সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা প্রতিনিধি :

একদিকে দীর্ঘদিন ধরেই করোনার আবহে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে, কোন  রোজগার নেই  ,জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বাঁকুুুড়া  জেলার  তিন মহকুমার  ২২ টি ব্লকে। বাঁকুড়ার বহু পরিযায়ী মানুষ  বেরোজগারি  হয়ে পড়েছেন। যে টুকু সঞ্চয়, তা শেষ  হওয়ার পথে।সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার নির্বাচনের জন্য ১০০ দিনের কাজ  বন্ধ। বিশেষ করে মেহনতি মানুষ ও  নিন্ম মধ্যবিত্তদের অবস্থা সবচাইতে  শোচনীয়। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে আদিবাসী শিশুরা অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির  জন্য  সমাজের নানা ধরনের মানুষএগিয়ে এসেছেন।  শিশুদের জন্য খুলেছে  কমিউনিটি কিচেন সেন্টার।

বহু  স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন । বেশ কিছু  সমাজের মানুষ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে  কমিউনিটি কিচেনের আয়োজন করেছেন।  পাড়ায় পাড়ায় তরুণ সমাজ  মূলত কমিউনিটি  কিচেনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে  নিয়েছে। বহু পেশার মানুষ নীরবে  সাহায্য   করে  চলেছেন। বহু  শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, ব্যবসায়ীরা ও নানা পেশার মানুষ টাকা দিয়ে  সাহায্য করে চলেছেন। অনেকে নাম প্রকাশ  অনিচ্ছুক। বেশ কিছু জায়গায় উচ্চ শিক্ষিত যুবকরা নিজেরাই চাঁদা তুলে কমিউনিটি কিচেন সেন্টার চালাচ্ছে।

সোনামুখী, খাতড়া, সিমলাপাল, বড়জোড়া, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুর, ওন্দা, কোতুলপুর, রানিবাঁধের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি কিচেনের সাহায্যে লকভাউনে দীর্ঘ সময়ে ধরে পেটের ক্ষুধা দূরীকরণের মানবিক প্রয়াস প্রমাণ করে  শেষ পর্যন্ত,  মানুষের পাশে ও সাথে  মানুষই থাকে। এই অসাধারণ কাজে  জেলার মানুষ খুব খুশি। এই প্রচেষ্টাকে  সাধুবাদ জানাচ্ছে  জেলাবাসী।

নানান ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানলাম- ” মানুষ মানুষের জন্য, সামান্য  সাহায্য করে  তা ফেসবুকে দিতে নারাজ। প্রচারবিমুখ মানুষগুলো  নীরবে মানব সেবা করতে চান। ”  বেশ কিছু   পরিবার  জন্মদিন উপলক্ষে  নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত  শিশুদের জন্য  কমিউনিটি কিচেন খুলে  সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

  মানুষের জন্য পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই – সময়ে -অসময়ে মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা যুগে যুগে একটি বার্তাই দিয়েছে যে মানবতাই শক্তি, মানবতাই মুক্তি এখন যুদ্ধ নয়—মানবতা দিয়েই পৃথিবী গড়তে চায় অনেক মানুষ।মানুষ জানে শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকাই বেঁচে থাকা নয়,অসহায় মানুষের চোখের জল মুছে দিয়ে বেঁচে থাকার নামই হল  জীবন ।
সমগ্র জেলা জুড়ে এই ধরনের মানুষের মানবিক মুখের সন্ধান পাওয়া গেছে।  দীর্ঘ লকডাউনে সংসার চালতে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরিবারের আছে একটি ছোট্ট বাচ্চা তার প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রিক কিনতে পারছে না,লজ্জাতে কাউকে বলতেও পারছে না, তার একবন্ধু ‘ওন্দা যুবসমাজের ‘ এক সদস্যকে     বিষয়টি জানায়,  জানা মাত্রই  সাথে সাথে পরিবারের প্রধানকে তার ছেলের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রিক উপহার দেওয়ার  ব্যবস্থা করে। ওন্দা  যুব সমাজের সক্রিয় সদস্য আকাশ কুন্ডুর বক্তব্য– :আগামীদিনেও ঐ পরিবারের পাশে আমরা থাকাবো। ঐ বাচ্চাটি কে উপহার দিতে পেরে আমাদের সংগঠন গর্বিত।”  মানব সেবায়  অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ,  পরিচিত মুখ, একটি  বেসরকারি  ইঞ্জিনিয়ারিং  কলেজের  অধ্যাপক চন্দ্র  শেখর কুুণ্ড মহাশয়  বললেন–” এই মুহূর্তে রোগ  থেকে_বাঁচতে_ শিশুদের দরকার_ভরপুর_পুষ্টি
নিজের জন্মদিনে Video_Call এ আমাদের Share your special day প্রকল্পে সামিল হলেন Dr Kaberi Das সহ অনেকেই । সঙ্গে ছিলেন Dr Debi Dutta। Kaberi দিদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। খাওয়ালেন আমাদের 70+ বাচ্চাদের। আপনারা উৎসাহ দেন বলেই এগোচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “খিদে মেটে, কিন্তু পুষ্টির_চাহিদা থেকেই যায। সেইজন্যই পাঁচ_বছর আগে চার_জায়গায় শুরু করেছিলাম আমাদের প্রকল্প Share Your Special Day। আপনার বিশেষ দিনটিতে আমাদের বাচ্চাদের খাওযান পুষ্টিকর খাবার।
শুরুতে ছিলাম একদম একা। ভাবিনি এত মানুষ এগিযে আসবেন। ” বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি কিচেনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে  নানা  রাজনৈতিক দল ও রামকৃষ্ণ মিশন এবং  ভারত সেবাশ্রম সংঘ। কথা বলছিলাম  এক শিক্ষকের  সঙ্গে। নাম রাধাকান্ত  মুদি ।তিনি  ব্যক্তিগত    উদ্যোগে সামিল হয়েছেন মানুষের  সেবায়।  তিনি  জানালেন  ” সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজে সামিল হয়েছি।” মোহময় দুঃসময়ে মানুষ , মানুষের পাশে দাঁড়াক। অনুপ্রাণিত হোক অন্যান্যরাও।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে