আশরাফুল ইসলাম সুমন(ক্রাইম রিপোর্টার):
দলিল সম্পাদনার পর জমির দাগ-খতিয়ান ভুল হলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করলে আদালত ইচ্ছে করলে দাগ-খতিয়ান ঠিক করে দিতে পারে। তবে নাটোরের সিংড়া উপজেলার আগপাড়া শেরকোল গ্রামের মৃত ইয়াতুল্লাহ মোল্লার ছেলে আফছার আলী বাড়িকে আদালত বানিয়ে জমির মুল দলিলের দাগ-খতিয়ান তিনি নিজেই ওভার রাইটিং করে নিয়েছেন। ঢাকা সুপ্রিম কোর্ট ও নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবি জানান, জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৪৬৭/৪৬৮ ধারায় আদালতে মামলা করা যেতে পারে।
জানা যায়, উপজেলার শেরকোল ইউপির আগপাড়া শেরকোল গ্রামের মৃত আজগর আলী ও তার স্ত্রী মৃত নকিরন নেছা ১৯৫৭ সালে সাবেক ৯৫৮ দাগের ২৯ শতাংসের কাত ২০ শতাংস এবং ৬৯২ দাগের ৩৩ শতাংসের কাত ১৩ শতাংস জমি কিনে ভোগদখল ও বসবাস করতে থাকেন। রেকর্ডে স্বামীর অংশসহ পুরো জমি নকিরন নেছার একক নামে হয়। নকিরন নেছার পেটের সন্তানাদি না থাকায় স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে দিয়ে সতিনের ছেলেকে তার দলিল মোতাবেক ওই দাগের অংশ লিখে দেন। এরপর ২৯/০১/১৯৭৩ সালে খোদাবক্স ও খলিল মন্ডলের কাছে ৬৯২ দাগের ৩৪ শতাংসের কাত ২৬ শতাংস জমি বিক্রি করার ৪/৫ মাসের মাথায় মারা যান নকিরন নেছা। তার মৃত্যুর পর প্রতিবেশী মৃত ইয়াতুল্লাহ মোল্লার ছেলে আফছার আলী ০৪/০৯/১৯৭৫ সালে অন্যলোককে নকিরন নেছা সাজিয়ে ৯৫৮ দাগের ২৯ শতাংসের কাত ২৫ শতাংস জমির ভুয়া দলিল করে। তাড়াহুড়া করে দলিল করায় দাগ-খতিয়ান ভুল হয়।
পরে দলিলের ফটোকপিতে দাগ ও খতিয়ান “ওভার রাইটিং” করে গোপনে নামজারী করে নেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে আনোয়ার হোসেন, আফছার আলীর নামজারী বাতিল চেয়ে সিংড়া উপজেলা ভূমি অফিসে একটি মিসকেস মামলা দায়ের করে। প্রায় দুই বছর উভয় পক্ষের দালিলিক প্রমানাদি ও সাক্ষ্য প্রমানের ভিক্তিতে আফছার আলীর নামজারী বাতিল করে উপজেলা ভূমি অফিস। এবার ভুমিদুস্য আফছার আলী তার মুল দলিলের দাগ ও খতিয়ান “ওভার রাইটিং” করে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে (রাজস্ব) বিভাগে আপিল করেছেন।
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রের ভূমি আইনের (১৫০)’র” উপ-ধারায় বলা হয়েছে, দলিল সম্পাদনার পর যদি কোন দলিলের খতিয়ান, দাগ অথবা নামের বানান ভুল হলে দুই-তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানী আদালতে ভুল সংশোধনের মামলা করলে আদালত ইচ্ছে করলে ভুল দাগ-খতিয়ান ঠিক করে দিতে পারে।
উল্লেখ্য দেশ স্বাধীনের পর থেকে অদ্যবদি ওই জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছেন আনোয়ার হোসেন। তবে আফছার আলী আদালতের তোয়াক্কা না করে বাড়িতে বসে নিজেই তার মুল দলিলের দাগ-খতিয়ান “ওভার রাইটিং” করে নিয়েছেন।
শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবিব জানান, আফছার আলীর দলিলের দাতা নকিরন নেছা ১৯৭৩ সালে মারা গেছেন। সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদনেও একই সাল উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা সুপ্রিম কোটের আইনজীবি শাহ্ আহমেদ বাদল এবং নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবি সাইদুর রহমান সৈকত বলেন, আদালতে মামলা না করে নিজে নিজে দাগ-খতিয়ান ওভার রাইটিং করলে ওই দলিল বাতিল যোগ্য এবং জাল দলিল হিসেবে গণ্য হবে। জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৪৬৭/৪৬৮ ধারায় মামলা করা যেতে পারে।