জেলেরা ট্রলার ও নৌকা বোঝাই করে প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ধরছে ইলিশ। বাজারগুলো সয়লাব ইলিশে। তবুও ইলিশের দাম চড়া। বাজারে কেজি প্রতি এক হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। চাহিদার তুলনায় ইলিশের যোগান অনেক বেশি থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যসত্ত্বভোগীরা এসব ইলিশ স্টক করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। কারণ এতো বেশি টাকা দিয়ে ইলিশ ক্রয় করে খাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে মাছ কেনার ইচ্ছা থাকলেও সেই সাধ্য তাদের নেই। 

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ইলিশের পাশাপাশি সমুদ্রে ধরা পড়ছে আরও বহু প্রজাতির মাছ। যেমন-রূপচান্দা, ছুরিমাছ, ম্যাকারেল, সুন্দর বাইলা, চিংড়ি, লইট্টা, খল্লা, লাখুয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তুলনামূলক এসব সামুদ্রিক মাছের দাম কম হলেও ইলিশের দাম কেন কমছে না তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের। এসব মাছ আসে প্রাকৃতিকভাবে। কোনো উৎপাদন খরচ নেই। তবুও কেন দাম বেশি?

নদ-নদীর নাব্য হ্রাস, পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচারে জাটকা নিধন ও মা মাছ আহরণের ফলে একটা সময় নদীতে আকাল দেখা দিয়েছিল ইলিশের। তবে সরকারের পদক্ষেপে গত কয়েক বছরে সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। নানামুখী উদ্যোগে আবারো নদীতে ফিরতে শুরু করেছে ইলিশের ঝাঁক। বেড়েছে উৎপাদন।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৯০ লাখ টন। এর এক দশক পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় মাছটির উৎপাদন বেড়ে ৫ দশমিক ৩৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। শিগগিরই উৎপাদন সাড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে মোট উৎপাদিত মাছের ১২ দশমিক ১৫ শতাংশই আসে শুধু ইলিশ থেকে। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশেরও বেশি।

দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেকগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন নতুন অভয়াশ্রম গড়ে তোলার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ইলিশের বিচরণক্ষেত্রগুলো। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা নিধন বন্ধে নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ অভিযান। সে সঙ্গে মৎস্যজীবীদের মধ্যে বাড়ানো হচ্ছে সচেতনতা। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নদীতে জাল ফেলা বন্ধ রাখতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তাদের দেয়া হচ্ছে চাল ও আর্থিক সহায়তা। আর এসবেরই সুফল মিলছে ইলিশ উৎপাদনে। কিন্তু ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও তার সুফল পাচ্ছে না ক্রেতারা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির কম ইলিশ বিক্রি এক হাজার টাকার নিচে হলেও এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত। এ নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষি।

ইলিশ কিনতে আসা এক ক্রেতা জানান, পাঁচটা ইলিশের ওজন হয়েছে সাত কেজি। দাম নিয়েছে সাত হাজার টাকা।

এক খুচরা বিক্রেতা জানান, আড়ৎদার থেকে ক্রেতারা ৮০০ টাকা করে মাছ কিনে নিয়ে যায়। এতে আমাদের কাছে ৭০০ টাকা করে তারা মাছ বিক্রি করে না। এই দামে কিনে বাজারে কত দামে বিক্রি করবো?

বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি দেখা গেলেও কেন কমছে না দাম? এমন প্রশ্নে আড়ৎদাররা বলছেন, চাঁদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রামের মোকাম থেকে কমেছে ইলিশের যোগান। এতেই চড়েছে দাম।

সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের দাবি, ইলিশের মৌসুমে সবারই ইলিশ খেতে ইচ্ছা করে। যেহেতু ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বাজারে ইলিশের দাম কমানো উচিত। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের। প্রয়োজনে এ উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে