মাত্র ছয় মাস আগে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার (এসি) প্রস্তুতকারকদের ওপর করপোরেট কর দ্বিগুণ করার পর এবার তাদের পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর ফলে এবারের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে এসি-ফ্রিজের দাম বাড়বে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশি ইলেকট্রনিকস খাত।
সোমবার আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমানে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনে ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে বাজেটে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও এর কম্প্রেসরের উৎপাদনের জন্য কতিপয় প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশীয় ফ্রিজ ও এসির উৎপাদকেরা কারখানা থেকে সরবরাহ পর্যায়ে এই ভ্যাট দেন। এই হার ১৫ শতাংশ করা হলে ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবেন। ফ্রিজ ও এসির উপকরণ বা যন্ত্রাংশ সাধারণত প্রতিষ্ঠিত সরবরাহব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়।
ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রোমার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার জাগো নিউজকে বলেন, ভ্যাট দ্বিগুণ হলে ফ্রিজের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা ও এসির দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও ঘুরে দাঁড়ায়নি। এই উদ্যোগে ক্রেতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস খাত মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। রপ্তানিও বাড়ছে। এমন সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে।
চলতি বছরের শুরুতে এসি ও ফ্রিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়কর দ্বিগুণ করে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে ইলেকট্রনিকস শিল্পের করে ছাড় দিয়েছে সরকার। এসব শিল্পের করপোরেট কর, কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে কর ছাড় দেওয়ায় দেশে এক ডজনের বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
এসব শিল্প ২০২১ সাল থেকে যন্ত্রপাতি আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি এবং আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দেওয়ার সুবিধা পেয়ে আসছিল। এসব সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকার কথা ছিল। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসারে করপোরেট কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন এসির বাজারের দুই-তৃতীয়াংশই দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। বর্তমানে বছরে গড়ে সাত লাখ এসি বিক্রি হয়। দ্রুত এ খাতের চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে ফ্রিজের বাজারেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী অবস্থান আছে। প্রতি বছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়।