ফ্রান্সের একটি গির্জায় যে ব্যক্তি দুই নারীসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে, তিনি কয়েকদিন আগে তিউনিসিয়া থেকে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত ২১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ইতালির রেড ক্রসের কাগজ উদ্ধার করা হয়। গত মাসে এক অভিবাসীবাহী নৌকায় ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে আসার পরে ওই কাগজটি তাকে দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।
পুলিশ তাকে গুলি করায় তিনি গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন। নিস শহরের নটরড্যাম গির্জায় বৃহস্পতিবারের হামলার শিকার একজনকে প্রায় শিরশ্ছেদ করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেছেন যে, এটি একটি “ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলা”।
ম্যাক্রঁ বলেন, “গির্জা এবং স্কুলের মতো জনসমাগম স্থানগুলোতে সুরক্ষার জন্য সৈন্য সংখ্যা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে সাত হাজার করা হবে। দেশটিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।”
বৃহস্পতিবারে ছুরিকাঘাতের এই ঘটনা এ মাসের শুরুর দিকে প্যারিসের উত্তর-পশ্চিমের একটি স্কুলের কাছে আরও একটি হামলার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। কয়েকজন ছাত্রকে নবী মোহাম্মদের বিতর্কিত কার্টুন দেখানোর কারণে কয়েকদিন পর স্যামুয়েল প্যাতি নামে একজন শিক্ষককে শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ড ফ্রান্সে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। ম্যাক্রঁ কার্টুন প্রকাশের অধিকার রক্ষায় কট্টোরবাদী ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তুরস্ক ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।
নিস হামলার সন্দেহভাজনকে পুলিশ গুলি করার আগে সে বারবার “আল্লাহু আকবর” বলে চিৎকার করছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে, সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটররা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। হামলাকারীর কাছ থেকে একটি কোরআন, দুটি টেলিফোন এবং একটি ১২ ইঞ্চি ছুরি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধান সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর জ্যঁ-ফ্রাসোয়া রিকার্ড।
“আমরা হামলাকারীর একটি ব্যাগও পেয়েছি। এই ব্যাগের পাশে দুটি ছুরি ছিল যা আক্রমণে ব্যবহৃত হয়নি,” তিনি আরও বলেন। পুলিশ সূত্র বলছে হামলাকারীর নাম ব্রাহিম আউইসাউই।
নিস সফরের পরে, ম্যাক্রঁ তার বক্তব্যে বলেন: “যদি আমাদের আবারও আক্রমণ করা হয় তবে সেটা হবে আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধের ওপর হামলা, আমাদের মাটিতে মুক্তভাবে চলার ওপর হামলা, যা কোন সন্ত্রাসবাদের সামনে মাথানত করবে না। আমি আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কোনও কিছু সমর্পণ করব না।”
বৃহস্পতিবার আরও দুটি জায়গায় হামলা হয়েছে, একটি দক্ষিণ ফ্রান্সে এবং আরেকটি সৌদি আরবে। পুলিশকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হুমকি দেওয়ার পর ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় আভিগনন শহরের কাছে মন্টফ্যাভেটে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের জেদ্দায় ফরাসী কনস্যুলেটের বাইরে এক প্রহরীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এক সন্দেহভাজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। আহত প্রহরী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কারা নিস হামলার শিকার হয়েছে?
বৃহস্পতিবার সকালে গির্জার ভেতরে ওই তিনজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। দু’জন গির্জার ভেতরেই মারা যান। ৬০ বছর বয়সী এক নারীর প্রায় শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল, এবং ৫৫ বছর বয়সী ব্যক্তির গলা কাটা হয়। হামলার শিকার ওই ব্যক্তি গির্জার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে।
৪৪ বছর বয়সী অপর এক নারী বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েও পাশের একটি ক্যাফেতে পালাতে সক্ষম হন, তবে পরে তিনি মারা যান।
পরে জানা যায় যে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী অ্যালার্ম বাড়াতে সক্ষম হন। নাগরিকদের বিশেষ সুরক্ষা দিতে নগর কর্তৃপক্ষ এই অ্যালার্মটি স্থাপন করেছিল। গির্জার কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা ক্লোই বিবিসিকে বলেছেন: “আমরা রাস্তায় অনেক লোকজনকে চিৎকার করতে শুনেছি। আমরা জানালা থেকে দেখলাম যে সেখানে অনেক অনেক পুলিশ এসেছে, এবং অনেক গুলির শব্দও পাই।”
চারজন পুলিশ কর্মকর্তা স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং হামলাকারীকে গুলি করে তাকে আটক করা হয় বলে পরেই সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর জানান। চার বছর আগে ফ্রান্সের এই নিস শহর ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছিল।
২০১৬ সালের ১৪ই জুলাই বাস্তিল দিবসের দিন একজন তিউনিসীয় জনতার ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৮৬জন নিহত হন। ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রতিবেশী দেশ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, মিশর, কাতার এবং লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এই হামলার নিন্দা জানায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা