যুদ্ধাবস্থার কারণে ইরান থেকে দেশে ফেরার পথে ২৮ সদস্যের একটি বাংলাদেশি দলকে অসুস্থতা, দীর্ঘ সড়কযাত্রা এবং পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যার মতো নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
গত ২৫ জুন তেহরান থেকে রওয়ানা হয়ে তারা রোববার (২৯ জুন) রাত পর্যন্ত করাচিতে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
জানা যায়, বাংলাদেশিরা ইরানের মারজাভেহ সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের তাফতান সীমান্ত অতিক্রম করে দেশটিতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে দীর্ঘ সড়কপথে তাদের করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার কারণে যাত্রাপথ ছিল অত্যন্ত কঠিন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও জরুরি বিভাগ জানায়, গত দুই দিনে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ঘরবাড়ি ধসে অন্তত ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জাগোনিউজকে জানান, পাকিস্তানে দিনভর বৃষ্টির মধ্যে সড়কপথে করাচি পর্যন্ত পৌঁছাতে বাংলাদেশিদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো খবর হলো, সবাই সুস্থভাবে করাচিতে পৌঁছেছেন। সোমবার (৩০ জুন) থেকে তারা ঢাকায় ফিরতে শুরু করবেন।
তিনি আরও জানান, যাত্রীদের অধিকাংশই কিডনি প্রতিস্থাপনসহ নানা জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ইরানে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ সড়কযাত্রায় অনেকে অসুস্থবোধ করছেন। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন রোগীকে নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে হয়।
এ কারণে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশের পর তাদের একরাত স্থানীয় একটি হোটেলে রাখা হয় এবং সেখানে একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাদের করাচিতে নিয়ে আসা হয়।
বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, রোববার রাতে করাচির একটি হোটেলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার থেকে তারা বিভিন্ন ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, করাচি থেকে সবার ঢাকায় ফেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সবাইকে একসঙ্গে একই ফ্লাইটে আনা সম্ভব নাও হতে পারে। প্রথমে যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন, তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানো হবে। যারা শারীরিকভাবে সুস্থ, তারা সোমবার থেকেই দেশে ফিরবেন।
উল্লেখ্য, ইরান থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রায় ২৫০ বাংলাদেশি তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন। তাদের পর্যায়ক্রমে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কিছুটা কমে আসায় পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই স্বাভাবিক। এ কারণে অনেক প্রবাসী এখন আর দেশে ফিরতে চান না।
বর্তমানে ইরানে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে তেহরানেই রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন।