরণ তুলে ধরে ঘটনার নেপথ্যের নতুন একটি কাহিনী উন্মোচন করেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নির্ভয় শর্মা তখন একজন তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে বিজয়ী বাহিনীর সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর এক নিবন্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরের প্রায় আজানা বিবরণ তুলে ধরেছেন।

পরবর্তীতে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরামের গভর্নর হিসেবে দায়িত্বপালনকারী শর্মা তাঁর রচনায় বলেন, ‘মিরপুর ব্রিজ হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে পৌঁছানোর জন্য সহকর্মী আরেক ক্যাপ্টেনসহ তিনি ভারতীয় প্রথম সৈন্য দলের সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করেন।’

তবে, কিছু ঘটনা তাদের প্রথম দফা যাত্রা বেশ হতাশ করেছিল, যদিও তারা দ্রুতই তা সমাল দিয়ে ভারতীয় মেজর জেনারেল গান্ধর্ব নাগরার বার্তা নিয়ে সেখানে পৌঁছেন।

তাদের দ্বিতীয় যাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার ভারতের ২ প্যারা ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল পান্নু এবং আরো অনেকের সঙ্গে ঢাকায় পৌঁছে পুনরায় এই বার্তা দেন যে, এই দিনে ‘প্রথম অনেক ভারতীয় সৈন্য ঢাকায় প্রবেশ করেছে।’

ভারতের ‘প্রিন্ট’ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘আমি এবং আরো কয়েকজন অফিসারসহ কর্নেল পান্নু বিজয়ীর বেশে দ্রুত জেনারেল নিয়াজির সদর দপ্তরে প্রবেশ করি। পান্নু আবদুল কাদের সিদ্দিকী বা টাইগার সিদ্দিকীকেও সঙ্গে যেতে বলেন।’

শর্মা বলেন, ‘কয়েক মিনিটের কিছু ঘটনার পরে ভারতের ১০১০ এরিয়া জেনারেল কমান্ডিং অফিসার নাগরার বার্তা নিয়ে তাদের সামরিক যান ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়াজির সদর দপ্তরে পৌঁছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন শর্মা লিখেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ড সদর দপ্তরে প্রবেশ করি এবং আমরা আমাদের জিপগুলো নিয়াজির অফিসের পাশে পার্কিং করেছিলাম, তখন আমরা স্মার্ট, সুসজ্জিত ও লম্বা গড়নে এক পাকিস্তানি সৈনিকের মুখোমুখি হই।’

শর্মা আরো বলেন, ‘পাক সৈন্য ছিল একজন কড়া গার্ড, ‘সে ভারতীয় সৈন্যদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেয়, কেননা কি ঘটতে যাচ্ছে এ সম্পর্কে সে কিছু জানতো না এবং সে জানতো না ‘কি করা অথবা বলা উচিত।’

‘সে আমাদের বলেছে তার জেনারেলের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত পার্কিংয়ের জায়গায় আমাদের জিপ পার্কিং করতে দেবে না। আমরা তাকে একপাশে ঠেলে দিয়ে জোর করে জেনারেলের কক্ষে ঢুকে পড়ি।’ শর্মা বলেন, কর্নেল পান্নু তীব্র দৃষ্টিতে নিয়াজির দিকে তাকান। তবে, তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি।

শর্মা বলেন, ‘নিয়াজি সেভ করেননি এবং হতাশায় দুই হাতে তার মাথা চেপে ধরেছিলেন এবং আমি স্পষ্টতই তার ভঙ্গুর কথা স্মরণ করি-‘রাওয়ালপিন্ডিতে যারা বসে আছেন তারা আমাদের হতাশ করেছেন।’

তিনি বলছিলেন, রাওয়ালপিন্ডি সেই সকাল অবধি তাকে বোকা বানিয়ে রেখেছে যে ‘সাহায্য আসছে’।

শর্মা স্মরণ করেন, ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে ভারতীয় সৈন্যরা ঢাকার প্রবেশদ্বার মিরপুর ব্রিজে পৌঁছে শত্রুদের হতবাক করে দেয়, তখন থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত গোলাবর্ষণ চলছিল।
তিনি বলেন, নাগরা সকালে মিরপুর ব্রিজের পাশে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন, অপর পাশে শত্রু সৈন্য মোতায়েন করা ছিল।

‘তিনি (নাগরা) আমাদের জানান যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে সম্মত হয়েছে এবং আমরা লে. জে. এএকে নিয়াজির জন্য একটা বার্তা নিয়ে যাচ্ছি। এই বার্তায় বলা হয়, ‘প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখানে আছি। খেলা শেষ হয়েছে,আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি নিজেকে আমার হাতে তুলে দিন এবং আমি আপনার বিষয়টি দেখবো।’

শর্মা বলেন, নাগরার সহযোগী ক্যাপ্টেন হিতেশ মেহতার সাথে নিয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুট্যান্ট হিসাবে তাকে নিয়াজির কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হয়, তারা নিয়াজির জন্য নাগরার হাতে লেখা বার্তা নিয়ে একটি জিপে উঠেন, তারা দুজন এক অপরের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন।

তিনি বলেন, দুইজন অফিসার জিপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অপর অফিসার মেজর জে এস শেঠি এবং লেফটেন্যান্ট তেজিন্দর সিং জিপটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং আসন্ন বিপদের ঝুঁকি উপেক্ষা করে আমরা সকলেই আত্মসমর্পণের বার্তা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য এবং ইতিহাস সৃষ্টির জন্য উত্তেজিত ছিলাম।

শর্মা লিখেছেন, ‘অপর পাশে থাকা পাকিস্তানি আর্মি আত্মসমর্পণের নির্দেশনা পায়নি এটা আমরা খুব কমই জানতাম। ব্রিজ অতিক্রম করতে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে তারা গুলি ছোঁড়ে, আমরা তখন থামলাম।’

‘আমার সব উদ্ভাবনা কাজে লাগিয়ে, আমি চেঁচিয়ে তাদের গোলাগুলি বন্ধ করতে বললাম। গুলি বন্ধ হলো।’

তবে, শর্মা বলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা ঘিরে ফেলে ভারতীয় ক্ষুদ্র সেনাদলকে নিরস্ত্র করে, তিনি একজন পাকিস্তানি জুনিয়র কমিশন অফিসার ইনচার্জকে একজন সিনিয়র অফিসারকে ফোন করতে বলেন।
ভারতীয় ক্যাপ্টেইন একই সঙ্গে ‘তাকে (জেসিও) হুমকি দিয়ে জানিয়ে রাখেন তাদের যেন কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করা না হয়, ভারতীয় আর্মি ঢাকা ঘিরে রেখেছে এবং তাদের জেনারেল আত্মসমর্পণে সম্মত হয়েছেন।’

শর্মা বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে’ শিগগিরই একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেইন এসে তাদের মিরপুর গ্যারিসনে নিয়ে যান, সেখানকার কমান্ডার তাদের অপেক্ষা করতে বলেন এবং প্রায় এক ঘন্টা পরে সেখানে ঢাকা গ্যারিসনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ আসেন।’

জামশেদসহ তারা মিরপুর ব্রিজে ভারতীয় আর্মির জিপে ফিরে আসেন, এ সময় এক পাকিস্তানি তাদের অনুসরণ করে, ‘আমাদের সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও ফেরার পথে আমাদের লক্ষ্য করে পুনরায় গুলি চালানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘মেজর শেঠির বাম পায়ে মাঝারি মেশিনগানের একটি গুলি লাগে এবং মাঝখানে ডানদিকে অপর একটি বুলেট সিংয়ের হেলমেটে আঘাত করে। তবে, ভাগ্যক্রমে আমরা রক্ষা পাই,
‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং আমরা ব্রিজের আমাদের অংশে ফিরে আসি।’

শর্মা লিখেছেন, ‘জেনারেল নাগরা কর্নেল পান্নুর সঙ্গে শিগগিরই ফিরে এলেন এবং পাকিস্তানি জেনারেল জামশেদ তাদের স্বাগত জানান, জামশেদ আত্মসমর্পন করেন এবং তার পিস্তল নাগরার কাছে হস্তান্তর করেন।’

এর অল্প সময়ের মধ্যেই সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ভারতীয় কর্মকর্তারা নিয়াজীকে নাগরার বার্তা পৌঁছে দিতে পুনরায় ঢাকায় ঢুকলেন।

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর সিদ্দিক সালিক তার উইটনেস টু স্যারেন্ডার বইয়ে ভারতের ইস্টার্ন ফ্রন্ট’র জেনারেল স্টাফ চিফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকবের আলোচনার ঘন্টাখানেক পরে আত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রাক্কালে তখনকার ঘটনাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন।

সিদ্দিক সালিকের বইয়ে বলা হয়, নিয়াজি নাগরার বার্তা পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নেভি কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরিফ এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উপস্থিত সিনিয়র পাকিস্তানি জেনারেলদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘তারা উভয়ই ঢাকা রক্ষায় যথেষ্ট শক্তি না থাকায় নিয়াজিকে নাগরার আহ্বানে সাড়া দেয়ার পরামর্শ দেন।’

সালিক লিখেছেন, ‘জেনারেল নিয়াজি নাগরাকে অভ্যর্থনা জানাতে মেজর জেনারেল জামশেদকে পাঠান।’

