বিশেষ প্রতিনিধি, বগুড়া:

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বাপুর গ্রামের বহুল আলোচিত শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মূল হোতা কে আটক করেছে জেলা পুলিশ।

শুক্রবার ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় বগুড়ার পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশরাফ ভূঞার নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরীর নির্দেশনায়, জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাকের তত্বাবধানে পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিন, এসআই শওকত আলমসহ ডিবির একটি চৌকস টিম জেলার গাবতলী থানাধীন রামেশ্বরপুর নিশুপাড়া গ্রামের ছয় বছরের শিশু হানজালাল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন শেষে প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতার করে।
আটককৃত হত্যাকারী মনজু মিয়া (৩৪)। সে গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর নিশুপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের পুত্র।
পুলিশ আটককের পর ঘাতক মনজুর কাছ থেকে
শিশু হানজালাল কে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন দাবি ও হত্যা কাজে ব্যবহৃত একটি SYMPHONY মোবাইল ফোন। মুক্তিপনের কাজে ব্যবহৃত ২টি গ্রামীণফোন সিমকার্ড উদ্ধার করেছে।

আটকের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনজু মিয়া নিজেই হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে জানায়, মাদক সেবনের টাকা সংগ্রহ এবং সল্প সময়ের মধ্যে নিজের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য শিশু হানজালালকে অপহরন পূর্বক হত্যা করার জন্য ঘটনার ২০ দিন পূর্বে পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩/১২/২০২০ ইং দুপুর ৩টার সময় শিশু হানজালালকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। সে সময় মনজু তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিশুপাড়া বাজারস্থ ঔষধের দোকানে মাদক দ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করছিল। এমন সময় সুকৌশলে শিশু হানজালালকে দোকানে ডেকে নেয় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন শিশুটিকে চালানো জন্য দিলে মোবাইল ফোন চাপাচাাপি করা কালীন সময়ে আসামী তার দোকানের শার্টার নামিয়ে দেয়। এরপর মনজু আবারও শিশু হানজালালের সামনে মাদক সেবন করাকালে তাকে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ দাবির পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক মনজু শিশুটিকে তার দোকানে থাকা স্কসটেপ মুখে লাগানোর চেষ্টাকালে শিশুটি চিৎকারসহ ছোটাছুটি শুরু করলে সে হাত দিয়ে শিশুটির গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে লাশ বড় একটি পলিথিন ব্যাগে মোড়ায়ে স্কসটেপ দিয়ে পুরো শরীর পেচিয়ে মমির ন্যায় তৈরি করে তার দোকানের কাঠের র‌্যাকের নিচের একটি তাকের মধ্যে লুকাইয়া রেখে লাশ গুম করার পরিকল্পনার জন্য দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যায়। পরে বাড়ি থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে দোকানে ফিরে এসে লাশটি বস্তায় ভরে রাত সাড়ে ৩ টায় লাশের সাথে ৩’টি ইট দিয়ে লাশ ঘটনাস্থলের অদূরে সিমেন্ট দ্বারা তৈরি রেলিংয়ের পিছনে পুকুরের পানিতে লাশটি লুকিয়ে রাখে। ঘটনার কয়েকদিন পর শিশু হানজালালের লাশের সন্ধান না হলে গত ১৯/১২/২০২০ইং তারিখে মনজু বগুড়া শহরস্থ পৌর পার্কে অবস্থানরত এক পা পঙ্গু আনন্দ কুমার দাশ নামের এক ব্যক্তিকে প্রথমে দশ টাকা ভিক্ষা দেয় এবং পরে পঙ্গু ভাতা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে তার ভোটার আইডি কার্ড ও আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে সাতমাথা এলাকায় নিয়ে গ্রামীণ সিম সংগ্রহ করে আলআমিন কমপ্লেক্স এর একটি দোকান থেকে ম্যাজিক ভয়েজ সিস্টেমের একটি SYMPHONY মোবাইল ফোন কিনে মুক্তিপন হিসেবে হানজালালের মাকে ফোনে ৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের সদস্য পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। বিষয়টি জেলা পুলিশের দৃষ্টিগোচরে আসিলে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। পরবর্তীতে গত ২১/০১/২০২১ইং তারিখ অপহরনকারী চক্রের সদস্য পরিচয়ে মোবাইল ফোনে হানজালালের মাকে জানায় তার সন্তানের লাশ পাশের পুকুরের পানিতে রয়েছে। পরে তার কথামতো ওই পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় শুধু হানজালালের লাশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে