চলমান করোনা সংকটকে ঘিরে চার মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কবে খুলবে এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি কাটাতে অনেকটা তোড়জোড় করে অনলাইন ক্লাস চালু করলেও খুব একটা কাজে আসছে না। আর এ সংকটকে আরও গুরুতর করে তুলেছে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো।
শুরু থেকেই বলে আসা হয়েছে, অনলাইন ক্লাস শুধু শিক্ষার্থীদের অধ্যায়নের মধ্যে রাখার জন্যই চালু হয়েছে। তাই, পরীক্ষার বিষয়টা আপাতত মাথায় নেই। ফলে, এসব পরীক্ষা কবে নেয়া হবে সরকারের তরফ থেকে এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। তবে, সামনে যেসব পরীক্ষা রয়েছে, তার করণীয় ঠিক করতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে।
আর এর প্রথম ধাপ হিসেবে চলতি বছর বাতিল করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসএসি) পরীক্ষা। একইসঙ্গে হচ্ছে না মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা।
গত সপ্তাহে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জাতীয় একটি দৈনিকের খবরে জানা গেছে।
উভয় মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি সারসংক্ষেপ তৈরি হচ্ছে। আগামী রোববারের মধ্যে এটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হতে পারে বলেও তাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, সমাপনী পরীক্ষা না হলেও এই দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। এই ফলের ওপর ভিত্তি করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে মেধাবৃত্তি দেয়ার চিন্তা করছে সরকার।
সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে।
আর ডিসেম্বরের মধ্যে তা সম্ভব না হলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে ‘অটো-পাস’ দিয়ে তুলে দেয়া হবে। এই উভয় ক্ষেত্রেই পাঠ্যবই বা সিলেবাসের যে অংশটুকু পড়ানো সম্ভব হবে না তার অত্যাবশ্যকীয় পাঠ পরের শ্রেণিতে দেয়া হবে। এজন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘কারিকুলাম ম্যাপিং’ করে দেবে। এ লক্ষ্যেই আগামীকাল বুধবার এনসিটিবিতে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের বৈঠক শুরু হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের নূন্যতম ঝুঁকিতে ফেলা হবে না জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে তখনই শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে। যেহেতু কবে প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তা আমরা জানি না। তাই একাধিক বিকল্প হাতে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে।’
আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন জানান, ‘করোনায় শিক্ষায় ক্ষতি পূরণে বিশেষ করে সামনে কোন মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সে সংক্রান্ত একটা খসড়া প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। মতামতকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ নিয়ে এনসিটিবি কাজ করবে।