সূত্র : বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২

বিজয় দিবসের নতুন কাহিনী

Update Time : ০৮:৪১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

ভারতীয় সমারিক বাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বিজয়ীদের আলাপ চারিতার প্রথম মুহূর্তের বিবরণ তুলে ধরে ঘটনার নেপথ্যের নতুন একটি কাহিনী উন্মোচন করেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নির্ভয় শর্মা তখন একজন তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে বিজয়ী বাহিনীর সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর এক নিবন্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরের প্রায় আজানা বিবরণ তুলে ধরেছেন।

পরবর্তীতে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরামের গভর্নর হিসেবে দায়িত্বপালনকারী শর্মা তাঁর রচনায় বলেন, ‘মিরপুর ব্রিজ হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে পৌঁছানোর জন্য সহকর্মী আরেক ক্যাপ্টেনসহ তিনি ভারতীয় প্রথম সৈন্য দলের সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করেন।’

তবে, কিছু ঘটনা তাদের প্রথম দফা যাত্রা বেশ হতাশ করেছিল, যদিও তারা দ্রুতই তা সমাল দিয়ে ভারতীয় মেজর জেনারেল গান্ধর্ব নাগরার বার্তা নিয়ে সেখানে পৌঁছেন।

তাদের দ্বিতীয় যাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার ভারতের ২ প্যারা ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল পান্নু এবং আরো অনেকের সঙ্গে ঢাকায় পৌঁছে পুনরায় এই বার্তা দেন যে, এই দিনে ‘প্রথম অনেক ভারতীয় সৈন্য ঢাকায় প্রবেশ করেছে।’

ভারতের ‘প্রিন্ট’ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘আমি এবং আরো কয়েকজন অফিসারসহ কর্নেল পান্নু বিজয়ীর বেশে দ্রুত জেনারেল নিয়াজির সদর দপ্তরে প্রবেশ করি। পান্নু আবদুল কাদের সিদ্দিকী বা টাইগার সিদ্দিকীকেও সঙ্গে যেতে বলেন।’

শর্মা বলেন, ‘কয়েক মিনিটের কিছু ঘটনার পরে ভারতের ১০১০ এরিয়া জেনারেল কমান্ডিং অফিসার নাগরার বার্তা নিয়ে তাদের সামরিক যান ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়াজির সদর দপ্তরে পৌঁছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন শর্মা লিখেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ড সদর দপ্তরে প্রবেশ করি এবং আমরা আমাদের জিপগুলো নিয়াজির অফিসের পাশে পার্কিং করেছিলাম, তখন আমরা স্মার্ট, সুসজ্জিত ও লম্বা গড়নে এক পাকিস্তানি সৈনিকের মুখোমুখি হই।’

শর্মা আরো বলেন, ‘পাক সৈন্য ছিল একজন কড়া গার্ড, ‘সে ভারতীয় সৈন্যদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেয়, কেননা কি ঘটতে যাচ্ছে এ সম্পর্কে সে কিছু জানতো না এবং সে জানতো না ‘কি করা অথবা বলা উচিত।’

‘সে আমাদের বলেছে তার জেনারেলের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত পার্কিংয়ের জায়গায় আমাদের জিপ পার্কিং করতে দেবে না। আমরা তাকে একপাশে ঠেলে দিয়ে জোর করে জেনারেলের কক্ষে ঢুকে পড়ি।’ শর্মা বলেন, কর্নেল পান্নু তীব্র দৃষ্টিতে নিয়াজির দিকে তাকান। তবে, তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি।

শর্মা বলেন, ‘নিয়াজি সেভ করেননি এবং হতাশায় দুই হাতে তার মাথা চেপে ধরেছিলেন এবং আমি স্পষ্টতই তার ভঙ্গুর কথা স্মরণ করি-‘রাওয়ালপিন্ডিতে যারা বসে আছেন তারা আমাদের হতাশ করেছেন।’

তিনি বলছিলেন, রাওয়ালপিন্ডি সেই সকাল অবধি তাকে বোকা বানিয়ে রেখেছে যে ‘সাহায্য আসছে’।

শর্মা স্মরণ করেন, ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে ভারতীয় সৈন্যরা ঢাকার প্রবেশদ্বার মিরপুর ব্রিজে পৌঁছে শত্রুদের হতবাক করে দেয়, তখন থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত গোলাবর্ষণ চলছিল।
তিনি বলেন, নাগরা সকালে মিরপুর ব্রিজের পাশে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন, অপর পাশে শত্রু সৈন্য মোতায়েন করা ছিল।

‘তিনি (নাগরা) আমাদের জানান যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে সম্মত হয়েছে এবং আমরা লে. জে. এএকে নিয়াজির জন্য একটা বার্তা নিয়ে যাচ্ছি। এই বার্তায় বলা হয়, ‘প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখানে আছি। খেলা শেষ হয়েছে,আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি নিজেকে আমার হাতে তুলে দিন এবং আমি আপনার বিষয়টি দেখবো।’

