Dhaka ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেসবুকের পর টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:২১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১২৮ Time View

ফেসবুকের পর টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।

দেশটির প্রধান ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনর নিশ্চিত করছে, তাদেরকে ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত’ গ্রাহকদেরকে ওই দুটি সাইটে ঢোকা থেকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের আটক করার কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ ক্রমেই দানা বাঁধছে। দেশটিতে সেনাবাহিনীর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে সরব হয় সাধারণ মানুষ। তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধাচারণ করে হ্যাশট্যাগ চালু করে।

দেশটিতে স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভ্যুত্থানের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ইয়াঙ্গনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় এবং অং সাং সুচির পক্ষে স্লোগান দেয়। তারা লাল রঙের রিবন পরে ছিল। লাল রং দেশটির নেত্রী অং সান সুচির দলের রং।

শুক্রবার বিকেলে কয়েকশ’ ছাত্র-শিক্ষক জড়ো হয় দাগন ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে। তারা তিন আঙ্গুলের স্যালুট প্রদর্শন করছিল- এই স্যালুট এই এলাকার বিক্ষোভকারীরা রপ্ত করেছে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে মিন সিথু নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রজন্মকে এই ধরনের সেনাবাহিনীর একনায়কতন্ত্রের কারণে ভোগান্তির শিকার হতে দিতে পারি না।’

গত সোমবার (ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান হলে সুচি এবং অন্য নেতাদের আটক করা হয়। সোমবারের পর থেকে থেকে সুচি গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। পয়লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থান বহু মানুষ ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার দেখেছে। ফেসবুকে মিয়ানমারে তথ্য ও সংবাদের প্রাথমিক উৎস। এর তিন দিন পর ইন্টারনেট সেবাদাতাদের নির্দেশ দেয়া হয় এই সামাজিক মাধ্যমটিকে ব্লক করার।

ওই নিষেধাজ্ঞার পর, হাজার হাজার ব্যবহারকারী টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে সরব হয়। তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধাচারণ করে হ্যাশট্যাগ চালু করে। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটা নাগাদ আর কেউ এ দুটি প্লাটফর্মেও ঢুকতে পারছিল না।

এ নিয়ে অভ্যুত্থানের নেতাদের কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল না। কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, মন্ত্রনালয়ের একটি দলিল তারা দেখেছে, যেখানে বলা হয়েছে এই সামাজিক মাধ্যমদুটোকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছড়িয়ে দিতে’।

এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে, নরওয়েভিত্তিক টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিনর।

টুইটারের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মানুষের কথা বলার অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ফেসবুক মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ‘মানুষের সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে, যাতে তারা পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারে।’ ইনস্টাগ্রাম ফেসবুকেরই অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান।

বিবিসির বার্মিজ বিভাগের নেইয়েন চ্যান বলছেন, সেনা অভ্যুত্থানের প্রথম ধাক্কাটা মানুষের কাছ দুর্বিসহ ছিল। কিন্তু মানুষ এখন বুঝতে পারছে, কী হয়েছে এবং তারা এখন একটা বিকল্প উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। সেনা কর্তৃপক্ষ যতটা শক্ত করে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে ঠিক সেভাবেই তাদের বিরুদ্ধে আরও মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে।

বিবিসির ওই সংবাদদাতা বলছেন, এখানকার মানুষ খুব ভালোভাবেই জানে যে সেনাবাহিনী ধরপাকড় চালাতে পারে। তাই এখনো পর্যন্ত রাস্তায় নেমে বড় ধরনের বিক্ষোভ কেউ করেনি। কিন্তু তাদের কথা যাতে মানুষ জানতে পারে সেই কারণে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে।

যে শিক্ষক শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন তিনি বলছেন, এটা তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য করেছেন। ‘আমার ১৮ মাসের একটা সন্তান আছে। আমি সেনাশাসন এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আমি প্রার্থনা করি আমার ছেলে একদম ভিন্ন রকম এক বার্মা কে বেড়ে উঠুক। এখন আমি নিশ্চিত না ভবিষ্যৎ কেমন হবে’ বলছিলেন তিনি।

মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ হয়েছে। যেটা সেনা অভ্যুত্থানের পর বড় আকারে হওয়া রাস্তার কোন বিক্ষোভ। কিছু শহর যেমন ইয়াগুনেরর বাসিন্দারা বাড়িতে রাতের বেলা বিক্ষোভে শামিল হয়েছে, তারা থালা-বাসন বাজিয়ে এবং বিপ্লবী গান গেয়ে তারা এটা করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ফেসবুকের পর টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ

Update Time : ১১:২১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ফেসবুকের পর টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।

দেশটির প্রধান ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনর নিশ্চিত করছে, তাদেরকে ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত’ গ্রাহকদেরকে ওই দুটি সাইটে ঢোকা থেকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের আটক করার কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ ক্রমেই দানা বাঁধছে। দেশটিতে সেনাবাহিনীর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে সরব হয় সাধারণ মানুষ। তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধাচারণ করে হ্যাশট্যাগ চালু করে।

দেশটিতে স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভ্যুত্থানের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ইয়াঙ্গনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় এবং অং সাং সুচির পক্ষে স্লোগান দেয়। তারা লাল রঙের রিবন পরে ছিল। লাল রং দেশটির নেত্রী অং সান সুচির দলের রং।

শুক্রবার বিকেলে কয়েকশ’ ছাত্র-শিক্ষক জড়ো হয় দাগন ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে। তারা তিন আঙ্গুলের স্যালুট প্রদর্শন করছিল- এই স্যালুট এই এলাকার বিক্ষোভকারীরা রপ্ত করেছে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে মিন সিথু নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রজন্মকে এই ধরনের সেনাবাহিনীর একনায়কতন্ত্রের কারণে ভোগান্তির শিকার হতে দিতে পারি না।’

গত সোমবার (ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান হলে সুচি এবং অন্য নেতাদের আটক করা হয়। সোমবারের পর থেকে থেকে সুচি গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। পয়লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থান বহু মানুষ ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার দেখেছে। ফেসবুকে মিয়ানমারে তথ্য ও সংবাদের প্রাথমিক উৎস। এর তিন দিন পর ইন্টারনেট সেবাদাতাদের নির্দেশ দেয়া হয় এই সামাজিক মাধ্যমটিকে ব্লক করার।

ওই নিষেধাজ্ঞার পর, হাজার হাজার ব্যবহারকারী টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে সরব হয়। তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধাচারণ করে হ্যাশট্যাগ চালু করে। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটা নাগাদ আর কেউ এ দুটি প্লাটফর্মেও ঢুকতে পারছিল না।

এ নিয়ে অভ্যুত্থানের নেতাদের কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল না। কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, মন্ত্রনালয়ের একটি দলিল তারা দেখেছে, যেখানে বলা হয়েছে এই সামাজিক মাধ্যমদুটোকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছড়িয়ে দিতে’।

এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে, নরওয়েভিত্তিক টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিনর।

টুইটারের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মানুষের কথা বলার অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ফেসবুক মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ‘মানুষের সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে, যাতে তারা পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারে।’ ইনস্টাগ্রাম ফেসবুকেরই অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান।

বিবিসির বার্মিজ বিভাগের নেইয়েন চ্যান বলছেন, সেনা অভ্যুত্থানের প্রথম ধাক্কাটা মানুষের কাছ দুর্বিসহ ছিল। কিন্তু মানুষ এখন বুঝতে পারছে, কী হয়েছে এবং তারা এখন একটা বিকল্প উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। সেনা কর্তৃপক্ষ যতটা শক্ত করে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে ঠিক সেভাবেই তাদের বিরুদ্ধে আরও মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে।

বিবিসির ওই সংবাদদাতা বলছেন, এখানকার মানুষ খুব ভালোভাবেই জানে যে সেনাবাহিনী ধরপাকড় চালাতে পারে। তাই এখনো পর্যন্ত রাস্তায় নেমে বড় ধরনের বিক্ষোভ কেউ করেনি। কিন্তু তাদের কথা যাতে মানুষ জানতে পারে সেই কারণে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে।

যে শিক্ষক শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন তিনি বলছেন, এটা তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য করেছেন। ‘আমার ১৮ মাসের একটা সন্তান আছে। আমি সেনাশাসন এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আমি প্রার্থনা করি আমার ছেলে একদম ভিন্ন রকম এক বার্মা কে বেড়ে উঠুক। এখন আমি নিশ্চিত না ভবিষ্যৎ কেমন হবে’ বলছিলেন তিনি।

মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ হয়েছে। যেটা সেনা অভ্যুত্থানের পর বড় আকারে হওয়া রাস্তার কোন বিক্ষোভ। কিছু শহর যেমন ইয়াগুনেরর বাসিন্দারা বাড়িতে রাতের বেলা বিক্ষোভে শামিল হয়েছে, তারা থালা-বাসন বাজিয়ে এবং বিপ্লবী গান গেয়ে তারা এটা করেছে।