অনলাইন নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আর সেলক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজারে নির্মিত খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রথম পর্যায়ে ৬০০ পরিবারের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্পের পাঁচতলা বিশিষ্ট ২০টি ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২৫৩ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পে মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে, যেখানে চার হাজার ৪০৯টি পরিবার বাস করতে পারবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকের জন্য একটি ঘর সরকারের পরিকল্পনা। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙনে যারা গৃহহীন হয়েছে তাদের পুর্নবাসনেও সরকার কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছিল। গৃহহারা লোকজন সে সময় আশ্রয় নিয়েছিল শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে বালিয়াড়ী ও ঝাউবাগান এলাকায়। কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে তারা আবারও গৃহহারা হয়। জলবায়ু উদ্বাস্তু এসব পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সরকার। প্রকল্পের আওতায় আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচতলা বিশিষ্ট মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে যাতে পুনর্বাসিত হবে চার হাজার ৪০৯টি পরিবার। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত হয়েছে ১৯টি ভবন। আজ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লটারির মাধ্যমে ৬০০ পরিবারের হাতে তুলে দেন সুসজ্জিত ফ্ল্যাটের চাবি। প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হলে তালিকাভুক্ত পরিবারগুলো পর্যায়ক্রমে ফ্ল্যাট পাবে।
এ প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় পাওয়া মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।
খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রকল্প এলাকায় ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।
এ ছাড়া থাকবে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, পুকুর-খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ফ্ল্যাট পাবে তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। প্রকল্প এলাকায় একটি শুঁটকি মহালও থাকবে এবং এখানে পর্যায়ক্রমে বিক্রয়কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তুলবে সরকার।
ভবনগুলোর নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রেখেছেন। ভবনগুলো হলো দোঁলনচাপা, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালি, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, ইনানি ও সাম্পান।
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি। এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল।
২০১৯ সালে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের এই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার কথাও উল্লেখ করেন প্রকল্প পরিচালক।
একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়নেরই অংশ এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। এটি ছাড়া গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে।
প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজারের রামুতে সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটি অত্যন্ত নয়নাভিরাম একটি জায়গা। এই জায়গাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য মাটিকে অনেক উঁচু করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের নিচের তলায় কোনো ফ্ল্যাট রাখা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হলে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকারও আশঙ্কা নেই।