সঠিক ও স্বচ্ছ রাজনীতিই নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নারীকে বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যে নারীর পিতা নেই বঙ্গবন্ধু নিজেই সেই সব নারীর পিতা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আর এখন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথ সুগম করেছেন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) বিশেষ আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আমেনা বেগম, সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী ও এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার। সঞ্চালনায় ছিলেন আহমেদ মুশফিকা নাজনীন ও ফারজানা আঁখি।

এ সময় একুশে টেলিভিশনে কর্মরত নারী সাংবাদিক, বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও কলাকুশলীদের উপস্থিতিতে কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

কেক কেটে নারী দিবসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

কেক কেটে নারী দিবসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি বলেন, যে রাজনীতি নারীর অধিকার কেড়ে নিয়েছে সে রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা যতদিন নারী বিদ্বেষী রাজনীতির সঙ্গে থাকবো এবং তাদের ভণ্ডামী থেকে বের হতে পারবো না, ততদিন আমাদের পূর্ণ অধিকার পাবো না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নারীর মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের অধিকার দিয়েছেন। নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ১৯৯৭ সালে নারী নীতিমালা করেছেন। নীতিমালায় নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু নারী বিদ্বেষী রাজনীতিকরা ২০০৫ সালে নারী নীতিকে কেটেছেঁটে নারীর সম্পদ ও ক্ষমতায়নের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। বর্তমানে আবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। প্রতিটি কর্মস্থলে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রত্যেক নারীকে সংগ্রাম ভালোবাসতে হবে। ঝুঁকি নিয়েই পর্বত আরোহন করতে হবে। তবেই আমরা নেতৃত্বে আসতে পারবো।

ডা. দীপু মনি বলেন, আগে আমরা পুলিশকে দেখেছি নির্যাতনকারী হিসেবে। এখন তারা হয়েছে জনতার বন্ধু। পুলিশ প্রতিটি থানাতেই নারী সহায়তা সেন্টার খুলেছে। যেখানে একজন নারী সহজেই পুলিশের সহায়তা পাবেন। এ উদ্যোগগুলোই নারী অধিকারের প্রতি বতর্মান সরকারের বিশেষ উদ্যোগ।

মন্ত্রী কর্মস্থলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীগত বৈষম্যের কথা তুলে ধরে বলেন, একজন নারীকে ভালো পদে অধিষ্ঠিত হতে হলে সে পদে তার সমকক্ষ পুরুষের চেয়ে বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হয়। যেমন আমি যখন একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলাম, তখন একজন বলেছিল উনি কিভাবে কোন দক্ষতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন।

দীপু মনি বলেন, নারীকে পরিবার থেকে বলা হয় এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। কারণ সে হয়তো পারবে না অথবা মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে। অথচ দেখুন পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজটি কিন্তু নারীকেই দিয়েছে প্রকৃতি। কারণ প্রকৃতিই বুঝে যে নারী পারে। সে পরিশ্রমী। তাই আমরা যে মানুষ, আমরাও যে পারি সেই মানবিক অধিকারটুকুই আমরা চাই।

তিনি নারী ধর্ষনের বিষয় তুলে ধরে বলেন, নারী ধর্ষনের ভয় থেকে আমরা মুক্তি চাই। এটা শুধু ধর্ষন নয়, শক্তি প্রদর্শন, যুদ্ধ ও মামলা মকদ্দমার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ একজন ধর্ষক একবারই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হন। আর একজন ধর্ষিতা নারী প্রতিমুহূর্ত দণ্ডিত হয় সমাজের কাছে। নারী ধর্ষন হলে বলা হয় সে সম্ভ্রম হারিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন ভাবার সময় এসেছে। নারীর প্রতি ব্যবহার্য ভাষা নিয়ে ভাবতে হবে। যেমন ডাইনি ও শাকচুন্নি শব্দের কোন পুরুষবাচকতা নেই। গ্রামে একটি কথা প্রচলিত আছে কপাল খারাপ থাকলে গরু মরে, আর কপাল ভালো থাকলে বউ মরে। আমরা এই ভাষা দিয়ে নারীকে বৈষম্যে ফেলি। তাই ভাষার এ ধরণের বৈষম্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা আমরা চাই নারীর জয় হোক, নারী দিয়েই নারী পুরুষ উভয়েরই জয় হোক।

একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজকে নারী দিবসে একুশে টেলিভিশনের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পুলিশ বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন এনেছে। আজকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গেলে আমরা দেখতে পাই নারীরা কিভাবে অবদান রাখছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও নারীরা অবদান রেখেছিল। এখনো সামাজিক বাধা আছে। সব বাধা ডিঙিয়ে নারী এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তবে চলার পথে প্রতিবন্ধকতাও কমও নয়। আর তাই নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর তাগিদ একুশে টিভির সিইও’র।

তিনি বলেন, আমাদের আজকে আয়োজন ছোট হলেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইটিভির উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যেতে।

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আমেনা বেগম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে করোনাকালে পুলিশ মানুষের বন্ধু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এ সময়ে আমরা দেশের ৭০০ থানায় নারী হেল্প ডেস্ক খুলেছি। যেখানে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী। এছাড়া ট্রিপল ৯ এ ৭০ হাজার কল রিসিভ করা হয়েছে। যেখানে ১০ হাজার নারীকের উদ্ধার করা হয়েছে। নারী দিবসে আমাদের প্রত্যয় প্রতিটি নারীকে নিরাপদ করবো, প্রতিটি সন্তান তার মাকে সম্মান করবে।

সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, যে মানুষটা সংগ্রামকে ভালোবাসে সে এগিয়ে যাবে। আমি একজন সংগ্রামী শিল্পী হিসেবে চেয়েছি একজন স্বচ্চ মানুষ হিসেবে মানবিক পথে এগিয়ে যেতে। তবে আমাদের সংগ্রাম যেন সুখের হয়। নারী দিবস পালনে ক্ষতি নেই। ইটিভির আয়োজনে আমার মনে হয়েছে আজ ঈদ।

এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার বলেন, আমি যখন পর্বত আরোহন করলাম। তখন আমার পায়ের নিচে মেঘ আর মাথার উপর নীল আকাশ অনুভব করলাম। তখন আমার একবারও মনে হয়নি আমি নারী নাকী পুরুষ। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি একজন মানুষ। কিন্তু সমাজের কাছে গেলেই কেবল আমার মনে হয় আমি নারী। যখন সমাজের এ বৈষম্য থাকবে না। আমি বুঝবো তখনই পৃথিবীতে নারী পুরুষ সবাই সমান।

নারী দিবসের এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, হেড অব নিউজ কাজী মোহসীন আব্বাস, হেড অব সেলস এন্ড মার্কেটিং আলমগীর কবির, হেড অব এডমিন মেজর (অব.) নাসিম হোসেন, ডিসিএফও সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ, ভারপ্রাপ্ত সিএনই রঞ্জন সেন, প্রোগ্রাম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন শোভন, সিনিয়র বিজনেস এডিটর আতিয়ার রহমান ও ডিজিএম সুজন দেবনাথ।

সূত্র – একুশে টেলিভিশন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে