Dhaka ০১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে : নাহিদ ইসলাম

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • 33

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে ঢাকায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এনসিপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক পথ কেবলমাত্র জনআকাঙ্ক্ষা ও কাঠামোগত সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সনদ শুধুমাত্র একটি নীতিগত দলিল নয় বরং জুলাই আন্দোলনে যারা রাস্তায় নেমে পরিবর্তনের স্বপ্নে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতাও বটে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই ‘জুলাই সনদ’ জুলাই আন্দোলনের নির্বাচন সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণের একটি সুস্পষ্ট ভিত্তি স্থাপন করবে এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করবে।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে—এ প্রেক্ষাপটে এনসিপি সরকারের পদক্ষেপ ও অন্যান্য রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আশা করছে, ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও ঘোষণার প্রক্রিয়া আর বিলম্বিত না হয়ে যথাযথ আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে—যাতে শহীদদের আত্মত্যাগ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পাবে।

তিনি নির্বাচন কমিশনের কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। এনসিপি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবির পুনরুল্লেখ করে—যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনবিশ্বাস ও আস্থা পুনঃস্থাপন করবে। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং পরবর্তীতে একটি গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির কথা জানান, যাতে সব পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এনসিপি প্রতিনিধি দলের সামগ্রিক রাষ্ট্র ভাবনাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং তাদের চিন্তাশীল অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি চীনের ‘অ-হস্তক্ষেপ’ (নন-ইন্টারফেয়ারেন্স) নীতির পুনরুল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতার ব্যাপারে চীনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ধারাবাহিক ও গঠনমূলক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে তরুণদের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম এবং যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসীন রিয়াজ। দুই পক্ষই পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মানজনক সংলাপ এবং কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

চীনা দূতাবাসের উষ্ণ আতিথেয়তা ও মুক্ত মনোভাব নিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য এনসিপি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে : নাহিদ ইসলাম

Update Time : ১২:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে ঢাকায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এনসিপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক পথ কেবলমাত্র জনআকাঙ্ক্ষা ও কাঠামোগত সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সনদ শুধুমাত্র একটি নীতিগত দলিল নয় বরং জুলাই আন্দোলনে যারা রাস্তায় নেমে পরিবর্তনের স্বপ্নে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতাও বটে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই ‘জুলাই সনদ’ জুলাই আন্দোলনের নির্বাচন সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণের একটি সুস্পষ্ট ভিত্তি স্থাপন করবে এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করবে।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে—এ প্রেক্ষাপটে এনসিপি সরকারের পদক্ষেপ ও অন্যান্য রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আশা করছে, ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও ঘোষণার প্রক্রিয়া আর বিলম্বিত না হয়ে যথাযথ আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে—যাতে শহীদদের আত্মত্যাগ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পাবে।

তিনি নির্বাচন কমিশনের কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। এনসিপি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবির পুনরুল্লেখ করে—যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনবিশ্বাস ও আস্থা পুনঃস্থাপন করবে। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং পরবর্তীতে একটি গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির কথা জানান, যাতে সব পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এনসিপি প্রতিনিধি দলের সামগ্রিক রাষ্ট্র ভাবনাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং তাদের চিন্তাশীল অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি চীনের ‘অ-হস্তক্ষেপ’ (নন-ইন্টারফেয়ারেন্স) নীতির পুনরুল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতার ব্যাপারে চীনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ধারাবাহিক ও গঠনমূলক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে তরুণদের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম এবং যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসীন রিয়াজ। দুই পক্ষই পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মানজনক সংলাপ এবং কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

চীনা দূতাবাসের উষ্ণ আতিথেয়তা ও মুক্ত মনোভাব নিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য এনসিপি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।