থাইল্যান্ডের বিক্ষোভকারীরা রাজপ্রাসাদের কাছে একটি ফলক বসিয়েছে যাতে ঘোষণা করা হয়েছে: “থাইল্যান্ড জনগণের … রাজার নয়।” একে রাজা মাহা ওয়াচিরালংকনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ বলেই দেখা হচ্ছে।

প্রধানত ছাত্রদের নেতৃত্বে গত জুলাই মাস থেকে যে বিক্ষোভ চলছে, তার মূল দাবি : থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র আর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে হবে। চলতি সপ্তাহান্তে যে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ হয়েছে এমনটি গত কয়েক বছরের মধ্যে দেখা যায়নি। কিন্তু রাজতন্ত্রে সংস্কারের দাবি থাইল্যান্ডে খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। সে দেশে কেউ রাজার সমালোচনা করলে তার দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

রাজতন্ত্রের সংস্কারের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুত জান-ওচার পদত্যাগের দাবী জানাচ্ছে। তিনি ২০১৪ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং গত বছর এক বিতর্কিত নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসের কাছে এক রাজকীয় মাঠে যে ধাতব ফলকটি বসানো হয়েছে তাতে তারিখ দেখানো হয়েছে ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ এবং তাতে থাই ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে: “জনগণ এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে যে এই দেশ জনগণের সম্পত্তি, রাজার নয়।”

আয়োজকরা বলছেন, ১৯৩০ সালে থাইল্যান্ডে সর্বময় ক্ষমতাধর রাজতন্ত্রের অবসানের পর যে ফলকটি বসানো হয়েছিল – সেই জায়গাতেই এই নতুন ফলক বসানো হয়েছে। আগেরটি ২০১৭ সালে চুরি যায়। এই বিক্ষোভের সময় পুলিশ কোন ধরনের বাধা দেয়নি।

কেন এই বিক্ষোভ?

থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গোলযোগের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু এই নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন সে দেশের আদালত একটি নবগঠিত গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করার রায় দেয়।

ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি (এফএফপি) থাই তরুণ এবং প্রথমবারের ভোট দাতাদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল। গত বছর মার্চ মাসের নির্বাচনে দলটি সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছিল। ঐ নির্বাচনেই সামরিক অধিনায়করা নির্বাচিত হন।

কিন্তু জুন মাসে একজন জনপ্রিয় গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারী ওয়ানচালরাম সাকসাতসিত প্রতিবেশী দেশ ক্যাম্বোডিয়া থেকে গুম হওয়ার পর বিক্ষোভ আবারও দানা বাঁধতে শুরু করে। থাইল্যান্ডে অভ্যুত্থানের পর থেকে ওয়ানচালরাম সেখানে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন।

তিনি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন যে তার অপহরণের পেছনে থাই রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত রয়েছে। কিন্তু সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এরপর থেকেই ছাত্ররা এই আন্দোলনের সামনের কাতারে চলে আসে এবং নিয়মিতভাবে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।

তাদের দাবী – অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুত জান-ওচার সরকারকে বরখাস্ত করতে হবে, নতুন করে থাই সংবিধান লিখতে হবে, এবং সরকারের সমালোচকদের হেনস্তা করা চলবে না।

এই আন্দোলন কেন ভিন্ন?

মূলত সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ গত মাসে হঠাৎ করেই রাজার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে মোড় নেয়। ব্যাংককে এক জনসমাবেশে রাজতন্ত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে ১০-দফা দাবিনামা পেশ করা হয়। এই ঘটনায় থাইল্যান্ড জুড়ে প্রবল আলোচনা শুরু হয়। থাইল্যান্ড এমন এক দেশ যেখানে মানুষকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় রাজাকে ভালবাসতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। আর তা না করলে শাস্তি পেতে হবে।

পানুসায়া সিথিজিরা ওয়তানাকুল নামে যে তরুণী এই দাবি নামা পেশ করেন – তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য রাজতন্ত্র ধ্বংস করা না, বরং একে আধুনিক করা এবং বর্তমান সমাজব্যবস্থার উপযোগী করে গড়ে তোলা।

কিন্তু তিনি এবং তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘চুং চার্ট’-এর অভিযোগ করা হয়। এই থাই শব্দ দুটির মানে হলো নিজের জাতিকে যে ঘৃণা করে। কিন্তু ন্যায়ের পথে থেকে, গলায় প্রতিবাদের সুর তুলে তারা নিজেদের চরম ঝুঁকির মুখে ফেলছেন বলেও এই তরুণ বিক্ষোভকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে