Dhaka ০৮:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ব্রিটেন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১১৪ Time View

ব্রিটেনের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে একটি নতুন ধরণের এবং অধিক সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

স্থানীয় সময় গত রাত এগারোটা থেকে ফ্রান্স ৪৮ ঘন্টার জন্য ব্রিটেনের সাথে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

এর ফলে ব্রিটেনের ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে পার হয়ে সকল গাড়ি ও ট্রাকের ফ্রান্সে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে দু-প্রান্তেই অসংখ্য গাড়ি ও ট্রাক আটকা পড়েছে। জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং কানাডা ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা আজ এক বৈঠকে ব্রিটেনের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারতও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে শেয়ারবাজারে। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামেও পতন ঘটেছে।

নতুন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে কয়েকদিন আগে জানান ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের পটভূমিতে গতকাল হঠাৎ করেই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশ জুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।

নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?

ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন। তবে এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনো পাননি।

এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের টিকা যে ভিন্ন ফল দিতে পারে – এমন কথাও তারা বলছেন না।

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যে কোন ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন ধরণের ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে অতি সহজে, অতি দ্রুত

যেটি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হলো, এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে।

সংস্থাটি বলছে, এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেই এই কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। তিনি এমন ইঙ্গিতও দেন যে এবারের কঠোর লকডাউন দু‌’মাস ধরে চলতে পারে।

ক্রিসমাসের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেয়া সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাত্র কয়েকদিন আগেই ক্রিসমাসের সময় বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা বলছিলেন এবং তার কথা ছিল, এটা না করলে তা হবে অমানবিক।

কিন্তু তিনদিনের মাথায়, তাকে সেই পরিকল্পনা শুধু বাদই দিতে হলো না, উল্টো আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলো। এ বছরের শুরুতে যে ধরণের কঠোর লকডাউন ইউরোপে দেখা গিয়েছিল, এখন লন্ডন এবং আশেপাশের এলাকা আবার কার্যত সেরকম লকডাউনের আওতায় আসলো।

সূত্র: বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ব্রিটেন

Update Time : ০৪:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

ব্রিটেনের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে একটি নতুন ধরণের এবং অধিক সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

স্থানীয় সময় গত রাত এগারোটা থেকে ফ্রান্স ৪৮ ঘন্টার জন্য ব্রিটেনের সাথে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

এর ফলে ব্রিটেনের ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে পার হয়ে সকল গাড়ি ও ট্রাকের ফ্রান্সে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে দু-প্রান্তেই অসংখ্য গাড়ি ও ট্রাক আটকা পড়েছে। জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং কানাডা ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা আজ এক বৈঠকে ব্রিটেনের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারতও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে শেয়ারবাজারে। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামেও পতন ঘটেছে।

নতুন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে কয়েকদিন আগে জানান ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের পটভূমিতে গতকাল হঠাৎ করেই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশ জুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।

নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?

ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন। তবে এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনো পাননি।

এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের টিকা যে ভিন্ন ফল দিতে পারে – এমন কথাও তারা বলছেন না।

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যে কোন ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন ধরণের ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে অতি সহজে, অতি দ্রুত

যেটি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হলো, এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে।

সংস্থাটি বলছে, এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেই এই কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। তিনি এমন ইঙ্গিতও দেন যে এবারের কঠোর লকডাউন দু‌’মাস ধরে চলতে পারে।

ক্রিসমাসের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেয়া সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাত্র কয়েকদিন আগেই ক্রিসমাসের সময় বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা বলছিলেন এবং তার কথা ছিল, এটা না করলে তা হবে অমানবিক।

কিন্তু তিনদিনের মাথায়, তাকে সেই পরিকল্পনা শুধু বাদই দিতে হলো না, উল্টো আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলো। এ বছরের শুরুতে যে ধরণের কঠোর লকডাউন ইউরোপে দেখা গিয়েছিল, এখন লন্ডন এবং আশেপাশের এলাকা আবার কার্যত সেরকম লকডাউনের আওতায় আসলো।

সূত্র: বিবিসি