শর্মা বলেন, নাগরার সহযোগী ক্যাপ্টেন হিতেশ মেহতার সাথে নিয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুট্যান্ট হিসাবে তাকে নিয়াজির কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হয়, তারা নিয়াজির জন্য নাগরার হাতে লেখা বার্তা নিয়ে একটি জিপে উঠেন, তারা দুজন এক অপরের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন।

তিনি বলেন, দুইজন অফিসার জিপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অপর অফিসার মেজর জে এস শেঠি এবং লেফটেন্যান্ট তেজিন্দর সিং জিপটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং আসন্ন বিপদের ঝুঁকি উপেক্ষা করে আমরা সকলেই আত্মসমর্পণের বার্তা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য এবং ইতিহাস সৃষ্টির জন্য উত্তেজিত ছিলাম।

শর্মা লিখেছেন, ‘অপর পাশে থাকা পাকিস্তানি আর্মি আত্মসমর্পণের নির্দেশনা পায়নি এটা আমরা খুব কমই জানতাম। ব্রিজ অতিক্রম করতে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে তারা গুলি ছোঁড়ে, আমরা তখন থামলাম।’

‘আমার সব উদ্ভাবনা কাজে লাগিয়ে, আমি চেঁচিয়ে তাদের গোলাগুলি বন্ধ করতে বললাম। গুলি বন্ধ হলো।’

তবে, শর্মা বলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা ঘিরে ফেলে ভারতীয় ক্ষুদ্র সেনাদলকে নিরস্ত্র করে, তিনি একজন পাকিস্তানি জুনিয়র কমিশন অফিসার ইনচার্জকে একজন সিনিয়র অফিসারকে ফোন করতে বলেন।
ভারতীয় ক্যাপ্টেইন একই সঙ্গে ‘তাকে (জেসিও) হুমকি দিয়ে জানিয়ে রাখেন তাদের যেন কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করা না হয়, ভারতীয় আর্মি ঢাকা ঘিরে রেখেছে এবং তাদের জেনারেল আত্মসমর্পণে সম্মত হয়েছেন।’

শর্মা বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে’ শিগগিরই একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেইন এসে তাদের মিরপুর গ্যারিসনে নিয়ে যান, সেখানকার কমান্ডার তাদের অপেক্ষা করতে বলেন এবং প্রায় এক ঘন্টা পরে সেখানে ঢাকা গ্যারিসনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ আসেন।’

জামশেদসহ তারা মিরপুর ব্রিজে ভারতীয় আর্মির জিপে ফিরে আসেন, এ সময় এক পাকিস্তানি তাদের অনুসরণ করে, ‘আমাদের সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও ফেরার পথে আমাদের লক্ষ্য করে পুনরায় গুলি চালানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘মেজর শেঠির বাম পায়ে মাঝারি মেশিনগানের একটি গুলি লাগে এবং মাঝখানে ডানদিকে অপর একটি বুলেট সিংয়ের হেলমেটে আঘাত করে। তবে, ভাগ্যক্রমে আমরা রক্ষা পাই,
‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং আমরা ব্রিজের আমাদের অংশে ফিরে আসি।’

শর্মা লিখেছেন, ‘জেনারেল নাগরা কর্নেল পান্নুর সঙ্গে শিগগিরই ফিরে এলেন এবং পাকিস্তানি জেনারেল জামশেদ তাদের স্বাগত জানান, জামশেদ আত্মসমর্পন করেন এবং তার পিস্তল নাগরার কাছে হস্তান্তর করেন।’

এর অল্প সময়ের মধ্যেই সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ভারতীয় কর্মকর্তারা নিয়াজীকে নাগরার বার্তা পৌঁছে দিতে পুনরায় ঢাকায় ঢুকলেন।

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর সিদ্দিক সালিক তার উইটনেস টু স্যারেন্ডার বইয়ে ভারতের ইস্টার্ন ফ্রন্ট’র জেনারেল স্টাফ চিফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকবের আলোচনার ঘন্টাখানেক পরে আত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রাক্কালে তখনকার ঘটনাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন।

সিদ্দিক সালিকের বইয়ে বলা হয়, নিয়াজি নাগরার বার্তা পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নেভি কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরিফ এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উপস্থিত সিনিয়র পাকিস্তানি জেনারেলদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘তারা উভয়ই ঢাকা রক্ষায় যথেষ্ট শক্তি না থাকায় নিয়াজিকে নাগরার আহ্বানে সাড়া দেয়ার পরামর্শ দেন।’

সালিক লিখেছেন, ‘জেনারেল নিয়াজি নাগরাকে অভ্যর্থনা জানাতে মেজর জেনারেল জামশেদকে পাঠান।’

সূত্র : বাসস