মোছাব্বর হাসান মুসা, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি:
বগুড়ার শেরপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নকল সার কারখানার সন্ধান সেই সাথে  বিপুল পরিমাণ সার ও কীটনাশক জব্দ সহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বগুড়ায় চলতি বোরো মৌসুমকে ঘিরে গড়ে উঠা ভেজাল সার ও কীটনাশক তৈরির কারখানার সন্ধান মিলেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামে।  অবৈধ কারখানা থেকে ৩০ বস্তা ভেজাল সার ও সার তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে এই কারবারির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে শেরপুর থানা পুলিশ। ২৭ জানুয়ারি বুধবার মধ্যরাতে শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের কলোনীস্থ ওই নকল কারখানায় অভিযান চালিয়ে এসব সার ও সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা উপজেলার মহিপুর কলোনি গ্রামের হাবিবর রহমানের ছেলে জাহিদ হোসেন (৪০) ও আব্দুস সামাদ ফকিরে ছেলে আল আমিন হোসেন (৩৬)। তবে ঘটনার মূলহোতা ওই কারখানার মালিক জাকির হোসেন মিন্টু অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। তিনি পঞ্চগড় জেলার দেবিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলার মহিপুর কলোনী এলাকায় ভেজাল সার ও কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এ কাজে জড়িত সন্দেহে বাড়ির মালিক ও বাজারজাত করায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু এই ভেজাল কারবারির মূল কারিগর পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে তাকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সেখান থেকে ৩০ বস্তা ভেজাল সার, ৫০ কেজি রং, ১৫ কোম্পানির প্যাকেটের নকল লেভেল, স্প্রে মেশিন, মাটি ও ইটের খোয়ার বস্তা জব্দ করা হয়েছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মাটি ও ইটের খোয়ার সঙ্গে মিশিয়ে সার তৈরি করে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে ফসলের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হবে। তাই যেকোন মূল্যে এই চক্রটিকে রুখতে হবে। উক্ত ঘটনায় থানায় একটি মামলা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬/৭ মাস আগে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার মহিপুর গ্রামের জাহিদ হোসেনের বাড়ি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন মিন্টু নামের ব্যক্তি ভাড়া নেন। সেইসাথে তিনি পাশের আরও দুইটি গোডাউন ঘরও ভাড়া নেন। এরপর ওই বাড়িতে ভেজাল সার ওকে কীটনাশক তৈরি শুরু করেন এবং ভেজাল এসব কৃষিপণ্য বাজারজাত করা হচ্ছিল। একপর্যায়ে এই ভেজাল কারবারের বিষয়টি গোপনে পুলিশ অবগত হন। এরপর পুলিশ ওই বাড়ি ও গোডাউনে অভিযান চালিয়ে নকল সার ও কীটনাশক তৈরিকালে হাতেনাতে দুইজনকে আটকসহ ভেজাল সারের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভেজাল সার ও কীটনাশক তৈরীর ঘর ও গোডাউনের ভেতরে অন্তত ১০টি ভারতীয় কোম্পানির নাম লেখা সারের বস্তা রয়েছে। পাশেই মাটি ও ইটের খোয়া জাতীয় সার তৈরির উপকরণ, রং ও এক প্রকার আঠার স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু নামিদামি কীটনাশক কোম্পানির নাম লেখা খালি নকল প্যাকেট।
এসময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আজাদুর রহমান  বলেন, শুনেছি জাকির হোসেন মিন্টু কীটনাশক কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাই তিনি কোম্পানির পক্ষ থেকে গোডাউন ভাড়া নিয়ে সার ও কীটনাশক মজুদ করে রাখেন। এজন্য কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন দেখছি সব ভুয়া। সে নিজেই ভেজাল সার ও কীটনাশক তৈরি করতো। আর এই কারণেই রাতের আঁধারে এসব ভেজাল পণ্য আনা নেওয়া করা হতো। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে খুবই চতুরতার সঙ্গে এই কাজটি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে থানায় হাজতে আটক বাড়ির মালিক জাহিদ হোসেনের সাথে কথা বললে, তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, মালামাল মজুদ ও সরবরাহ করার জন্য তার বাসা ও গোডাউন ভাড়া নিয়েছে। এরপর থেকে সেখানে তারা কী-করছে তা আমার জানা নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে