রুপসা প্রতিনিধি ,খুলনা :
রূপসার সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ এর অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে আর্থিক দূর্নীতিসহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষকবৃন্দ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। অধ্যক্ষের এ অভিযোগগুলো নিয়ে কলেজের অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিমধ্যে হৈচৈ পড়ে গেছে। জানা যায়, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ২ মে বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কলেজটি জাতীয় করনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অবশেষে ২০১৩ সালের ১৪ মে কলেজটি জাতীয় করন করা হয়। কলেজে বর্তমানে ৫ সহস্রাধীক ছাত্র ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে। সব মিলে মনোরম পরিবেশে কলেজের কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন প্রফেসর মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিব। যোগদানের পরেই অদ্যবধি তিনি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করেননি এবং কলেজে জাতীয় দিবসগুলো ইতিমধ্যে পালন করা বন্ধ হয়ে গেছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তিনি অত্র কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সূত্রমতে ২৮/০৩/২০২১ তারিখে সরকারি বাজেটের ২ লক্ষ ৩ হাজার ৩ শত ১০ টাকা তিনি উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিস থেকে এককালিন উত্তোলন করে ০১/০৪/২০২১ তারিখে রূপালী ব্যাংক রাজাপুর শাখায় নিজ নামে একটি একাউন্ট খুলে (যার নং- ২৯৫৬০১০০১২৫৭৮) ১ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা জমা রাখেন এবং পরবর্তীতে ১০/০৬/২০২১ তারিখ ও ০৯/০১/২০২২ তারিখ সরকারি বাজেটের ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৪ শত ৮৫ টাকা ও ৬ লক্ষ ২২ হাজার ২ শত ৭৮ টাকা উত্তোলন করে এর থেকে ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩ শত ৮০ টাকা পুনরায় উক্ত একাউন্টে জমা রাখেন। যা উক্ত ব্যাংকের স্টেস্টমেন্টে প্রতিয়মান আছে। কলেজের একাউন্টে টাকা না রেখে নিজ একাউন্টে টাকা রেখে তা ইচ্ছামত উত্তোলন পূর্বক তিনি কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের পর তদন্ত টিম আগমনের খবর শুনে তিনি ১০/০৪/২০২২ তারিখে সর্বশেষ ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৮ শত ২০ টাকা উক্ত হিসাব থেকে তুলে নেন যা ব্যাংক স্টেস্টমেন্টে প্রমানিত। এছাড়া শিক্ষার্থীর ভর্তির ফরম বিক্রি, সার্টিফিকেট, টেষ্টমনিয়াল এর বিপরীতে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে বেআইনি ভাবে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ এবং সরকারি ভাবে বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তিনি বেআইনিভাবে ছাত্র হোস্টেল ও ছাত্রী হোস্টেলের প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিদ্যুৎ বিল আদায় করেছেন। অপরদিকে বিভিন্ন শিক্ষকদের নামে ভ্রমন বিল উত্তোলন করে অত্র টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে অসদ আচরন করতেও তিনি দিধাবোধ করেননি। তিনি ১০/০৬/২০২১ তারিখে শারমিন আক্তার জ্যোতি নামে অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্রীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অনৈতিক আচরন এবং অশালিন মন্তব্য করায় উক্ত কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে উক্ত ছাত্রী বাদী হয়ে রূপসা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং কলেজের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফুসে উঠেছে। একাধিক অভিযোগের বিষয় সম্পর্কে প্রফেসর মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়গুলির সত্যতা স্বীকার করেন এবং উক্ত বিষয়গলো ভুল হয়েছে বলে জানান। তিনি সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যেও অনুরোধ করেন। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দপ্তরের মহা পরিচালকের নির্দেশে তদন্ত টিম গত ১৯/০৪/২০২২ তারিখে কলেজে তদন্তে আসেন এবং ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত টিমের প্রধান প্রফেসর শেখ হারুনর রশিদ এ প্রতিনিধিকে জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অতি সত্ত্বর তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে।